সারা বিশ্বের মতো গত পহেলা ডিসেম্বর বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব এইডস দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়বো সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার’। এইড্স এর পুরো নাম হলো (A-Acquired) (অর্জিত) (I-Immune) (রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা)(D-Deficiency) (ঘাটতি) (S-Syndrome) (অবস্থা/রোগের লক্ষণ সমূহ) অর্থাৎ অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টিকে এইড্স বলে। এটি HIV নামক ভাইরাসের সংক্রমনে হয়ে থাকে। এ ভাইরাসের কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগী ধীরে ধীরে মারা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এ রোগ প্রকাশ পায়। আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে একজন পুরুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া যায়৷
বর্তমান বিশ্বে সমগ্র মানব জাতির জীবন ও সভ্যতার জন্য ‘এইডস’ এক ভয়ঙ্কর হুমকি । এটি একটি মারাত্মক জীবনহননকারী রোগ।প্রতিদিন বিশ্বে ১৪ হাজার লোক এইডসে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ব-এ প্রায় ৪০ মিলিয়ন লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর কোন চিকিৎসা নেই, নেই কোন প্রতিষেধকও, পরিনতি অবধারিত মৃত্যু। তবে এইড্স প্রতিরোধের উপায় আছে। বিশ্বে বর্তমানে এইচআইভি ভাইরাস তথা এইডস্ রোগীর সংখ্যা ৮ কোটির ও বেশী। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুসারে এ পর্যন্ত এইড্স এ আক্রান্ত হয়েছে ১২৯৯ এবং মৃত্যু বরন করেছেন ৪৭২ জন আর এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৩২৪১(২০১৩ পর্যন্ত) তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত।
বিশ্বের উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এইডসের প্রকোপ কম।বাংলাদেশে তিন দিকে ভারত ও মায়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। উক্ত দেশ সমূহ এইড্স এর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ও অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি থাকায় বাংলাদেশেও এইডস যে কোনো সময় মহামারীতে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা বিভিন্ন কারণে তিন দেশের মানুষই প্রতিনিয়তই সীমান্ত অতিক্রম করে যা এইড্সের ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি করছে।
কী কারণে এইডস ছড়ায়
এইডস রোগ ছড়ানোর উপায় চারটি ঃ
১. এইডস ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে
২. দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে
৩. এইডস ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের থেকে শিশু জন্মের আগে, জন্মের সময় ও জন্মের পরে আক্রান্ত হয়
৪. সংক্রমিত সুচ বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে।
এইচআইভি /এইড্স প্রতিরোধের উপায়ঃ-
১। অবৈধ যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বস্ত সম্পর্ক বজায় রাখা।
২। ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করা,
৩। সমকামিতা নামক বিকৃত যৌনাচার বিরত থাকা এবং প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করা।
৪। যৌন উত্তেজক উপকরণ সমূহ যেমন; অশ্লীল সিডি, ভিসিডি, বই, ম্যাগাজিন, পর্ণো সাইট ইত্যাদির বেপারে স্কুল-কলেজ এর অপরিনত ছাত্র-ছাত্রিদের শুধু আইন প্রনয়নই নয় কঠোরভাবে প্রয়োগ করে এদেরকে অকাল অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
৫। রক্তনালীতে নেশাকারক ঔষধ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সিরিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিসপোজেবল সিরিজ সর্বাধিক নিরাপদ। এছাড়া যথোপযুক্ত পরীক্ষা বা স্কিনিং ছাড়া রক্ত গ্রহন বা দান না করা।
৬।কনডম বিহীন অরক্ষিত এবং অবৈধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকুন।
৭। এইডস বিষয়ক জ্ঞান এর কন বিকল্প নেই। পাঠ্য পুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে তরুন সমাজকে এইডস এর কারন ও প্রতিরোধের সঠিক জ্ঞান প্রদান করতে হবে।
সচেতনতাই প্রতিষেধকঃ
পরিশেষে বলতে চাই যেহেতু এ অবধি এইডসের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, তাই প্রতিরোধই একমাত্র সমাধান এবং ব্যাপক গণসচেতনতা হতে পারে এইডসের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর হাতিয়ার। আসুন এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে নিজে জানি, অন্যকেও জানাই এবং এভাবে এইডস প্রতিরোধ করি।