বিশ্বে এই প্রথম পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে চলৎশক্তিহীন কোনো ব্যক্তি চলাফেরার ক্ষমতা পেলেন। নাকের ছিদ্র ও হাঁটুর স্নায়ুকোষ মেরুদণ্ডের মধ্যে প্রতিস্থাপনের বৈপ্লবিক চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহার করে এমনটি সম্ভব করেছেন পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক।
২০১০ সালে পিঠে কয়েকবার ছুরিকাঘাতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন পোল্যান্ডে বসবাসকারী বুলগেরীয় নাগরিক ডারেক ফিডিওকা। হাঁটার ক্ষমতা হারান তিনি। তবে আবার তাঁকে দেওয়া হয়েছে এ ক্ষমতা। বর্তমানে শুধু একটি দণ্ড ধরে তিনি হাঁটতে পারছেন।
যুক্তরাজ্যের গবেষকদের সহায়তায় পোল্যান্ডের শল্যচিকিৎকদের একটি দল যৌথভাবে ডারেক ফিডিওকার চিকিৎসা করেন। গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন।
চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে গবেষকেরা বলেন, এতে মানুষের গন্ধ বুঝতে পারার ক্ষমতা প্রদানকারী বিশেষায়িত কোষ অলফ্যাক্টরি ইনিয়েশিয়েটিং সেল (ওইসি) ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো কিছুর গন্ধ বোঝার জন্য মানুষের অলফ্যাক্টরি স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে। আর এই তন্ত্রের স্নায়ুতন্তুকে ক্রমাগত পুনর্জীবন দেয় ওইসি কোষ।
গবেষকেরা বলেন, প্রথম দুটি অস্ত্রোপচারে শল্যচিকিৎসকেরা রোগীর নাকের ছিদ্রের গোড়ায় থাকা অলফ্যাক্টরি বাল্ব থেকে কোষ নেন এবং পরে ওই কোষের বৃদ্ধি ঘটান। দুই সপ্তাহ পর ওইসি কোষ মেরুদণ্ডের সুষুম্না কাণ্ডের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকেরা মাত্র এক ফোঁটা উপাদান সেখানে স্থাপন করলেও সেখানে কোষ ছিল পাঁচ লাখ। প্রায় ১০০টি ইনজেকশনের মাধ্যমে ডারেক ফিডিওকারের মেরুদণ্ডের ক্ষতের ওপরে ও নিচে ওইসি কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে ফিডিওকার হাঁটুর কাছ থেকে নেওয়া স্নায়ুকোষের পাতলা চারটি অংশ তাঁর মেরুদণ্ডের বাঁ পাশের আট মিলিমিটার (দশমিক তিন ইঞ্চি) ক্ষতে লম্বালম্বি প্রতিস্থাপন করা হয়।
গবেষকেরা বলেন, ওইসি কোষ মেরুদণ্ডে স্থাপিত স্নায়ুকোষ জোড়া দেওয়ার কাজ করে। আর স্নায়ুকোষ মধ্যবর্তী ক্ষতস্থান পূরণ করতে সেতুর মতো কাজ করে।