ঠিক কতদিন হয়েছে তুমি এই শূন্য শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হয়েছ? অঙ্কের শূন্যকে তুমি ঠিক কতদিন ধরে চেন? নিশ্চয় হাত গুনে গুনে অনেকগুলো বছরের হিসেব বলবে। শূন্য কি আর যেমন তেমন ব্যাপার? সেই ছোট্টবেলায় পড়াশোনা শুরুর আগ থেকেই ওই গোল জিনিসটাকে দেখে ফেলেছ তুমি। এ নাহয় গেল তোমার সঙ্গে শূন্যের পরিচয়ের কথা।
কিন্তু সত্যিকার শূন্যের পরিচয় কী তুমি জান? বলতে পার শূন্যে বয়স কত? উহু! এটি কিন্তু যেমন তেমন ব্যাপার নয়। এক নয়, দুই নয়, হাজার বছর আগে জন্ম শূন্যের। সেই পঞ্চম শতাব্দীতে। তখন পাটিগণিত করতে গিয়েই জান বেরিয়ে যেত সবার। এত শত প্যাঁচালো অংক তখন ছিলই না।
প্রথমে শূন্যের জন্ম হয়েছিল ব্যাবিলনীয়, মায়া আর ভারতীয় সভ্যতায়। তবে অনেকে বলে ব্যাবিলিয়ানদের কাছ থেকেই এসেছিল ভারতের প্রথম শূন্য। তবে সংখ্যা কী করে গুনতে হয় সেটা কিন্তু ব্যাবিলিয়ানরা শিখেছিল সুমেরীয়দের কাছে।
ওদের কাছে শুরুর অর্থ ছিল ফাঁকা। ওরা শূন্যের জায়গাটা ফাঁকাই রেখে দিত। তবে ব্যাবিলিয়ানরা জায়গাটাকে ফাঁকা না রেখে সেখানে রেখে দিত কাঠ বা বাঁশের টুকরা। তবে ওরাও কিন্তু সংখ্যা হিসেবে শূন্যের জন্ম দেয়নি তখনও।
এর প্রায় ৬০০ বছর পর মায়াসভ্যতায় শুরু হয় শূন্যের বেড়ে ওঠা। ওখানেই ক্যালেন্ডারের পাতায় প্রথম জায়গা করে নেয় শূন্য। তবে এতকিছুর পরেও কিন্তু যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ এসবের ধারকাছ দিয়েও শূন্যকে নিয়ে যায়নি মায়ানরা।
তবে শূন্যকে সমীকরণের রূপ দিতে এগিয়ে আসে ভারতীয়রা। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৮ সালে প্রথম শূন্য আসে ভারতে। এখানেই প্রথম শব্দটি সংকেতের রূপ নেয়। গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত প্রথম শূন্যকে একটি গাঠনিক রূপ দেন। যোগ-বিয়োগের নিয়ম বানান। এর পরের কয়েক শতাব্দীতে হুট করে শূন্য চলে যায় চীন আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। বাগদাদে জন্ম নেয় শূন্যের আরবি রূপ। পারস্যের এক গণিতবিদ মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল খারিজমি প্রথম ভাবেন শূন্যকে একটি গোলাকার রূপ দেওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, বীজগণিত আবিষ্কার করেন তিনি। আবিষ্কার করেন দ্রুত গুণ আর ভাগ করবার নতুন নতুন পদ্ধতি।
স্পেনে কিছু নতুনত্ব পাওয়ার পর ইটালিতে গিয়ে গণিতবিদ ফিবোনাক্কির সহায়তায় আরও কিছুটা উন্নত হয় শূন্য। শূন্যকে ব্যবহার করে কোনো রকম অ্যাবাকাস ছাড়াই গণিত, বিশেষ করে পাটিগণিত করার উপায় বের করেন তিনি। অ্যাবাকাস চেন তো? অ্যাবাকাস হচ্ছে গণনা করার প্রাচীনতম যন্ত্র। সেখানে থাকত কতগুলো গোল গোল গুটি। এই গুটিগুলোকে একটি অক্ষপথ ধরে একপাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে গণনার কাজ চালান হত।
ফিবনক্কির পর শূন্যের অগ্রযাত্রা ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল মাঝখানে ইতালিয়ার সরকার আরবীয় সংখ্যার উপর বেশ কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু সংখ্যাগুলো এতই জনপ্রিয়তা ততদিনে পেয়ে গিয়েছে যে অবৈধভাবেই সেগুলোকে ব্যবহার করতে থাকে ইতালিয়ানরা।
১৬০০ শতকের দিকে স্যার আইজাক নিউটন আর অন্যসব মনীষীদের সহায়তায় শূন্য পাকাপোক্ত একটিজায়গা করে নেয় গণিতের জগতে। সেই শূন্যই আমরা আজ পর্যন্ত ব্যবহার করে আসছি।