কোনো কোনো ঘটনা আমাদের এত বেশি নাড়া দেয় যে সেটি অন্যকে তাৎক্ষণিকভাবে না বলে পারা যায় না। অথবা সেই ঘটনাটি কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এতটাই মানহানিকর যে সেটি সহজে বিশ্বাস হয় না। তাই ব্যাপারটা আসলে গুজব না সত্যি, তা যাচাইয়ের জন্য হলেও অন্যকে বলতে হয়।
গুজব এভাবেই ছড়ায়, একজনের কাছ থেকে আরেকজন হয়ে হাজারো মানুষের কাছে। কিন্তু শক্তিশালী একটি গুজবের বৈশিষ্ট্য কী কী? যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখতে পান, মানুষ গুজব ছড়াতে পছন্দ করে। চেনা মানুষ বা তারকা এবং বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে গুজব বা অদ্ভুত ধরনের কথাবার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সহজাত প্রবণতা মানুষের মধ্যে রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো ‘রসাল’ ঘটনা হলে তো কথাই নেই, দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে সেটি।
নিজের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মানুষ কখনো কখনো বেশ স্বার্থপর ভূমিকা নেয় এবং নির্দিষ্ট গুজব ছড়িয়ে দেয়। এসব গুজব অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়ায়, বিশেষ করে ছোটখাটো কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে। কিন্তু মানুষ কেন গুজব ছড়ানোর প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না, সেটিই গবেষকেরা অনুসন্ধান করছেন। যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী বো ইয়াও বলেন, গুজব ছড়ানোর প্রবণতা মানুষ নিজের ভেতর থেকেই পায়। এটা বিস্ময়কর কোনো ব্যাপার নয়। পরিচিত লোকজন বা মজার কোনো ঘটনা নিয়ে গল্পগুজব করাটা মানুষের স্বাভাবিক আচরণের অংশ। তবে চেনা কাউকে নিয়ে আকর্ষণীয় কোনো ব্যাপার, সেটা সুখবর হতে পারে আবার কলঙ্কজনকও হতে পারে, সব সময়ই বাড়তি মনোযোগ কাড়ে।
গুজবের অনিবার্যতা বা দুর্দমনীয়তার কারণ খুঁজতে গিয়ে ইয়াও ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা কয়েকটি কাল্পনিক কাহিনি তৈরি করেন। এসব কাহিনির কয়েকটি ছিল যুক্তরাজ্যের তারকা ফুটবলার ডেভিড বেকহাম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিকে নিয়ে। এসব কাহিনিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তারকাজগতের বাইরের লোক বা অখ্যাত ব্যক্তিদেরও অন্যান্য চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কয়েকটি কাহিনিতে বেশ মজার ঘটনার উল্লেখ ছিল, যেমন তারকা ব্যক্তিটি মাদকসহ ধরা পড়েছেন অথবা জনসমক্ষে মারামারি করেছেন। অন্যান্য কাহিনির চরিত্রগুলোকে বিরক্তিকর ও অতি সাধারণ কাজে ব্যস্ত দেখানো হয়, যেমন: মুদি দোকানে গিয়ে কেনাকাটা। উদাহরণ হিসেবে একটি কাহিনির কথা বলা যায়, যাতে প্রেসিডেন্ট ওবামা ফ্রান্সে পারিবারিক ভ্রমণে যান। এতে তাঁদের বাস্তিল দুর্গ পরিদর্শনের বর্ণনা অথবা ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে খাওয়াদাওয়ার বিবরণ থাকে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকেরা এসব কাহিনিতে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন করেন। এতে দেখা যায়, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনযাপন নিয়ে অতি সাধারণ কোনো ঘটনাও ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা কোনো সাধারণ মানুষের জীবনের অসাধারণ ঘটনার চেয়ে বেশি পছন্দ করেন। আর সেই বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনযাপনের কাহিনিটি অন্যকে বলতেও মানুষ বেশি উৎসাহ বোধ করে।
এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, যে কাহিনির মধ্য দিয়ে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টে যেতে পারে, সেটি গুজব হিসেবে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। বিখ্যাত ব্যক্তি ছাড়াও মানুষ নিজেদের বন্ধুবান্ধব সম্পর্কে মজা করেও অনেক গুজব ছড়ায়। লাইভসায়েন্স