থাইরয়েড হরমোন যখন অতিমাত্রায়

Author Topic: থাইরয়েড হরমোন যখন অতিমাত্রায়  (Read 2236 times)

Offline faruque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 655
    • View Profile
থাইরয়েড হরমোন যখন অতিমাত্রায়



মানবদেহে অনেক গ্রন্থি থেকে হরমোন নামক এক ধরনের জৈবিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এসব হরমোন মানব দেহকে সুষুমভাবে পরিচালনা করার জন্য মানবদেহের বৃদ্ধি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, নারী-পুরুষের পার্থক্য সৃষ্টি, সন্তান জন্মদান ইত্যাদিসহ আরও বহুবিধ কর্ম সম্পাদন করে থাকে। অনেকগুলো হরমোন নিঃসৃত গ্রন্থির মধ্যে থাইরয়েড গ্রন্থি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের গলার সামনের দিকে চামড়ার নিচে এর অবস্থান। এ গ্রন্থি থেকে থাইরঙ্নি নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়।

রোগের বিবরণ : কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন নিঃসৃত হওয়াকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয়। অতিমাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে শারীরিক ও বিপাকীয় কার্যক্রম অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ফলে রোগীর অস্থিরতা, চঞ্চলতা, অসহনশীলতার মতো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। অতিমাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে হার্টের ওপর অনেক ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন- হার্ট খুব দ্রুত চলতে থাকে, হার্ট খুব জোরে সংকুচিত হয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হৃদস্পন্দন অনিয়মিত।

কারণ : অতি মাত্রায় থাইরয়েড হরমোনের প্রভাবে হৃৎপিণ্ডের মাংস পেশিতে রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। ফলে উপরোক্ত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তের তরলতা কমে।

প্রাদুর্ভাব : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ৯-১৫ ভাগ মহিলা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা একটু কম। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উভয় লিঙ্গে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

লক্ষণ : থাইরয়েড হরমোনজনিত অসুস্থতার কারণে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সর্ব শরীরে বিস্তৃত থাকে। তবে হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীর সমস্যা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এসব লক্ষণ পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে। যার ফলে রোগী হার্টের মারাত্দক অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডজনিত হৃদরোগ সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করতে পারেন। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো বুক ধড়ফড় করা, ভীতিসঞ্চার হওয়া, হৃৎপিণ্ডের গতি অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, বুকে অস্বস্তি অনুভব করা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অনিদ্রা, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা, কর্ম সম্পাদনের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসা, খুব বেশি গরম অনুভূত হওয়া ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষে অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের স্ট্রোকের মতো মারাত্দক অবস্থায় পতিত হওয়া।

রোগ নির্ণয় : রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ নির্ণয়। হার্টের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য ইসিজি, বুকের এক্সে, ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ যাচাই করে রোগ নির্ণয় এবং রোগের বিস্তৃতি পরিমাপ করা হয়।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/health/2014/11/22/45030#sthash.EtXea2Tc.dpuf