নভোচারীর ঘুমবৃত্তান্ত

Author Topic: নভোচারীর ঘুমবৃত্তান্ত  (Read 572 times)

Offline mahmud_eee

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 591
  • Assistant Professor, EEE
    • View Profile
ঘুম মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের ওপর নির্ভর করে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা।আর পরিপূর্ণ ঘুমের জন্য বিছানা ও আশপাশের পরিচিত পরিবেশের ভূমিকাও অনেক। কিন্তু ঘুমানোর জায়গাটি যদি হয় ভরহীন মহাশূন্য, তবে কি ভালো ঘুম সম্ভব?
মহাশূন্যে অবস্থানকালে নভোচারীদের ঘুমে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। পরিণামে তাঁদের জীবনের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একদল গবেষক সম্প্রতি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গবেষকেরা ৮০টি স্পেস শাটলের অভিযানে অংশগ্রহণকারী ৬৪ জন মহাকাশচারী এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) অবস্থানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ২১ জনের ঘুমের অবস্থা ও ধরন বিশ্লেষণ করেন। মহাশূন্য অভিযানের আগে, মহাশূন্যে থাকার সময় ও অভিযান থেকে ফেরার পরবর্তী সময়—এই তিন অবস্থায়ই মহাকাশচারীদের ঘুমের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাঁদের কবজিতে অ্যাক্টিগ্রাফ নামক একটি যন্ত্র সংযুক্ত করা হয়, যা মানুষের ঘুম ও জাগরণের তথ্য সংরক্ষণ করে। ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক লরা বার্জার। আর গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট নিউরোলজি।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) নভোচারীরা মহাশূন্যে অবস্থানকালে প্রতিদিন সাড়ে আট ঘণ্টা করে ঘুমানোর সময় পান। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, স্পেস শাটলে তাঁদের ঘুম হয় গড়ে ছয় ঘণ্টারও কম। আর আইএসএসের ক্ষেত্রে এটি গড়ে ছয় ঘণ্টার একটু বেশি। চার ভাগের তিন ভাগ মহাকাশচারীই ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে তাঁদের কর্মদক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিষয়টি অবশ্যই মহাকাশ গবেষকদের উদ্বেগের কারণ।
লরা বার্জার বলেন, ঘুম কম হলে কাজের ওপর অবশ্যই প্রভাব পড়ে। তাই মহাশূন্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এবং মহাশূন্যে অবস্থানকালে মহাকাশচারীরা যেন যথেষ্ট ঘুমাতে পারেন, এটি নিশ্চিত করা জরুরি। জরুরি পরিস্থিতিতে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে মহাকাশচারীদের আকস্মিক জেগে উঠতে হয়। ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত মহাকাশচারীরা এভাবে জেগে উঠলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারেন। আর মার্কিন সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশিকায় উল্লেখ আছে, জরুরি অবস্থায় কাজ করতে হয় এমন পেশার মানুষের ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। তাই মহাকাশযানে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা ভেবে দেখা দরকার।
মহাশূন্যে মানুষের ঘুম না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে, এর একটি হলো পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থানকারী মহাকাশযানে সময়ের হিসাবনিকাশ পাল্টে যায়। সেখানে প্রতি ৯০ মিনিট পর পর সূর্যে ওঠে ও অস্ত যায়। গবেষণায় জানা যায়, ১৯৭০-এর দশকে অ্যাপোলা অভিযানে মহাকাশচারীরা তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য আলো, শব্দ ও মহাকাশচারীদের পোশাকের শীতলীকরণ ব্যবস্থাকে দায়ী করতেন। পরবর্তীকালে আইএসএসে মহাকাশচারীদের ঘুমের জন্য শব্দহীন ও আলোমুক্ত বিশেষ স্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু তাতেও সেখানকার মহাকাশচারীদের ঘুম স্বাভাবিক করা যায়নি।
মহাকাশ পরিভ্রমণকারীদের অনিদ্রা সমস্যা শুরু হয় তাঁদের অভিযান শুরু হওয়ার আগে থেকেই। অভিযানে যাওয়ার তিন মাস আগে প্রশিক্ষণ চলাকালে মহাকাশচারীদের ঘুম হয় গড়ে সাড়ে ছয় ঘণ্টারও কম, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষের ঘুমের চেয়ে আধা ঘণ্টা কম। তবে অভিযান শেষ হওয়ার পর অর্ধেকের বেশি মহকাশচারী শিশুর মতো ঘুমান। গবেষকেরা দাবি করেছেন, মহাকাশচারীদের ঘুমের ব্যাঘাত দূর করে অভিযানকালে তাঁদের সুনিদ্রা ও কর্মদক্ষতা নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন। টেলিগ্রাফ।
Md. Mahmudur Rahman
Assistant Professor, EEE
FE, DIU