৩৫ পাতার একটি প্রতিবেদনে গবেষকেরা এই প্রকল্পে তৈরি অক্সিজেন, খাবার ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, মঙ্গলগ্রহে কলোনিতে অক্সিজেন ও খাবার উৎপাদনের জন্য যে উদ্ভিদ জন্মানো হবে তা যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি করবে তা নিরাপদ নয় এবং এর ফলে বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে অক্সিজেন নির্গমণ পদ্ধতি তৈরি করার দরকার হবে কিন্তু নভোযানে এ ধরনের কোনো পদ্ধতি এখনও তৈরি করা যায়নি বা ভিনগ্রহের পরিবেশে তা পরীক্ষা করে দেখাও হয়নি।
মার্স ওয়ানের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে এ রকম কলোনি গড়ে তোলা হবে।এই অভিযানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ। মঙ্গলগ্রহে টিকে থাকার জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ দরকার হবে তা সরবরাহ করা সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়বে। মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে সাত মাসেরও বেশি সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় রসদ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহে সাড়ে চারশো কোটিরও বেশি অর্থ খরচ হয়ে যাবে।
অবশ্য, এমআইটির গবেষকেদের এই আশঙ্কা অমূলক বলেই মনে করছেন মার্স ওয়ান প্রকল্পের উদ্যোক্তা ব্যাস ল্যান্সড্রপ। তাঁর দাবি, এই গবেষণার কোথাও ত্রুটি আছে। তিনি এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সব ধরনের পরামর্শ করেই তবে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যদিও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করাটাকে সমস্যা বলেই মনে করছেন তিনি।
ব্যস ল্যান্সড্রপ পপুলার সায়েন্স ম্যাগাজিনকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘মার্স ওয়ানের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক চালিয়ে রাখা।’
ল্যান্সড্রপ এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘এমআইটির গবেষকেরা অসম্পূর্ণ তথ্য ব্যবহার করেছেন। মার্স ওয়ান সভ্যতা গড়ে তোলার এ প্রকল্প নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’তিনি বলেন অক্সিজেন নির্গমণ পরীক্ষা করা না হলেও মঙ্গলে বাস করার প্রযুক্তি এখন প্রস্ত্তত।’
ল্যান্সড্রপ বলেন, ‘মঙ্গলে বাস করার জন্য প্রয়োজনীয় মূল অবকাঠামোর নকশা আরও ভালোভাবে করা এবং তা নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা দরকার। কিন্তু সেই প্রযুক্তি আমাদের কাছে আছে।’
মার্স ওয়ানের মঙ্গল মিশন নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করলেও এর পক্ষে দাঁড়ানোর লোকও এখন অনেক। ১৯৯৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল জয়ী জেরার্ড’টি হুফট সমর্থনই দিচ্ছেন ব্যাস ল্যান্ডসড্রপকে ।
পৃথিবী থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ মাইল দূরে লাল রঙের এই গ্রহটিতে সর্বোচ্চ গতির নভোযানে করে পৌঁছাতে কমপক্ষে সাত মাস সময় লাগে।
প্রসঙ্গত, এ বছরের জুন মাসে টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো প্রযোজক প্রতিষ্ঠান এন্ডেমোল মঙ্গল গ্রহের অভিযাত্রীদের নিয়ে রিয়েলিটি শো করতে রাজিও হয়েছে।
ব্যাস ল্যান্সড্রপের দাবি অনুযায়ী, মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য সবকিছুই প্রস্ত্তত। এখন শুধু মঙ্গল গ্রহে কবে মানুষের পা পড়ে সেটাই দেখার পালা।