জলবায়ু বিপর্যয় যেন মেঘে ঢাকা তারা

Author Topic: জলবায়ু বিপর্যয় যেন মেঘে ঢাকা তারা  (Read 1167 times)

Offline diljeb

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 164
    • View Profile
জলবায়ু পরিবর্তন মানব স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য আতঙ্কের বিষয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিপন্ন পরিবেশ মানব স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য যে হুমকিস্বরূপ এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ, গ্রিনহাউসের ক্ষতিকর  প্রতিক্রিয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলগোর নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে কাজ হলেও তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সুফল এখনও আসেনি। যে কারণে সুনামির আঘাত, যুক্তরাষ্ট্রে পরপর কয়েক বছর প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ২০০৩ সালে ইউরোপে হিট ওয়েভে ৪৪ হাজার মানুষের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেই চলছে।


আমাদের দেশে ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৮ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালে সিডর এবং ২০০৯ সালে আইলার মতো ঘটনা পরিবেশবিদদের ভাবিয়ে তোলে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে গরমের তীব্রতা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। দূষিত বাতাসে আমরা প্রতি ৪ সেকেন্ডে এক বার নিঃশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করি। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ২৩ হাজার বার নিঃশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করছি। বিভিন্ন কারণে বায়ু দূষণের ফলে প্রতিদিন বাতাসে সিএফসি (ক্লোরোফ্লুরো কার্বন) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ওজন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ সবের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতা।


বাণিজ্যিক কারখানা ও পরিবহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার সাথে কার্বন মনো-অক্সাইড শহরের বাতাসে ভেসে বেড়ায়। কার্বন মনো-অক্সাইড রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে অক্সিজেনের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি মেশার ক্ষমতা রাখে। এই গ্যাস হিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন সরিয়ে নিজে সেই স্থান দখল করে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। বর্ণ, গন্ধহীন বিষাক্ত এ গ্যাস গাড়ির গ্যারেজ, টার্মিনাল, গাড়ির ভেতর ও গাড়ির পেছনে মুক্ত বায়ুতে স্বাভাবিকভাবে ১০০ পিপিএম থাকে। ২০০ পিপিএম থাকলে অবসন্নতা, ঘুম ঘুম ভাব, এমন কী মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ইটভাটা, শিল্প-কারখানা, রান্না ঘরের ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন ইত্যাদির কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে। যা পরবর্তীতে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। ফ্রিজ, এসি থেকে নির্গত সিএফসিতেও পরিবেশের দূষণ ঘটছে। পেট্রোলিয়াম শোধনাগার, পেইন্ট, চামড়াশিল্প, সিমেন্ট কারখানা, সারকারখানা, লৌহ ও ইস্পাত কারখানা, প্রসাধনী কারখানা, খাদ্য প্রস্তুত কারখানা প্রভৃতি থেকে প্রতিনিয়ত দূষিত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। রাজধানীর চারপাশে ও আশপাশের জেলার শত শত ইটভাটার দূষিত বায়ু মহানগরকে তপ্ত করছে।


আমাদের ঢাকা মহানগরীর সড়কের দুই পাশে মাটি, ধুলাবালির স্তর জমে থাকে সব সময়। গাড়ি চলাচলের সময় ধুলাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ফলে ১৫-২০ তলা ফ্ল্যাট বাড়িতেও  ঐ ধুলা পৌঁছে যায়। ধুলার কুয়াশায় ঢেকে থাকে ঢাকা মহানগরী। এতে নগরীর ১ কোটি মানুষের অধিকাংশ কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগতেই থাকে। রাজধানীর পাকা রাস্তা ধুলামুক্ত রাখার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। অথচ আমরা বহু বছর থেকেই শুনে আসছি ঢাকা মহানগরী বিশ্বের সবচেয়ে বায়ু দূষণের নগরী।


বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রিয় পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে যে বায়ুস্তর সেই স্তরে বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, সিএফসি প্রভৃতি গ্যাস। সূর্যের রশ্মি যখন পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে চায় তখন ওইসব গ্যাস তাপ শোষণ করে। এতে পৃথিবীর উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে পৃথিবীর দুই মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে। সাগরের পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরও বৃদ্ধি পাবে। এই ক্রম উষ্ণতার কারণে বাস্তুসংস্থানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নতুন নতুন জীবাণুর আবির্ভাব ঘটছে। এ ধরনের জীবাণু মানুষ এবং পশুপাখিকে সংক্রমিত করছে। যেমন বার্ডফ্লু। শুধু তাই নয়, দূষিত বাতাস গ্রহণে মানুষ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানব শরীর হচ্ছে পুষ্টিহীন।


এখন প্রশ্ন হলো এ জন্য দায়ী কে? এক কথায় এর উত্তর মানুষ। আরও সুস্পষ্টভাবে বললে সেইসব মানুষ এ জন্য দায়ী যারা ভোগবিলাসিতায় মত্ত। সেইসব দেশ এ জন্য দায়ী যাদের জীবনযাপন আধুনিক এবং উন্নত। তাদের অপচয় এবং অপব্যবহারে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। প্রধানত, ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ কয়লা, জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিনিয়ত ব্যবহার করার মাধ্যমে গ্রিনহাউস এফেক্টের জন্য দায়ী। যত বেশি ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার বাড়বে তত বেশি এফেক্ট হবে। সুতরাং জ্বালানীর অপব্যবহার বা অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ-এর অপচয় এবং এসব জ্বালানি থেকে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের অপচয় রোধ করা জরুরি। যেমন আপনি যদি সারারাত অকারণে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখেন তবে ঐ পরিমাণ বিদ্যুতের জন্য ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার বাড়বে। ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্নতে আপনি দায়ী থাকলেন। আবার ধরুন কম্পিটার থেকে লেখা প্রিন্ট করার সময় বা ফটোকপি করার সময় অসতর্কভাবে যত কাগজ নষ্ট করলেন তত বিদ্যুৎ ও কালি অপচয় হবে, তত ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার বাড়বে। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে সতর্ক হতে হবে। জানতে হবে এর প্রতিকার এবং তা নিজেদের স্বার্থেই। যেমন গ্যাস, বাতি, শীতাতপ যন্ত্র প্রয়োজন শেষে বন্ধ করে দেয়া, প্রয়োজন না হলে গাড়ি ব্যবহার না করা, সপ্তাহে নিয়ম করে ছুটির দিন গাড়ি না চালানো, হাঁটার অভ্যাস করা, প্রয়োজনে বাইসাইকেল ব্যবহার করা, মাঠে-ঘাটে, পথের ধারে, বাড়ির উঠানে, ফাঁকা জায়গায় ব্যাপক গাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া এবং এ ধরনের কার্যক্রমকে পুরস্কৃত করা ইত্যাদি উদ্যোগ নিতে হবে।


পরিশেষে বলতে চাই, এই পৃথিবী আমাদের। সৌরজগতের অন্য কোন গ্রহে প্রাণী আছে কিনা এখনও জানা যায়নি। লক্ষ-কোটি গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে একটি প্রাণীসমৃদ্ধ গ্রহকে কি আমরা বাস উপযোগী করে রাখতে পারব না? অবশ্যই পারা উচিত। জলবায়ুর পরিবর্তন রুখতে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। কে করলো, কে করলো না সেটা না দেখে আমি করলাম কিনা এ বিষয়টি ভাবতে হবে। কলটা বন্ধ করলাম কিনা, ঘর থেকে বের হবার সময় বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ হলো কিনা, গ্যাসের চুলা বন্ধ কিনা এগুলো দেখতে হবে। যত বেশি কাপড়, কাগজ, ব্যবহার্য পণ্য ব্যবহার করবো বা অপচয় করবো তত বেশি উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতে তত বেশি বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেলের ব্যবহার বাড়বে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। অতএব আসুন, সবাই মিতব্যয়ী এবং সংযমী হই। শীতল সুন্দর নির্মল বাতাসের মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলি।
- See more at: http://www.risingbd.com/detailsnews.php?nssl=77467#sthash.dWRlSyBa.MLpnEI0p.dpuf

Source:http://www.risingbd.com/detailsnews.php?nssl=77467

Offline ayasha.hamid12

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 372
  • Test
    • View Profile
Public awareness should be increased more...