জুলুম অমার্জনীয় অপরাধ

Author Topic: জুলুম অমার্জনীয় অপরাধ  (Read 1268 times)

Offline Lazminur Alam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 337
  • Test
    • View Profile
জুলুম অমার্জনীয় অপরাধ
« on: September 03, 2014, 03:38:02 PM »
সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ পাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হয়নি তার। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে।
যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ পাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন- সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে জুলম বা অন্যায়। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য করে বলছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলম হারাম করে নিয়েছি ও এ বিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অন্যের ওপর জুলম করো না।
আজকের সমাজজীবনে একেবারে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলম করা কিংবা শাসকের পক্ষ থেকে দেশের জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধভাবে শাসনক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহতা আল্লাহ পাকের কাছে অমার্জনীয় অপরাধ। এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা জুলম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মুসলিম)
 তিনি অন্যায় থেকে এভাবে বিরত থাকার পাশাপাশি মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন আমাদের। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মজলুমের বদদুআ থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফের হয়। কারণ তার দুআ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।

পৃথিবীতে আজ প্রতিনিয়ত কতো কতো জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত। কতো অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করেন অথচ এর প্রতিফলন তাৎক্ষণিক ঘটছে না। অশ্রু শুকিয়ে আশার প্রদীপ নিভে যায় অথচ জালেমের জুলম অব্যাহত থেকে যায়। এর রহস্য কী? কেন মহান স্রষ্টার এমন নিরবতা?
উম্মতের এমন ব্যথাতুর কৌতূহলের জবাব দিয়েই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, আল্লাহ পাক জালিমকে ছাড় দিতে থাকেন- তারপর যখন ধরেন তখন আর তাকে কোনো সুযোগ দেন না। (বুখারী)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ হাদীসের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনে বেশ কিছু আয়াতও রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, জালেমরা যা করছে সে সম্পর্কে তোমরা আল্লাহকে উদাসীন ভেবো না, তিনি তাদের ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যেদিন চোখগুলো সব আতঙ্কে বড় বড় হয়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীম-৪৩) অন্য আয়াতে তিনি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, এমনই ছিল তোমার রবের ধরপাকড়-যখন তিনি ধরেছিলেন ওই জালেম বসতিগুলোকে- নিশ্চয়ই তার ধরা অনেক কঠিন যন্ত্রণাময়। (সূরা হুদ-১০২) পবিত্র কুরআনে জালেম বা অন্যায়কারীর ওপর আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির বর্ণনা সম্বলিত অনেক আয়াত রয়েছে।

কারো ওপর যে কোনো ধরনের অন্যায়- এর পেছনে যে ধরনের স্বার্থই থাকুক- চাই তা সামাজিক, রাজনৈতিক বা ইসলামের নামে হলেও তা মহান শক্তিমান আল্লাহ পাকের কাছে অন্যায় এবং অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। অন্যের ওপর অন্যায় কিংবা জুলম এতোই নিন্দনীয় যে স্বয়ং জালেমও তার জন্য বিষয়টিকে মেনে নিতে পারে না। একজন ঘোরতর জালেমও অন্যের কাছে নিজের ক্ষেত্রে ন্যায়ের কামনা করে থাকে।

আল্লাহ পাকের কিছু অলঙ্ঘনীয় বিধানসমূহের একটি অন্যতম বিধান হলো-তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফেরকেও সাহায্য করেন। তবুও তিনি জালেমকে কোনো ছাড় দেন না। জুলুমের শাস্তি এতো ভয়াবহ ও দ্রুত যে দুনিয়া থেকেই এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিণতি কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং এক আল্লাহ পাকই জানেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) এক হাদীসে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোন জালেম শাসক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাবে না রোজ হাশরের মাঠে।
 
তাই ক্ষমতার মসনদে সমাসীন ব্যক্তিবর্গ অস্ত্র কিংবা শক্তিবলে প্রজা অথবা জনসাধারণের ওপর যে কোনো অন্যায় বা অবৈধ কার্যকলাপ চাপিয়ে দিয়ে সমর্থকদের ক্ষণিকের হাততালি পেতে পারেন, কিন্তু চিরস্থায়ী পরকালের সূচনায় কাল কিয়ামতের মাঠে তারা বঞ্চিত হবেন সব ধরনের দয়া ও করুণা থেকে। একটি ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি ছাগলকে শিং দিয়ে সামান্য আঘাত করে থাকে- পরম শক্তিমান সেদিন দু’টি ছাগলকেই জীবিত করে জুলুমের শিকার নির্বাক প্রাণীকেও সুযোগ করে দেবেন শিংধারী ছাগলকে আঘাত করে তার প্রতিশোধ নিতে। অবলা প্রাণীর বেলায় যদি এই হয় দেনা-পাওনার হিসাব, তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ক্ষেত্রে জালেম-মজলুমের হিসাব নিকাশ কতোটা নিখুঁত ও ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়।

আল্লাহ পাকের সাহায্য মজলুমের সঙ্গে, তাঁর মদদ অতি সন্নিকটে। যুগ যুগান্তরে অসহায় নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর জন্য এ অভয় বাণীই সবচেয়ে বড় সান্তনা ও বেঁচে থাকার প্রেরণা।
MD.LAZMINUR ALAM
|| BA (Hons) in English || || MBA in Marketing ||

Senior Student Counselor
Daffodil International University
Cell: 01713493051
E-mail: lazminur@daffodilvarsity.edu.bd
            lazminurat@yahoo.com
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd