প্রকৌশলী তানভীর হক প্রবাল। জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৯অক্টোবর।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ব্যাচেলর ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (পুরকৌশল) উত্তীর্ণ। রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিল্ডিং ফর ফিউচার লিঃ-এ কর্মরত। আবাসন শিল্পের এপার ওপার নিয়ে অভিজ্ঞ এ প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছেন আনিস রহমান।
প্রশ্ন: আবাসন শিল্পের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে দেখছেন?
উত্তর: দেশের আবাসন ব্যবসার অবস্থা এখন শেয়ার ব্যবসার দ চেয়েও খারাপ। লোকজন পুরাতন ফ্ল্যাট খুঁজছে। নতুন ফ্ল্যাট কেনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংযোগ না থাকলে কেন একজন লক্ষ লক্ষ, টাকা খরচ করে এমন একটি ফ্ল্যাট কিনবে। প্রয়োজনীয় সংযোগ না থাকায় এসব ফ্ল্যাট ভাড়াও হচ্ছে না। দিন দিন বাড়ছে আবাসন ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ও ট্যাক্সের পরিমাণ। এক কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনলে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১৩-১৫ লক্ষটাকা। এসব কারণে নতুন ফ্ল্যাটের প্রতি উৎসাহ হারাচ্ছে অনেকেই। এক কথায় বলতে পারি কোনমতে চালিয়ে নিচ্ছি আর কি! তা ছাড়া সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন ভীষণ নাজুক। প্রতিটি সেক্টরই সংগ্রাম করে কোনো রকমে টিকে আছে। এ রকম একটি প্র্রেক্ষাপটে হাউজিং সেক্টরে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, মন্দাভাব বিরাজ করবে সেটিই বোধহয় স্বাভাবিক।
প্রশ্ন: বিদ্যুৎ সংযোগ কি পুরো পুরি দেয়া সম্ভব হচ্ছে সরকারের তরফে?
উত্তর: দেখুন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ নিয়ে আমরা অনেক দেন-দরবার করেছি। সরকার বিদ্যুৎ সংযোগের সাথে সোলার
প্যানেলের বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সোলারের বিপক্ষে নই। তবে সবাইকে বুঝতে হবে যে, সোলার প্যানেলই বর্তমান সমস্যার কার্যকর কোনো সমাধান এনে দেবে না। উন্নত দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই সোলার সিস্টেম কার্যকর, আমাদের এখানেও সেটি কার্যকর হতে পারে। তবে একেবারে রাতারাতি নয় বরং ধীরে ধীরে এটিকে কার্যকর করতে হবে। আর গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে সিলিন্ডারের প্রচলন এটিও খুব দূরদর্শী কোনো সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি না। কারণ সিলিন্ডার একটি ভারি জিনিস, ১৫ থেকে ২০ তলা একটি বিল্ডিংয়ে এগুলো ওঠানো- নামানোও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ
অবস্থায় আমার পরামর্শ- রাজধানীতে সিলিন্ডার স্টেশন তৈরির
পাশাপাশি বিদ্যমান গ্যাসের মূল্যকে প্রয়োজনে অনেকগুণ বাড়িয়ে হলেও অব্যাহত রাখা এবং শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত। সরকারকে! ও চলমান সঙ্কট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণকরতে হবে এবং সেটি বিশাল এই সেক্টরটিকে বাঁচানোর স্বার্থেই।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের আবাসন শিল্প এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব কি বিপরিতমুখি?
উত্তর: বাংলাদেশের আবাসন শিল্পের বয়স প্রায় ৩০ বছর।রিহ্যাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। শুরুর সময় এর সদস্য ছিল ৫ থেকে ৭। ১৯৯৩ সাল থেকে শুরম্ন করে আজ পর্যন্ত্ম প্রায় ২১ বছর হয়ে গেছে। এখন এই শিল্প আর ঢাকা কেন্দ্রিক নেই। এটি এখন সারা দেশের বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে যেমন- চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, বরিশাল,পটুয়াখালী, রংপুর, বগুড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ৭ থেকে ৮ বছর আগে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে এই শিল্পের যাত্রা। বর্তমানে এ শিল্পের একটি বড় বাজার রয়েছে সিলেটে। সেখানে অনেক কাজ হচ্ছে। গত চার পাঁচ বছরে ঢাকার বাইরে ছড়িয়েছে এ শিল্প। এটি এখন বিকাশমান একটি শিল্প। পরিবেশের উপর এর প্রভাব বলতে গেলে অনেক কিছু বলা যাবে। এখন এ আইনের আওতায় রয়েছে, কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে তাকে কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। তা না হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তৎকালীন সরকার ও রিহ্যাব নেতারা একাধিক বার বসে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেন। এইবিধিমালা সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়। অনেক আলোচনার পর ২০০৮ সালে । যাকে বলা হয় এফএআর। এফএআরের একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। রাস্তার উপর নির্ভর করে আপনার ভবনের আকার ছোট বড় করতে হবে। রাস্তা ছোট হলে আপনি বড় ইমারত নির্মাণ করতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত এটিই সর্বশেষ বিধিমালা। আর এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আবাসনের
উন্নয়নে পরিবেশের জন্য হুমকি থাকবে না। এখন ভবন তৈরি করতে গেলে অনেক খোলা স্থান রাখতে হচ্ছে। ফলে ভবনে আলো বাতাস প্রবেশ করছে সহজে। তবে, ঢাকার বাইরে এফএআর অনুসরণ করতে হয় না। পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য সারা দেশে এ আইন থাকা প্রয়োজন । আজকের এই ঢাকার মতো অন্য কোনো নগর হোক তা আর কারো কাম্য নয়। ঢাকার
বাইরে যে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছা মতো ভবন নির্মাণ হচ্ছে।