(প্রিয়.কম)- একের পর এক কল্পকাহিনীভিত্তিক সিনেমা দেখে আমাদের ধারণা হয়ে গেছে যে, ভিনগ্রহের প্রাণীরা অবশ্যই হবে ভীষণ মারকুটে। হৈহৈ করে তারা মানুষ মারতে ছুটবে, অথবা পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলবে। এলিয়েন এসে পৃথিবী দখল করে ফেলার এই দুশ্চিন্তা কি আসলেই অমূলক? নাকি এর পেছনে আছে কোনো যুক্তি? কি কারনে পৃথিবী দখল করতে আসবে এলিয়েনরা?
এতো এতো নক্ষত্র, তার আশেপাশে কত হাজার হাজার গ্রহ। সব ফেলে পৃথিবীতেই কেন হামলা করবে তারা? এমন তো নয় যে পৃথিবীতে আসার পথটা খুব মনোরম, স্পেসশিপের জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে আসা যাবে। বিভিন্ন সিনেমা থেকে দুইটি যুক্তি পাওয়া যায়। এক হলো, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ। আরেকটি কারণ হলো, তারা পৃথিবীতে নিজেদের বংশের ধারা ছড়িয়ে দিতে চায়। আসলে কিন্তু এই দুটি যুক্তির একটিও খাটে না।
পৃথিবীর থেকে কি ধরণের প্রাকৃতিক সম্পদ চাইতে পারে এলিয়েনরা? ধরে নেই তারা শিল্পকারখানায় ব্যবহার করার মত কাঁচামাল খুঁজছে। কিন্তু অন্যান্য গ্রহে এমন কি নেই যা পৃথিবীতে আছে? ধাতু-অধাতু সবই মোটামুটি অন্যান্য গ্রহে পাওয়া যায়, তার জন্য কয়েক আলোকবর্ষ পাড়ি দেবার দরকার নেই। ব্যতিক্রম হলো পানি, অন্তত আমরা সেটাই জানি। অথচ এই মহাবিশ্বে পানিও কিন্তু আছে অনেক জায়গাতেই। বৃহস্পতির কিছু চাঁদেই আছে অনেক পানি। সেখান থেকেপানি নিতে গেলে তেমন কোনো হাঙ্গামা করতে হবে না, কারো সাথে যুদ্ধও করতে হবে না। অন্য গ্রহে পাড়ি দেবার মতো প্রযুক্তি যাদের আছে, জমাট বাঁধা পানি আহরণের প্রযুক্তিও তাদের থাকার কথা।
তারা কি চাষবাসের জন্য আবাদি জমি খুঁজতে আসবে পৃথিবীতে? কিন্তু তার জন্যেও আসলে মহাকাশ পাড়ি দেবার প্রয়োজন পড়ে না। তারা নিজেদের সৌরজগতেই এমন মাটি খুজে নিতে পারে।
এই গ্রহে এলিয়েন বংশবিস্তারের ধারণাটা আরও বেশি অবাস্তব।পৃথিবীতেই এক প্রজাতির প্রাণীর সাথে আরেক প্রজাতির শংকর করাটা ভয়াবহ ঝামেলার ব্যাপার। আর অন্য গ্রহ থেকে এসে মানুষের সাথে প্রজননের ব্যাপারটা তো আরও দুরের কথা।
অনেকে আরও উচ্চমাত্রার চিন্তাভাবনা করেন। তারা বলেন, মানুষ যেভাবে পৃথিবীকে দূষিত করে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্যই আসবে এলিয়েনরা। প্রথম কথা হলো, তারা জানবে কিভাবে যে আমাদের পৃথিবী হুমকির মুখে আছে? আর জানলেই বা তাদের কি এমন দরকার পড়েছে গায়ে পড়ে আমাদের পৃথিবীর উপকার করতে আসবে? পৃথিবীর জীবজগতের প্রতি তাদের যদি এতই দরদ থাকতো, তবে তারা ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ডায়নোসরদের বিলুপ্তি রোধ করে ফেলত। কিন্তু তা হয়নি।
পৃথিবীর যদি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু থেকেই থাকে তবে তা হবে আমাদের সংস্কৃতি এবং বাস্তসংস্থান। আর এসব জানার জন্য আসলে এতো দূর দুরান্তের পথ পাড়ি দিতে হবে না, কোনোভাবে আমাদের টিভির সিগন্যাল ধরতে পারলেই হবে। সুতরাং সিনেমায় যা-ই দেখুন না কেন, খুব শীঘ্রই এলিয়েন এসে আপনার-আমার পৃথিবী দখল করে নিচ্ছে না, নিশ্চিন্ত থাকুন।