বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশের তালিকায় ডেনমার্কসহ স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলো নিয়মিত শীর্ষে থাকে। সুখের মাত্রা নির্ণয়ে বিভিন্ন প্রভাবক বিবেচনায় নেওয়া হয়। গবেষকেরা বলছেন, এসব প্রভাবকের মধ্যে মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যও বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হতে পারে।
নতুন গবেষণায় শতাধিক দেশের মানুষের জিনগত কাঠামোর গড়পড়তা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেনমার্কের মানুষের জিনগত কাঠামোর বিষয়টিও তুলনা করা হয়। গবেষকেরা এই তুলনামূলক পরিমাপকে বলছেন জিনগত দূরত্ব। তাঁরা দেখতে পান, ডেনমার্কের মানুষের চেয়ে অন্য কোনো দেশবাসীর জিনগত দূরত্ব যত বেশি, তাদের সুখে থাকার মাত্রাও তত কম হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট গবেষক ও যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইউজেনিও প্রোটো বলেন, সুখের জন্য মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও মোট দেশজ আয় (জিডিপি) ও সাংস্কৃতিক ব্যবধানের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অধ্যাপক প্রোটো ও তাঁর সহকর্মী অ্যান্ড্রু অসওয়াল্ড ১৩১টি দেশের মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোল, ওয়ার্ল্ড ভ্যালু সার্ভে ও ইউরোপিয়ান কোয়ালিটি অব লাই সার্ভে প্রভৃতি জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেন। ডেনমার্কের কাছাকাছি দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন সুখী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে নেয়। কারণ, এসব দেশের মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য ডেনমার্কের বাসিন্দাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিলে যায়। আর সুখী দেশগুলোর তালিকায় নিচের দিকে অবস্থানকারী দেশগুলোর (যেমন: ঘানা ও মাদাগাস্কার) মানুষের সঙ্গে ডেনমার্কের মানুষের জিনগত পার্থক্য সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
মানুষের সুখী অবস্থা ও ভালো থাকার জন্য সেরোটোনিন নামের একটি জৈবরাসায়নিক পদার্থের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি বিশেষ জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সেরোটোনিনের ক্রমবিকাশ নিয়ন্ত্রিত হয়। গবেষকেরা এ-সংক্রান্ত জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, বিশেষ ওই জিনটির বিবর্তিত ও সীমিত উপস্থিতির জন্য মানুষের সুখের মাত্রা কম হতে পারে। তবে সার্বিক গবেষণাটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দাদের মধ্যে ওই বিশেষ জিনের সীমিত উপস্থিতির শতকরা হার সবচেয়ে কম।
অবশেষে গবেষকেরা জিনতত্ত্ব ও সুখের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয় কি না, যাচাই করে দেখার চেষ্টা করেন। তাঁরা আমেরিকানদের ভালো থাকার বিষয়টি নিয়ে জরিপ চালান এবং একই বিষয়ে তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের সুখের অবস্থার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে সুখী আমেরিকান নাগরিকদের পূর্বপুরুষেরা তৎকালীন সবচেয়ে সুখী কোনো দেশ থেকেই অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত হোপ কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড মেয়ার্স, যিনি গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত নন, বলেন, মানুষের সুখের নেপথ্যে ঘুম, শরীরচর্চা, আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তিজীবনে নানা সম্পর্কের গুণগত মানের বিষয়গুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তবে জিনের ভূমিকাটিও নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জিনগুলো অনেক সময় কোলেস্টেরলের মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আর শারীরিক ব্যায়াম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেও রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে শারীরিক সুস্থতা অর্জন করতে হয়। কাজেই সুখী হওয়ার নেপথ্যে এসব প্রভাবকের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকাটা অবশ্যই সম্ভব হতে পারে। সূত্র: লাইভসায়েন্স