বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস। সেই গ্যাসে রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো রাসায়নিক উপাদান। অণুজীব ব্যবহার করে এসব গ্যাসকে রূপান্তরের মাধ্যমে গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির লক্ষ্যে গবেষণা করছেন নিউজিল্যান্ডের এক দম্পতি।
অটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই প্রাণরসায়নবিদ হলেন মনিকা গার্থ ও ওয়েইন প্যাট্রিক। তাঁরা দুই বছরের একটি গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পরিবেশবান্ধব জৈবপ্রযুক্তির বাজারে উল্লেখযোগ্য অবস্থান অর্জন করার মতো পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। তাঁদের গবেষণা প্রকল্পটি ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক পথ এগিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ল্যানজাটেক গ্যাস শোষণকারী একটি অণুজীবের বিকাশ ঘটিয়েছে। সেটি নিয়েই কাজ করছেন গার্থ ও প্যাট্রিক। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো থেকে সেই অণুজীবের সাহায্যে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য থেকে বছরে শত শত কোটি মার্কিন ডলার আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গ্রিনহাউস থেকে অণুজীবের সাহায্যে যে দুটি রাসায়নিক উপাদান তৈরি হবে, তাদের নাম বিউটানোন ও টু-বিউটানল। পেট্রোলিয়াম থেকে বর্তমানে এগুলো তৈরি করা হয়। আরও টেকসই উৎস থেকে এ দুটি উপাদান পাওয়ার জন্য রাসায়নিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অনুসন্ধান করছে। ল্যানজাটেকের অণুজীবটি প্রাকৃতিক উপায়েই পাওয়া যায়। এটির ব্যবহারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে জৈব প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে একটি বিকল্প তৈরি করবেন গার্থ ও প্যাট্রিক। অণুজীবটি কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো বর্জ্য গ্যাসকে কার্যকরভাবে ইথানলে রূপান্তর করতে পারে। পাশাপাশি টু, থ্রি-বিউটানেডিওল নামের রাসায়নিক বিল্ডিং ব্লক বা যৌগও তৈরি করে ওই অণুজীব।
প্যাট্রিক বলেন, ‘আমরা নতুন নতুন উৎসেচক বা এনজাইম তৈরি করার চেষ্টা করছি, যা গ্যাসীয় যৌগ শোষণ করে তা থেকে মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান তৈরি করতে পারবে।’
নিউজিল্যান্ডের গবেষক দম্পতি সুনির্দিষ্টভাবে টু, থ্রি-বিউটানেডিওলকে বিউটানোনে রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। এই বিউটানোন হচ্ছে রং, বার্নিশ ও আঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাবার ও মোটরগাড়ির টায়ার তৈরির কাজে বিউটানোনের প্রয়োজন হয়। এসব রাসায়নিক উপাদান প্রতিবছর লাখ লাখ টন পরিমাণে উৎপাদন করা হয়। এসবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শত কোটি ডলারের বাণিজ্যও।
গার্থ বলেন, প্রকৃতিতে টু, থ্রি-বিউটানেডিওল একটি বিপাকীয় অবশেষ হিসেবে পাওয়া যায়। তাই বিকল্প উপায়ে এ দুটি রাসায়নিক উপাদান উৎপাদনের ব্যাপারটি প্রাণরসায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে যাচ্ছেন, তাতে অনুঘটকের ভূমিকা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম প্রকৃতিতে সরাসরি পাওয়া যায় না। তবে প্রকৃতিতে বিদ্যমান এনজাইমগুলোকে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত করে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বিক্রিয়া ঘটাতে পারবেন বলে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী।
গ্রিনহাউস গ্যাস থেকে মূল্যবান পণ্য উৎপাদনের মৌলিক সামর্থ্য ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন ওই গবেষক দম্পতি। তাঁদের গবেষণায় যাবতীয় সহায়তার ব্যাপারে অটাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ল্যানজাটেক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে। গার্থ ও প্যাট্রিক আশা করেন, একই গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাঁরা আরও কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের কৌশল বের করতে পারবেন। প্যাট্রিক বলেন, বনজ উপাদান ও দুগ্ধশিল্পের বর্জ্যে যে কার্বন থাকে, তাকেও গবেষণার কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এই গবেষণার একটি বড় লক্ষ্য হবে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করা।
এই গবেষণায় সাফল্য অর্জিত হলে পরবর্তী সময়ে কী হবে? বিউটানোন পাওয়ার জন্য পেট্রোলিয়ামের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে? গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা সে রকমই ভাবছেন। তবে এ ধরনের পরিবর্তনের ব্যাপারটা এখনো পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে। রাসায়নিক শিল্পের জগতে এখন বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সহায়তা করবে।
সূত্র: নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।