রোগের নাম ডায়াবেটিক ফুট

Author Topic: রোগের নাম ডায়াবেটিক ফুট  (Read 831 times)

Offline Saqueeb

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 536
  • Test
    • View Profile



ডায়াবেটিসের একজন রোগীর পা কাটা পড়ার ঝুঁকি ডায়াবেটিস নেই—এমন সাধারণ মানুষের তুলনায় ২৫ গুণ বেশি। আর এ জন্য যে কেবল সংক্রমণ দায়ী, তা নয়; স্নায়ু দৌর্বল্যের কারণে পায়ে অনুভূতিহীনতা, ধমনিতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হওয়া, সহজে জখম ও সংক্রমণ,ক্ষত ও গঠন বিকৃতি—সবকিছু মিলিয়ে ডায়াবেটিসের রোগীর পা দুটি খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে। তাই তাঁদের পায়ের একটি আলাদা নামও আছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে, তাহলো ডায়াবেটিক ফুট।

ক্ষেত্রভেদে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিক ফুটের রোগীর কোনো ব্যথার অনুভূতি থাকে না। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে সূক্ষ্ম রক্তনালি নষ্ট হয়ে গিয়ে স্নায়ুতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয় বলে ব্যথার অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিক ফুটের ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীর ধমনি সরু হয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, এমনকি রক্ত চলাচল বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এই রোগীরা সব সময় পায়ে আঘাত বা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।
পায়ের ত্বক ফাটা, শালগড়া, অলক্ষ্যে পুড়ে যাওয়া, আঁটসাঁট জুতার জন্য পা ছিলে যাওয়া বা ধারালো কিছুতে কেটে যাওয়ার কারণে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে ও অনিয়ন্ত্রিত রক্ত শর্করার কারণে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথাহীনতার কারণে এসব রোগী চিকিৎসকের কাছে অনেক দেরিতে যান। কখনো রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়ে জীবনাশঙ্কা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

বয়স বৃদ্ধি, দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, অপুষ্টি, দারিদ্র্য, একাকিত্ব, ধূমপান, দৃষ্টিক্ষীণতা ও কিডনি রোগ থেকে থাকলে তাঁদের ডায়াবেটিক ফুটের ঝুঁকি আরও বেশি।

তাই নিয়মিত পায়ের যত্ন নিন। যেমন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও তেল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, কখনোই খালি পায়ে না হাঁটা, নখ কাটা ও জুতা নির্বাচনে সাবধানতা, কড়া বা উঠে যাওয়া চামড়া নিজে নিজে না তোলা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক থাকুন। নিয়মিত আপনার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পায়ের রক্ত চলাচল কিংবা অনুভূতি সম্পর্কে ধারণা নিন। যেকোনো সামান্য পা ফাটা, রঙের পরিবর্তন, কাটা বা পোড়া বা ছত্রাক সংক্রমণ, ঘা ইত্যাদিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে পায়ের ধমনি পরীক্ষা করে বা কালার ডপলার আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। কিছু ওষুধের মাধ্যমে ব্যাহত রক্ত চলাচলের কিছুটা উন্নতি করা যায়। তবে এনজিওগ্রাফি, বেলুন এনজিওপ্লাস্টি, স্টেন্টিং বা রিং বসানো, বাইপাস অপারেশন করে অনেক সময় পা কাটার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই সঠিক ও কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নির্বাচন ও প্রয়োগ, নিয়মিত ড্রেসিং জরুরি। উন্নত বিশ্বে হাইপারবেরিক অক্সিজেন কিংবা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে আরোগ্যের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে আমাদের দেশে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু সচেতন থাকলে ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে পা কাটা থেকে রক্ষা পেতে পারেন ডায়াবেটিসের একজন রোগী।সার্জারি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল|
Nazmus Saqueeb
Sr. Lecturer, Dept. of Pharmacy,
Daffodil International University.