পৃথিবীর কোণায় কোণায় এখন ছড়িয়ে পড়েছে মানুষ। পরবর্তী পদক্ষেপ কী? মানুষের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথে বসতি গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসার কর্মকর্তা মহাকাশ বসতি বিশেষজ্ঞ আল গ্লোবাস মনে করেন, মানুষের পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ হচ্ছে কক্ষপথে নিজেদের বসবাসের উপযোগী আবাসস্থল তৈরি করা।
5093517b6eb554356185749747e83bf8-3.-space 61308d735349b3ad55eca2d58570ec92-2.-space 91467_1বিশেষজ্ঞ গ্লোবাস দাবি করেন, ‘বড় ধরনের দুর্যোগ এড়াতে ২১০০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর বাইরে কক্ষপথে বড় ধরনের ভাসমান আবাসস্থল গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
তিনি বিশ্বাস করেন, শিগগিরই পৃথিবীর কক্ষপথে শহর গড়ে উঠবে। আর লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যেভাবে মানুষ বেড়াতে আসে, তেমনি পৃথিবী থেকে মহাকাশের এই শহরগুলোতে মানুষ বেড়াতে আসবে।
গ্লোবাসের মতে, ‘মানুষ যদি মহাকাশে বসতি তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, আমরা তা করতে পারি। আমাদের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা ও আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে। তাই কক্ষপথে ভাসমান শহর তৈরি না করার কোনো কারণ নেই। আগামী কয়েক শতকে যদি পারমাণবিক যুদ্ধের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, তবে মহাকাশে ভাসমান শহর গড়ে না তোলাটাই হবে বিস্ময়কর।’
মহাকাশে এভাবেই তৈরি হবে বসতি। ছবি: নাসাকেমন হবে মহাকাশের সেই বাড়ি?
মহাকাশে যদি বসতি স্থাপন করা সম্ভব হয়, তবে সেখানকার ঘরবাড়ি দেখতে কেমন হবে? গবেষকেরা বলছেন, একটি কেন্দ্রীয় সিলিন্ডারের চারপাশে ঘূর্ণমান বসতি তৈরি করা যাবে। এই ঘূর্ণমান অংশটি থেকেই কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ তৈরি হবে এবং এখানকার অধিবাসীরা পৃথিবীর মতোই স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়াতে পারবে।
গ্লোবাস মনে করেন, এ ধরনের পরিবেশে শিশু সুগঠিত মাংসপেশি নিয়ে বেড়ে উঠবে। মহাকাশে দীর্ঘকাল থাকলেও পরে তারা পৃথিবীতে ভ্রমণে এলে এখানকার মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে পারবে। তবে এই বসতির কেন্দ্রীয় কাঠামোর স্থানটিতে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ থাকবে। এই বিশাল কাঠামোর বাইরের দিকে চাষাবাদ করা ও শক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। গ্লোবাসের এই ‘মহাকাশ শহর’-এর ধারণা আকর্ষণীয় শোনালেও বর্তমানে তা নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব বলেই মেনে নিচ্ছেন তিনি। এই কাঠামো তৈরির খরচ বহন করা এখন সম্ভব নয়। কিন্তু আগামী শতকে এই ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা গেলে মহাকাশে একবারে এক লাখ থেকে কয়েক লাখের বসবাস করা সম্ভব হবে।’
পৃথিবীর বাইরে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ভেসে থাকবে সেই শহর। ছবি: নাসাবাধা কোথায়?
মহাকাশে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়ে গেছে। মহাকাশে বসতি স্থাপনের আগে এই বাধাগুলো দূর করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম বাধাটি হবে মহাকাশে পৌঁছাতে রকেটের খরচ কমাতে হবে। দ্বিতীয় বাধাটি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সহজলভ্য করা। মহাকাশে তৈরি বসতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে খাবার উৎপাদন ও সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শক্তির চাহিদা মেটানোর মতো দরকারি বিষয়গুলো ওই শহরেই থাকতে হবে।
মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার জন্য ওই শহরে বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মহাকাশের এই তেজস্ক্রিয়তা বড় সমস্যা তৈরি করবে না। (স্পেস ডটকম, ডেইলি মেইল)