সহজ ভাষায় দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে
আল্লাহ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন সহজ ভাষায়। মানুষ যাতে দীনের পথে আসে তা নিশ্চিত করতেই সহজ ভাষায় এই ঐশী গ্রন্থ নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ নিজেও পবিত্র কোরআনে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। রসুল (সা.) সহজভাবে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে আসার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন।
তাবিই শাকিক (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। এক ব্যক্তি তাকে বলল, হে আবদুর রহমানের পিতা! আমার আকাঙ্ক্ষা এই যে, আপনি যদি প্রতিদিন আমাদের উদ্দেশে ওয়াজ-নসিহত করতেন। তিনি বলেন, একটা আশঙ্কাই আমাকে তা করতে বাধা দেয়। তোমাদের বিরক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি দৈনিক ওয়াজ-নসিহত করা পছন্দ করি না। এ ব্যাপারে আমি রসুল (সা.)-এর নীতি অনুসরণ করি। পাছে আমরা তার নসিহতে বিরক্ত হয়ে যাই সেদিকে তিনি খেয়াল রাখতেন (বুখারি, মুসলিম থেকে মিশকাতে)।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা দীনের জ্ঞান শিক্ষা দাও ও সহজ করে পেশ কর। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। তুমি উত্তেজিত হয়ে পড়লে নীরবতা অবলম্বন কর। এ কথাও তিনি তিনবার বলেন (ইমাম বুখারির আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থ থেকে)।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারও কোনো আচরণ অপছন্দ হলে রসুল (সা.) তার এই দোষ সামনা সামনি খুব কমই ধরতেন। একদিন এক ব্যক্তি তার কাছে এলো। তার দেহে (পোশাকে) হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। সে যখন (মজলিশ থেকে) উঠে দাঁড়ালো তখন রসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, সে যদি এই রং পরিবর্তন অথবা পরিষ্কার করে ফেলত! (আদাবুল মুফরাদ থেকে)
সমাজের প্রভাবশালী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি পদে পদে লোকের ভুল ধরে তবে তাতে সুফল হওয়ার পরিবর্তে অবাধ্যতার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংস্কার-সংশোধনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞচিত কর্মপন্থা অবলম্বন করা উচিত। যারা দীনের প্রচারক তাদের উচিত তাদের কথা এবং কাজে কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। মানুষকে সংশোধন করা এবং অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও এ সতর্কর্তা থাকতে হবে। মানুষের কাছে সহজ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) কথা বলতে হবে। সাধারণ মানুষ ভুল করতেই পারে। কিন্তু কথায় কথায় ভুল ধরার বদলে কোনটি সঠিক তা জানানোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে। মানুষকে দীনের পথে আনতে সহজ ভাষায় তাদের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
লেখক : ইসলামী গবেষক।