দেশের আইসিটি খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে এনটিটিএনে 
ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) উন্নয়ন প্রকল্পে। এতে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইআইডএফসি লিমিটেড, লঙ্কা বাংলা ফাইনান্স ও জিএসপি ফাইনান্স। দেশীয় এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিবে ১ হাজার ৪ মিলিয়ন এবং বিশ্ব ব্যাংক দেবে ৫শ ৮ মিলিয়ন টাকা। আইসিটি খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়ক অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। মঙ্গলবার রাতে হোটেল ওয়েস্টিনে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ফ্যাসিলিটির (আইপিএফএফ) সঙ্গে ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড’র অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গর্ভনর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য তথ্য ও টেলিযোগাযোগের প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলেও রয়েছে বিশাল জনসম্পদ। বিশাল জনশক্তিকে তথ্য ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তিনি জানান, আমরা একটি ভিন্ন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছি। এই খাত সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে। এবি ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আইপিএফএফ সেলের তত্ত্বাবধানে আইসিটি অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য ১ হাজার ৫শ ১২ মিলিয়ন টাকা ফাইবার অ্যাট হোমকে ঋণ প্রদান করবে। অনুষ্ঠানে আারও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবুল কাশেম, বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের উর্ধ্বতন অর্থনীতি খাত বিশেষজ্ঞ একেএম আব্দুল্লাহ, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচাল মসিউর রহমান চৌধুরী, আইআইএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউল ইসলাম, ইউসিবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আলী, ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ময়নুল হক সিদ্দিকী প্রমুখ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আইসিটির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। সবার কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে এ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক সরঞ্জামের প্রয়োজন। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসব কিনতে না পারায় এগিয়ে এসেছে এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬ হাজার কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবারের অধীনে নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। দেশের প্রত্যেক জেলাকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। দ্রুতগতির তারহীন ইন্টারনেট সেবা থ্রিজিসহ টেলিকম খাতের উন্নয়নের এই ঋণ ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে বলে জানানো হয়। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে দেশে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে লাইসেন্স দেওয়া হলে প্রথম এনটিটিএন লাইসেন্স পায় ফাইবার অ্যাট হোম। দেশে বর্তমানে দুটি এনটিটিএন কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন যৌথভাবে ১৩ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোর কিলোমিটার হিসাবে (ন্যূনতম একটি ক্যাবলে ৪৮ কোর, সর্বোচ্চ ২১৬ কোর থাকে) এর বিস্তৃতি বেড়ে কয়েক লাখ কিলোমিটার হবে। প্রতি ক্যাবলে ৪৮ কোর ধরলে মূল দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার কিলোমিটারের সমান ৬ লাখ ২৪ হাজার কোর কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বর্তমানে বাংলাদেশে আছে।