Entertainment & Discussions > Travel / Visit / Tour

নুহাশ পল্লীতে কিছুক্ষণ

(1/1)

mustafiz:
নির্মল আকাশ। প্রখর সূর্য। গাছের পাতা ভাবলেশহীন। যেন প্রার্থণায় রত। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। উপরে লিচু, জাম আর শান্তির প্রতীক জলপাই গাছ। নিচে সবুজ ঘাসের গালিচা। যেন এক টুকরো শান্তি নিকেতন। এইখানে চির নিদ্রায় হুমায়ূন আহমেদ। উত্তরাধুনিক বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক।



বলছিলাম নুহাশ পল্লীর কথা। হুমায়ূন আহমেদের সমাধির কথা। নুহাশ পল্লীর পশ্চিম পাশের দেয়াল ঘেষে সমাধি। চারদিকে কাঁচের দেয়াল। ভেতরে অনেকটা জায়গা নিয়ে শ্বেত পাথরের সমাধি। শিথানের পাশে কাঁচের উপর হুমায়ূন আহমেদের স্বাক্ষর করা ফলক। পুরো জায়গা জুড়ে সুনশান নীরবতা। জীবিত থাকতে তিনি যেমন কেতাবী জীবন যাপন করেছেন, মৃত্যুর পরও যেন তার যথার্থ শয্যা।

পল্লীর ভেতরে না এসে বাইরে থেকেও সমাধি পরিদর্শনের ব্যবস্থা আছে। অবশ্য ওই পথটি আমরা বন্ধই দেখতে পেলাম। নুহাশ পল্লীর প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা। অনেকেরই সে সামর্থ নেই। তাই প্রিয় লেখকের সমাধি দেখার এই ব্যবস্থা প্রসংশাযোগ্য। তবে ওই পথটা খোলা রাখা দরকার।

নুহাশ পল্লীতে যাওয়ার ইচ্ছে অনেক দিনের। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে কতবার যেতে চেয়েছি। চাইলেই কি আর হয়? হয় না। তাঁর মৃত্যর পর ভক্তদের ঢল নেমেছিলো এখানে। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি। হৃদয়ের গহীন গভীরে ব্যথা অনুভব করেছি। ভেবেছি, ভীড় কমুক।

পহেলা মে। সকালে রওনা হলাম। গাজীপুর চৌরাস্তা পেরিয়ে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা। এরপর কিছুটা সামনে যেতেই হোতাপাড়া বাজার। নাস্তা সারলাম নিরিবিলি হোটেলে। মূল রাস্তা থেকে পশ্চিমে এগিয়ে গেলাম প্রায় ১০ কিলো। দুপাশে গজারি বন। ফসলের মাঠ। বাড়িঘর। আমবাগান। লিচুবাগান। কলাবাগান। শহরের লোকদের আকৃষ্ট করার মতো




সবই আছে এই পথে। এই সবুজ শ্যামলিমা তাঁর যে খুব প্রিয় ছিলো। তাইতো চির নিদ্রাও প্রিয় ভূমে।

যতোই এগোচ্ছি ততই অনুভব করছি হুমায়ূন আহমেদকে। যাদু আছে তার লেখায়। পরশ পাথর নিয়ে এসেছিলেন। যার ছোঁয়ায় যাই লিখেছেন সোনা হয়ে ফলেছে। বাংলা সাহিত্যের উষর ভূমিকে দিয়েছেন উর্বরতা। কথা সাহিত্য তাঁর ছোয়ায় হয়ে উঠেছে জীবন্ত। বলে গেছেন সাধারণ মানুষের মনের কথা। অবলীলায় প্রকাশ করেছেন মধ্যবিত্তের সংকোচ গাঁথা।

রাস্তায় কোনো মাইল ফলক নেই। নেই রাস্তা চেনার জন্য তীর চিহ্ন। একটু পর পর লোকজনকে জিজ্ঞেস করে এগোতে হচ্ছে। নুহাশ পল্লীতে প্রবেশের পথটা এখনো বড় অবহেলিত। ইউনিয়ন পরিষদের উচিত ছিলো রাস্তাটাকে পাকা করা।

গজারি বন লাগোয়া নুহাশ পল্লী। বাইরে একজন বিক্রেতা কয়েকটা পেঁপে বিক্রি করছেন। একটা চায়ের দোকান আছে। বাকিটা নিরাভরণ, সাদা মাটা।



ভেতরে প্রবেশের দেখলাম বড় চত্বর। উত্তর দক্ষিণে লম্বা পুরো জায়গাটা। বা পাশে গাছের নিচে গাড়ি পার্কিং। ডান পাশে নব নির্মিত জল ফোয়ারা, সুইমিং পুল। মা-ছেলের স্ট্যাচু।

আমার চোখ খুঁজছিলো সমাধিস্থল। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বা পাশে সমাধি। সবার আগে সেখানে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করলাম। হুমায়ূন আহমেদের সমাধিস্থলে গিয়ে মনে হল এই চত্বরের প্রতিটি বালুকনায়, ঘাসে, জলে-স্থলে মিশে আছেন সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। এখানে যতটা অক্সিজেন আছে নিশ্বাস নেওয়ার সবটুকুতে মিশে আছেন ওই মানুষটি।

সমাধি থেকে কিছুটা পূবে গেলাম দাবা ঘরে। কাঠের তৈরি দাবার গুটি এখনো আছে। তবে ভেঙ্গে যাচ্ছে অনেকগুলো। ঘরটাতে প্রচুর ধুলাবালি। মনে পড়লো রবীন্দ্রনাথের গান ‘যেদিন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়...।’

পূব দিকের দেয়াল ঘেষে খেজুর গাছের বাগান। মনে পড়লো নজরুলের বাতায়ন পাশে গোবাক তরুর সারি কবিতার কথা। যেখানে বলা হয়েছে ‘বিদায় হে মোর বাতায়ন পাশে নিশিথ জাগার সাথি...।’


বৃষ্টি বিলাস শূন্য। কে আর অমন শৈল্পিক বাসনায় বৃষ্টি দেখবে? একটা ভাঙ্গা মোড়া। কয়েকটা জীর্ণ সোফা। সবকিছুতেই অযত্নের ছাপ। বৃষ্টি বিলাস ভবনের ভেতরে পোড়ো বাড়ির মতো কয়েকটা খালি খাট। লোকজন নেই।



সামনের চত্বরে জলপাই, লিচু আর কাঁঠালগাছ। কেবল ওগুলোতেই যেন এখনো প্রাণ আছে। প্রাণের স্পন্দন বিলাচ্ছে।

পশ্চিম পাশের বিশাল টিনের ঘরের দিকে গেলাম না। মনে হচ্ছে কিছুই নেই ওতে। বটতলায় বুড়ো দৈত্য যেন শীর্ণকায়। তার নিচে মৎস্যকুমারী বড় একা! কোথাও কেউ নেই।

সুইমিং পুলের পানি বড্ড বেশি নীলাভ। মনে পড়ে এখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে জলে নেমেছিলেন। এখনো জলজ্যান্ত সেই উপজীব্য। সেখানে এখন কেবলই স্মৃতির তুচ্ছ ঢেউ। আইফোনে তোলা ছবিতেও সেই ঢেউ স্পষ্ট। যদিও শোকছোঁয়া মনের ঢেউ টের পায় না কেউ।

পাশেই ব্যঙ্গের ছাতা। প্রাণহীন। শুষ্ক কেয়া বন। ঢালুতে লাগানো খেলনাগুলো অলস জং নিয়ে পড়ে আছে। লোকজন খুব একটা নেই। দুটো গরীব শিশু ড্রাগনের উপর উঠে আবার নেমে চলে গেলো।



পথ বাড়ালাম পুকুরের দিকে। ভিত্তি ফলকে লেখা ‘দিঘি লীলাবতী’। হুমায়ূন আহমদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাগুলোর একটা। এখানে তিনি অনেক সময় কাটিয়েছেন। অনেক নাটক সিনেমার শ্যুটিং করেছেন এখানে। পুকুরের উত্তর পাড়ে মাঝারি সাইজের বটগাছ। দক্ষিণে একটি নতুন একতলা ছোট ঘর। বৃষ্টি দেখার জন্য বোধহয় এরচেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। পুকুরের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ। তাতে আছে গাছের ছায়া। সেখানে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের সেতু।

ফিরে যাচ্ছি। কেউ বলছেন ছোট জায়গা, কেউ বলছেন যথেষ্ট বড়। কারো কাছে সুন্দর। কারো কাছে ততটা নয়। তবে বাংলা সাহিত্যকে যিনি দুহাত ভরে দিয়ে গেলেন; তার চলে যাওয়ায় কি এতো তাড়া ছিলো? আর কটা দিন বাঁচলে কি এমন ক্ষতি হত!

হুমায়ূন আহমেদের সার্থকতা সেখানেই, যতদিন বেঁচেছেন বীরের মতোই বেঁচেছেন। এ প্রজন্ম তাঁকে আজীবন স্মরণ করবে। হাজারো ভক্ত পাঠকের হৃদয়ে তিনি চীর ভাস্বর হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যু নেই।

 Source: bdnews24.com

irin parvin:
good post

Lazminur Alam:
Nice topic. Writer Humayun Ahmed has really did for entertainment of Bangali race.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version