বাড়ির ছাদ থেকে মস্ত খামার

Author Topic: বাড়ির ছাদ থেকে মস্ত খামার  (Read 1915 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2667
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
পড়ার পাট চুকিয়ে চাকরি তাঁরা পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাঁধাধরা নিয়মে আটকে থাকতে চাননি। স্বাধীনভাবে কিছু করতে চেয়েছেন তাঁরা। নিজেদের মতো করে দাঁড়াতে চেয়েছেন জীবিকার শক্ত ভিতের ওপর। বাড়ির ছাদে হাঁস–মুরগির একফোঁটা খামার দিয়ে শুরু। তা আজ বিস্তৃত অনেক দূর।

জাহাঙ্গীর আলমের প্রিয় বিষয় ছিল গণিত। এ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে। তিন বছরের ছোট ভাই রেজাউল করিম ২০০৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন।

পড়াশোনার পর দুই ভাই একে একে চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করলেন। বিসিএস, ব্যাংকের পরীক্ষা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা। চাকরিও পেয়ে গেলেন দুজনে। বড় জাহাঙ্গীর পেলেন বেসরকারি একটা সংস্থায়। এক বছর আগে অবশ্য চাকরিটা ছেড়েছেন। ছোট রেজাউল গাইবান্ধার তুলসীঘাটে শামসুল হক ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবু তৃপ্তিটা ঠিক আসছিল না। ধরাবাঁধা চাকরিজীবনের বাইরে দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল একটু নিজের মতো করে অন্য রকম কিছু করার। কিন্তু সেটা কী?

যেই ভাবা সেই কাজ। রেজাউল করিম পড়াশোনা শেষ করার পর যুব উন্নয়নে গবাদিপশুর খামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ভাবলেন, এবার সেই প্রশিক্ষণটাই কাজে লাগাবেন। বাড়ির জায়গাটা নেহাত কম নয় তাঁদের। এক বিঘার কাছাকাছি। সেই জমিতে শুরু হলো স্বপ্ন বোনা।

শুরুটা ২০০৬ সালে। গাইবান্ধা সদরের পূর্বপাড়ায় বাড়ির ছাদে দুই ভাই মিলে শুরু করলেন মুরগি আর গরুর লালন–পালন। প্রথমে ৪০০ মুরগি আর দুটি গরু দিয়ে শুরু। ১৪ বছর পর মুরগি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজারে। আর গরুর সংখ্যা গত বছর ছিল ৪৮টি। এখন ২৬টি। এর মধ্যে ১৩টি গরু রয়েছে রেজাউল করিমের বাড়িতেই ছোট খামারে। বাকি ১৩টি গরু গাইবান্ধা সদরের পূর্বপাড়ায় কয়েক বিঘা জমি লিজ নিয়ে রেখেছেন। মুরগির খামারও পূর্বপাড়ার পুলবন্দী এলাকায় আলাদা জমিতে। আড়াই বিঘা জমি সেখানে।

খামার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটাও বেড়েছে। দুই ভাই তাই কাজটা ভাগ করে নিয়েছেন। জাহাঙ্গীর দেখেন মুরগির খামার আর রেজাউল গরুর। তবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো দুই ভাই মিলেই আলোচনা করে নেন।

রেজাউলের খামারের গরুগুলো দুধসাদা রঙের। হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোকে আয়েশ করে বসে থাকতে দেখা গেল। কোনোটি আবার বাছুরের দিকে নজর রাখছে। যেগুলো এখনো ছোট, ঘুরে বেড়াচ্ছে জমিতে। রেজাউল জানালেন, তাঁর খামারের গরুগুলো সংকর প্রজাতির। দেশি ও বিদেশি গরুর সংকরে ফ্রিজিয়ান গরুগুলোর প্রধান খাদ্য নেপিয়ার ও পাকচং ঘাস। খামারের লিজ নেওয়া জমিতেই সেই ঘাসের চাষ করেন রেজাউল। নিজেদের জমিতে নেপিয়ার চাষ করায় অন্য খাবারের খরচা কিছুটা কম হয়। সঙ্গে ভুসি, খড়, খৈল খাবার হিসেবে দেওয়া হয়।

গরুর দুধও রেজাউলের আয়ের বড় উৎস। একটি গরু দিনে গড়ে ২০ লিটার দুধ দেয়। দুধ গাইবান্ধার নির্দিষ্ট কয়েকটি কনফেকশনারিতে নিয়মিত সরবরাহ করেন রেজাউল। পান্থ ডেইরি ফার্মের দুধ গাইবান্ধায় বেশ জনপ্রিয়।

গাইবান্ধা দুগ্ধ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রেজাউল। জানালেন, গরুর খামার থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হয়। এ ছাড়া গরু বিক্রি করেও আয় হয় তাঁর। তবে সেটা নির্ভর করে বছরে কয়টি গরু বিক্রি করবেন, তার ওপর।

২০১৮ সালে খামারটা ধাক্কা খায়। বন্যায় বাড়ি ও খামারে পানি ওঠে। ২২ টির মতো গরু সে সময় সস্তায় বিক্রি করে দিতে হয়। রেজাউল বলেন, গরুর খাবারের দাম প্রতিবছরই বাড়ে। তিন বছরে এক বস্তা গরুর খাবারের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০০ টাকা। এতে তাঁদের গরু ঠিকভাবে লালন–পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

খামারের একদিকে গরুগুলো যখন আরাম করে রোদ পোহাচ্ছে, অন্যদিক তখন মুরগির কককক ডাকে মুখর। সেগুলো দেখাশোনার জন্য চারজন লোক নিয়োজিত। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ। জাহাঙ্গীর জানান, মুরগির খামারে প্রতিনিয়ত তাঁকে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৮০০ মুরগি মারা গেছে।

জাহাঙ্গীর বলেন, মুরগির বাচ্চার দাম যখন-তখন বাড়ে। এটাও বড় একটা সমস্যা। মুরগি বিক্রির মৌসুম সাধারণত রোজার ঈদ, পূজা, শীতকাল। এ সময় মুরগির বাচ্চা কিনতে হয় ৭০ টাকায়। আবার মৌসুম না থাকলে মুরগির বাচ্চা ১০ টাকাতেও বিক্রি করা যায় না।

তবে যেকোনো চলার পথেই বাধা থাকে। সেসব কাটিয়ে পথচলাকেই জীবন মনে করেন দুই ভাই জাহাঙ্গীর ও রেজাউল। ধরাবাঁধা চাকরিজীবনের বাইরে গিয়ে নিজেদের স্বপ্নের পাখিকে তাই ডানা মেলতে দিয়েছেন তাঁরা। খামারে তাঁরা সময় কাটান আনন্দে। সে আনন্দ হয়তো কিছুটা স্বাধীনতার। কিছুটা মুক্তির।


Source: https://www.prothomalo.com/economy/article/1632912/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0