Faculties and Departments > Allied Health Science

কিডনি রোগীর পথ্য

(1/1)

sajib:
জাল খাদ্য, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন ছাড়াও আরও নানা কারণে আমাদের ঘরে ঘরে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিডনি রোগের চিকিৎসায় ডায়েটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত ক্রিয়েটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ওষুধ আবিস্কার না হলেও যথাযথ পথ্য নিয়ন্ত্রণ করে কিডনিকে বিশ্রাম দিতে পারলে ক্রিয়েটিনের মাত্রা বাড়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা সম্ভব। রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা বেড়ে গেলে বুঝতে হবে অবশ্যই রোগীকে তার ডায়েট নির্ধারণ করতে হবে।

অন্য রোগের ক্ষেত্রে পথ্য নির্দেশনা মেনে চললে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু কিডনি রোগের ক্ষেত্রে প্রতিটি পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করে রোগীর ডায়েট তৈরি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একজন ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনি রোগীদের জন্য কখনই একটি গতানুগতিক ডায়েট প্রেসক্রাইব করা যায় না। এটি প্রত্যেকটি রোগীর জন্য স্বতন্ত্র। কেননা রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রোগীর ওজন, বয়স ও শারিরীক অবস্থার বিবেচনা করে পথ্যটি নির্ধারিত হয়।

কিডনি রোগীদের জন্য অন্য রোগীদের তুলনায় একটু বেশি ক্যালোরি নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য এই পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ ক্যালোরি হয়ে থাকে। শরীরের প্রোটিন যেন শক্তির অভাবে না ভাঙ্গে এজন্য ক্যালোরীর বেশিরভাগই কার্বোহাইড্রেট থেকে বরাদ্দ করা হয়। ডায়াবেটিক কিডনি রোগীর ক্যালরি অবশ্য তার ডায়াবেটিসের অবস্থা অনুযায়ী বিবেচনা করে করা হয়। এক্ষেত্রে ভাত/ রুটি (ময়দার বা চালের) চিড়া/ সাগু/ চালের সুজি ইত্যাদি কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ কিডনি রোগীর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিয়েটিনের মাত্রা, ইউরিন মাইক্রো এলবুমিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের মাত্রা, রোগীর ওজন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন রোগীভেদে ডায়েটে দেয়া হয়ে থাকে। প্রাণীজ প্রোটিন থেকে রোগীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে। ডিমের সাদা অংশ, মুরগির বুকের মাংস, মাছ, দুধ বা দই থেকে নিদিষ্ট পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। অনেক রোগীদেরই একটি ভূল ধারনা থাকে যে, ৩০ গ্রাম প্রোটিন মানে ৩০ গ্রাম মাছ বা মাংস। যা সম্পূর্ন ভূল। ৩০ গ্রাম প্রোটিন হল ২৪ ঘন্টায় রোগীর প্রোটিনের পরিমাণ। এক্ষেত্রে কতটুকু ওজনের মাছ বা মুরগির মাংসের টুকরা হবে তা হিসেব করে নির্ধারণ করা হয়।  আমাদের মনে রাখতে হবে ৩০ গ্রাম প্রোটিন মানে ৩০ গ্রাম মাছ, মাংস বা ডিম নয়। যেমন একটি ডিমের সাদা অংশ থেকে আমরা মাত্র ৩.২ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে থাকি। 

রক্তে ইলেকট্রোরাইট, ইউরিক এসিড ও শরীরে ইডিমার ওপরে ভিত্তি করে ফল ও শাকসবজির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ মিলি ইকুইভিন্টে পর্যন্ত পটাশিয়াম প্রতিদিন রোগীকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কতটুকু ফল ও সবজি খাবে তা ডায়েটিশিয়ান নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে।   আপেল, নাসপাতি , পেয়ারা ও পেঁপে এই চারটি ফলই সাধারণত বরাদ্দ করা হয়। তবে পটাসিয়ামের মাত্রা ভেদে তা পরিবর্তন করা যেতে পারে। পিউরিন ও উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন ফুলকপি, মটরশুটি, টমেটো, ঢেড়শ, কচুরলতি আরও বেশ কিছু সবজি নিষেধের তালিকায় থাকে।

রোগীর ২৪ ঘন্টায় তরলের চাহিদা সাধারণত রোগীর ইডিমা, এষ্টিমেটেড জি.এফ.আর., রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা, ক্রিয়েটেনের মাত্রা ও গ্রহণকৃত ওষুধের ওপর নির্ধারণ করা হয়। তরল মাপার ক্ষেত্রে সময়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে দেড় লিটার পানি রোগীকে বরাদ্দ করা হয়। যা পানি, চা, দুধ সব মিলিয়ে হিসেব করতে হবে।

কিডনি রোগীর সোডিয়ামও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা, ইডিমা এবং গ্রহণ করা ওষুধের ভিত্তিতে সাধারণত প্রতিদিন ২ থেকে ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারেন। ১ চামচ সমান ৫ গ্রাম। এক্ষেত্রে আলাদা লবণ অবশ্যই পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
 
কিডনি রোগীদের অনেক শারীরিক দূর্বলতা ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। বিশেষ করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপলিমেন্ট বা  ইঞ্জেকশন নিতে হতে পারে। তবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য না জেনে কখনোই কোনো খাবার গ্রহণ করা উচিত না।

প্রত্যেক কিডনি রোগীর জন্য যদিও স্বতন্ত্র ডায়েট - তারপরও কিছু খাবার আছে যা সব কিডনি রোগীকেই পরিহার করতে বলা হয়। যেমন: ডাল, কোল্ড ড্রিংকস, আঁচার, গরু, খাসীর মাংস, ভাজাপোড়া খাবার, কফি, চানাচুর, পাপড়, বাইরের কেনা খাবার ও বাসি খাবার ইত্যাদি। তাই রোগীদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে, প্রতি তিন মাস পর পর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করা। নিয়মিত ডাক্তার দোখানো ছাড়াও অবশ্যই একজন ডায়েটেশিয়ানের কাছ থেকে আপনার পথ্য পরামর্শ ও খাদ্য তালিকা করে নেবেন। তাতে আপনার কিডনি বিশ্রাম পাবে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/350746.html#sthash.RqpW5O00.dpuf

Navigation

[0] Message Index

Go to full version