Success Consciousness > Quotations

There are many ways to honor

(1/1)

khairulsagir:
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ব্যারোফোর্ড প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। তাঁর সেই চিঠি বিবিসি প্রকাশ করার পর থেকে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। চিঠিতে প্রধান শিক্ষক কেবল লিখিত পরীক্ষাই যে জীবনের সব নয়, সে কথাটি তাঁর শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি যা লিখেছেন, তার ভাবার্থ হলো—

প্রিয় চার্লি ওয়েন,
‘আনন্দের সঙ্গে আমি তোমার পরীক্ষার ফলাফল এর সঙ্গে পাঠাচ্ছি। তোমাকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত গর্বিত, কারণ এই কৌশলী সপ্তাহে তুমি তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে অনেক পরিশ্রম করেছ।
‘কিন্তু আমরা এও জানি, এই পরীক্ষাগুলো তোমাদের বিশেষত্ব বা এককত্বকে কখনো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারে না। এগুলো যারা তৈরি করেছে এবং মূল্যায়ন করে তোমাকে নম্বর দিয়েছে, তারা তোমাদের প্রত্যেককে চেনে না, যেমনটি তোমাদের শিক্ষকেরা চেনেন বা তোমাদের পরিবার জানে। তারা জানে না যে তোমাদের মধ্যে অনেকেই দুটো ভাষা জানো। তুমি যে একটা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারো, পারিবারিক অনুষ্ঠানে গান গাও কিংবা চমৎকার ছবি আঁকতে পারো, তার খবর তারা রাখেই না। তারা তো জানে না, তোমার হাসি কেমন করে একটি দিনকে রাঙিয়ে তুলতে পারে, খেলার মাঠে তোমার বন্ধুরা তোমার জন্য কেন অপেক্ষার প্রহর গোনে। তোমার কবিতা, গান লেখার খবর যেমন তারা রাখে না, তেমনি স্কুল ছুটির পর তুমি যে তোমার ছোট ভাই বা বোনকে পরম মমতায় আগলে রাখো, সেটাও কিন্তু তারা জানে না। ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার ভাবনা, পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর দেশ ঘুরে বেড়ানোর তোমার অভিজ্ঞতা—এগুলোও কী তারা জানে? জানে না। তুমি যে চমৎকার গল্প করতে পারো, নিকটজনের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসো—এগুলোর খবরও তারা পরোয়া করে না। কাজে তারা জানে না যে তুমি একজন বিশ্বস্ত, চিন্তাশীল এবং প্রতিদিনই তুমি ক্রমাগত ভালো করার চেষ্টা করছ। পরীক্ষার নম্বরগুলো তোমাকে কিছু বিষয় জানাবে বটে, তবে তা কখনো সবকিছু নয়।
‘কাজেই তোমার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গর্ব করো, সেটিকে উপভোগ করো। কিন্তু মনে রাখবে, জীবনে চৌকস হওয়ার অনেক উপায় আছে।’
চিঠিটি আমি যতবারই পড়ি, আমার চোখের সামনে আমার বন্ধুর মুখ ভেসে ওঠে। তার মেয়েটি এবার সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। প্রতিটি পরীক্ষার শেষে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্কুল তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেবে যদি না সে পরীক্ষায় আরও ভালো করে। মেয়েটি ভালো ছবি আঁকে, কয়েকটি বিষয়ে ভালোও করে। কিন্তু তার মুখস্থের ক্ষমতা কম। ফলে সে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পায় না। স্কুল তাকে নিয়ে চিন্তিত, কারণ তার জন্য জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলে স্কুলের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্কুলের র্যাঙ্কিং নিচে নেমে যাবে!
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অনেক অভিভাবকের সঙ্গে আমার নিয়ত দেখা হয়। তাঁরা ঠিক বুঝতে পারেন না, কেন তাঁদের ছেলেমেয়েকে এত তাড়াতাড়ি দু-দুটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে, যেখানে কিনা কেবল কিছু প্রশ্নের লিখিত উত্তর দিতে হয়! শিক্ষার উদ্দেশ্য কি কেবলই লিখতে পারা? আর সবারই বা কেন জিপিএ-৫ পেতে হবে?

অভিভাবকদের কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। কারণ, মনে হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার সব উদ্দেশ্য পাসের মধ্যে গিয়ে ঠেকেছে। অনেক ভালো উদ্যোগও কিন্তু ওই পাস-ফেলের মধ্যে আটকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতনতার কথাই ধরা যাক। এখন আলাদা করে প্রতিটি ক্লাসে এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যখনই কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন, দেখবেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভালো করে হাত না ধুয়েই খাবার টেবিলে বসে পড়ছে। খাওয়া শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুতে সবারই কিন্তু আগ্রহ আছে! তাদের অনেকেই কিন্তু জানে, ‘খাওয়ার আগে ভালোমতো হাত পরিষ্কার করতে হয়’। শুধু যে জানে তা নয়, বরং খবর নিলে দেখা যাবে, সেগুলো পরীক্ষার খাতায় লিখে রীতিমতো শতভাগ নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ওই নম্বর দিয়ে ওর কী লাভ হচ্ছে? ও কি আদতেই স্বাস্থ্যসচেতন হতে পারছে?
১১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘শিক্ষার্থীরা পড়ছে না কেন?’ শিরোনামের আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। সেটি পড়ে একজন আমাকে লিখেছেন, ‘আপনার এই লেখাটি পড়ে আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি এই সময়ের স্টুডেন্টদের জন্য। আমার ছোট ভাইও এবার পিএসসি পরীক্ষা দেবে, অথচ তার পাঠ্যবই পড়ার কোনো রকম আগ্রহ নেই, গল্পের বই পড়ার তো প্রশ্নই আসে না। আগে আমি যখন বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেতাম, অনেক আগ্রহের সঙ্গে নতুন বইগুলো পড়তাম, কিন্তু আমার ভাই কারণ ছাড়া বইগুলো হাতেও নেয় না। ওর স্কুল থেকে বলে দিয়েছে, ওই গাইডটা কিনতে। এরপর ওই গাইড কিনে এনে সে পরীক্ষার প্রশ্নগুলো মুখস্থ করছে। এভাবে পড়ে যদি সে এ-প্লাসও পায়, তাহলেই বা কী?’
শিক্ষার উদ্দেশ্য কিন্তু কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করা নয়; বরং শিক্ষা তখনই সফল হয়, যখন কিনা একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করতে শেখে, জানা বিষয়গুলো প্রয়োগ করতে পারে, আশপাশের প্রকৃতিকে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে, সতীর্থদের সঙ্গে যেমন আনন্দের সঙ্গে কাটাতে পারে, তেমনি বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করতে শেখে। কিছু প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে আর যাই হোক, শিক্ষার্থীর নানান দিক কোনোভাবেই জানা সম্ভব হয় না। আধুনিক শিশুশিক্ষার অন্যতম সূচনাকারী মন্টেসরি তো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার চেয়ে সার্বক্ষণিক মূল্যায়নে জোর দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা কি পরস্পরকে সহযোগিতা করছে, ক্লাসের শৃঙ্খলা মেনে চলছে—এসবও কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার ব্যাপারটা প্রভাবিত করে। আমাদের পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় এসব মূল্যায়নের সুযোগ কই? কেবল মুখস্থ ক্ষমতার দৌড় দেখা ছাড়া?

আমাদের শিক্ষাকর্তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, অনুগ্রহ করে প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রভাব এবং এগুলো আদৌ কোনো উপকার করছে কি না, তা ঠিকমতো জেনে এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিন। আমাদের ছেলেমেয়েরা জানুক, চৌকস হওয়ার অনেক উপায় আছে এবং তাদের শৈশব আনন্দময় হোক।
মুনির হাসান: যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক, প্রথম আলো এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি

Source: www.prothom-alo.com

diljeb:
I agree with the post.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version