দুস্থ ও গরিব রোগীদের বিনা ভাড়ায় প্রতি বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আনোয়ারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা-নেওয়া করা হয়। জরুরি অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়।’
এমন বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে আনোয়ারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দেয়ালে। বিজ্ঞাপনে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে ফোন করলে অপর প্রান্তে ধরেন অটোরিকশাচালক দিলীপ কুমার দাশ। বিজ্ঞাপন তিনিই দিয়েছেন বলে জানালেন। সপ্তাহে ছয় দিন অটোরিকশা চালালেও এক দিন হাসপাতালের রোগী পরিবহন করেন তিনি। এ বছরের ২৬ মার্চ থেকেই এমন কাজ করছেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রোগীরা ফোন করেন তাঁকে। তিনি তাঁদের পৌঁছে দেন হাসপাতালে।
দিলীপ কুমার দাশের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা গ্রামে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার তিনি খাসখামা, গুজরা ও উত্তর ইছাখালীর গিরব রোগীদের বিনা ভাড়ায় আনোয়ারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেে আনা নেওয়া করেন। তা ছাড়া রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে যান।
কেন এ রকম উদ্যোগ নিলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মনের কষ্ট দূর করতে এটি করি, আর বুধবার একজন রোগীও নিতে না পারলে খুব খারাপ লাগে।’
কথায় কথায় জানা গেল তাঁর জীবনের গল্প। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। একসময় ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ করেছিলেন। এরপর আবার ফিরেছেন নিজের গ্রামে। মানুষের জন্য কিছু একটা করবেন—এমন ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ।
রোগী বহনের সময় বিড়ম্বনারও শিকার হতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর অটোরিকশার নিবন্ধন গ্রামের হওয়ায় রোগী নিয়ে শহরে গেলে মাঝেমধ্যে পুলিশ ধরে। একবার পুলিশের এক কর্মকর্তা বললেন, ‘দিনে মানুষের উপকার করছ, এখন আমাদের উপকার কেরা।’
গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় দিলীপ যথারীতি রোগী নিয়ে এসেছেন। কথা হয় গ্রাম থেকে দিলীপের অটোরিকশায় আসা শ্বাসকষ্টের রোগী সালেহা (৫৪) বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিলীপের গাড়ি না পেলে হয়তো ডাক্তারের কাছেই আসা হতো না। শুধু আমি নই, আমাদের তিন গ্রামের গরিব রোগীদের বড় ভরসা সে।’
আনোয়ারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) গোলাম মোস্তফা জামাল বলেন, ‘বুধবার দিলীপ ভাড়া ছাড়াই তাঁর তিন গ্রামের রোগী পরিবহন করেন, এটা বিশাল ব্যাপার। দিলীপের মতো ব্যক্তিরা আছেন বলেই এখনো সমাজটা এখনো সুন্দর।