শারীরিক পরিশ্রমে হার্ট থাকে সুস্থ
শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় লোকদের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সেই সঙ্গে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। হৃৎপিণ্ড একটা মাংসপেশি। তাই প্রতি হৃৎস্পন্দনে রক্ত সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে নিয়মিতভাবে এ পেশির ব্যায়াম জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে তার প্রভাব হৃদরোগের রিস্কফ্যাক্টরগুলোর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে। যেমন-
* হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের ধমনিগুলো সরু হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে।
* শরীরে সঞ্চিত অতিরিক্ত চর্বি ব্যয় করার মাধ্যমে শরীরের ওজন কমাতে ও স্থূলতার হাত থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে।
* ভালো কলস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বাড়িয়ে কলস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখে।
* ব্লাড সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* উচ্চরক্তচাপ কমায়।
* ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করে। যারা ব্যায়াম করেন তারা ধূমপান ছেড়ে দিতে চাইলে অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ সাফল্য পেতে পারেন।
শারীরিকভাবে সক্রিয় হলে আপনার স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতি ঘটবে। বিশেষ করে অধিক কর্মক্ষম হতে, মানসিক চাপ কমাতে, হাড় ও মাংসপেশি সুদৃঢ় হতে এবং গতিময়তা ও শক্তির সামঞ্জস্য রক্ষার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
কোন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম সর্বোত্তম
সুস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতির জন্য আপনাকে শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে অ্যারোবিকস, স্ট্রেনথেনিং ও স্ট্রেচিং ব্যায়াম করা দরকার।
অ্যারোবিকস ব্যায়াম : হার্টের জন্য অ্যারোবিকসই সব থেকে ভালো ব্যায়াম। দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, বাগান করা ইত্যাদি অ্যারোবিকসের অন্তর্গত। এছাড়াও যে কোনো কর্মতৎপরতা যাতে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও মাংসপেশি দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হয় সেগুলো এ ব্যায়ামের মধ্যে পড়ে। এ ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড সবল করার সঙ্গে সঙ্গে ক্যালরির ক্ষয় করে যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে সাহায্য করে।
স্ট্রেনথেনিং একটিভিটি : শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করলে পাকস্থলী ও পিঠের নিম্নাংশের মাংসপেশি সবল হয়। সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠা, বাগানে মাটি খনন করা, উঁচু জায়গায় হেঁটে ওঠা এসব কাজে শক্তিশালী ও বড় মাংসপেশি ব্যবহৃত হয়; আর এসব পেশি বেশি পরিমাণে ক্যালরি ব্যবহার করে শরীরের ওজন স্বাভাবিক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্ট্রেচিং একটিভিটি : এ ব্যায়াম যেমন- যোগ ব্যায়াম ও তাইচি শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
চলাফেরা করুন
ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করুন এবং এর সময় ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দিন। প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম এবং বাচ্চাদের ৬০ মিনিট ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যদিও শারীরিক ব্যায়াম অধিকাংশ লোকের জন্য নিরাপদ। তবুও মাঝে মাঝে কারও সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে সঠিক ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেয়া ভালো।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার : জীবনের জন্য নবীন হার্ট, এটা ঠিক রাখতে ক্যালরি গ্রহণ এবং ক্যালরি ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সমন্বয় ঘটাতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মধ্যে পড়ে- শাকসবজি এবং ফলমূল, শস্য জাতীয় পণ্য, চর্বিবিহীন মাংস, মাছ, ডাল, কম চর্বি এবং চর্বিবিহীন দ্রব্য, অসম্পৃক্ত কোমল মার্জারিন এবং সূর্যমুখী, ভুট্টা, তিল, সরিষা এবং জলপাই তেল, এসব খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সুষম খাবার গ্রহণ করে সুস্থ থাকা সম্ভব।
তামাককে না বলুন : ধূমপান অথবা যে কোনো তামাকজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ হার্টের জন্য ক্ষতিকর। এটা থেকে দূরে থেকে হার্টকে নবীন রাখা সম্ভব। তামাকজাতীয় দ্রব্য বর্জন করলে বা ছেড়ে দিলে রক্তে কলস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, রক্ত তরল থাকে এবং হঠাৎ করে ধমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে।
আপনার করণীয়
প্রয়োজনীয় তথ্য জানুন : নিকটস্থ হৃদরোগ হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হৃদরোগের রিস্কফ্যাক্টর এবং এ রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জানুন এবং তা মেনে চলুন।
হৃদরোগের ঝুঁকির বিষয় জানুন : এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল পারিবারিক ইতিহাস, বডি মাস ইনডেক্স (BMI), কোমরের মাপ, রক্তচাপ, কলস্টেরলের মাত্রা, ধূমপান, অলসতা।
লক্ষ্য স্থির করুন : লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পদক্ষেপ হিসেবে আপনার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং শারীরিক পরিশ্রমের বিষয়টি ঢেলে সাজান। এভাবে সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনার উন্নতি ঘটান।
সমমনস্ক লোকদের নিয়ে নিজস্ব পরিমণ্ডল গড়ে তুলুন : আপনার এ নতুন অভ্যাসকে ধরে রাখতে উৎসাহ যোগাতে পারে এমন লোকদের সঙ্গে নিয়ে এবং তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা চালিয়ে যেতে পারবেন।
যথার্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না : হয়তো কোনো ব্যায়াম করা বাদ গেছে, ধূমপান করে ফেলেছেন অথবা অস্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খেয়ে
ফেলেছেন সেটা নিয়ে খুব বেশি মন খারাপ না করে অবিলম্বে মনস্থির করে দৃঢ়তার সঙ্গে আবার নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান এবং হার্ট নবীন রাখার চেষ্টা করুন।