ঠগি- ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ গোপন কালট সংগঠন। ১৩ থেকে ১৯ শতকে বাংলাসহ উত্তর ভারতে ছিল তাদের ত্রাসের রাজত্ব। কিছু হিসেব অনুযায়ী ১৭৪০ সাল থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ঠগিরা ১ মিলিয়ন এর বেশি মানুষ হত্যা করেছিল।
ঠগিরা সাধারণত দলগতভাবে ব্যবসায়ী, তীর্থযাত্রী কিংবা সৈন্যের ছদ্মবেশে ভ্রমণ করত এবং পথিমধ্যে অন্য যাত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করত ও তাদের সাথে মিশে যেত। তারপর হঠাৎ করেই কোন যাত্রাবিরতীতে ভ্রমনকারীদেরকে আক্রমণ করত তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়ার জন্য।
ঠগিরা হত্যাকান্ডের জন্য একটি হলুদ রংএর রুমাল ব্যাবহার করত যার র্দৈঘ্য ছিল মাত্র ৩০ ইঞি। রুমালটি ভাজ করে তার দুই মাথায় দুটি রুপার মুদ্রা দিযে বেধে দিত। একজনকে হত্যার জন্য তিনজন ঠগি এনগেজ থাকতো - একজন মাথা ঠেসে ধরত, একজন রুমালটি হত্যার শিকার ব্যাক্তির গলায় পেচিয়ে ধরত ও অরেকজন পা ধরে থাকত যেন নড়াচড়া করতে না পারে।
মৃতদেহ গুলোকে তারা উৎসর্গ করত হিন্দু দেবী কালীর নামে; যদিও তাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান।
ঠগিরা সাধারনত বংশপরম্পরায় এই হত্যাকান্ড ঘটাত। একজন ঠগি বালক ১৮ বছর হলে হত্যার অনুমতি পেত। তারা সাধারনত বছরের এক সময় ঘর সংসার করত এবং শরৎকালে দলগত ভাবে যাত্রা করত মানুষ শিকারের উদ্দেশ্যে।
১৮১২ সালে ব্রিটিশ সরকার ঠগিদের কথা প্রথম জানতে পারে। ঠগিদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র ছিল পশ্চিমবাংলার ’কালিঘাট’ ও বিন্ধ্যাচলের ’ভবানী মন্দির’।
সাধারনত ভিক্ষুক, সংগীতজ্ঞ, নৃত্যশিল্পী, ঝাড়ুদার, তেল বিক্রেতা, কাঠমিস্ত্রি, কামার, বিকলাঙ্গ, কুষ্ঠরোগী, গঙ্গাজলবাহক ও নারীদের তারা হত্যা করত না। এখনো ভারতের রাজস্থানে ঠগিদের বংশধরদের দেখা যায়।
ধারণা করা হয় ইংলিশ thug ওয়ার্ডটা এসেছে বাংলা ঠগি থেকে।
Gunga Din (1939) and The Deceivers (1988) ঠগিদের উপর নির্মিত ছবি।