Bangladesh > Heritage/Culture

বাংলা মিশে আছে আমার চিন্তা, স্বপ্ন, মনন ও চেতনায় ....

(1/1)

Farhana Helal Mehtab:
বাংলা মিশে আছে আমার চিন্তা, স্বপ্ন, মনন ও চেতনায় .... [/b]

আমি কে? মুসলিম না বাঙালী? না কি  নারী? সব কিছু ছাপিয়ে আমার নারী স্বত্বা বা “ফিমেল আইডেন্টিটি” কি আমাকে নিরাপত্তাহীন অথবা নাজুক অথবা অধিক মহীয়ান করেছে? প্রশ্নগুলি আমার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। একসময় উত্তরগুলি খুঁজে পেয়ে শান্ত হই। আমিতো মানুষ। সৃষ্টিকর্তার অনন্য সৃষ্টি। আর মুসলিম, বাঙালী ও নারী স্বত্বা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে আমার অস্থি মজ্জায় । যেমন মিশে আছে বাংলা ভাষা ... মায়ের ভাষা। যে ভাষায় ‘মা’ বলতে শিখেছি, ‘বাবা, বাবা’ ডেকে বাড়ীর এ মাথা থেকে ও মাথা হুলস্থূল করেছি, যে ভাষায় নিজের দুঃখ, বেদনা, হাসি- আনন্দ প্রকাশ করতে শিখেছি, যে ভাষার প্রতি সৃষ্টি হয়েছে সহজাত এক ভালবাসা, অনন্য এক আকর্ষণ, অধীর এক ব্যাকুলতা । বাংলা মিশে আছে আমার চিন্তা, স্বপ্ন, মনন ও চেতনায়।   
অনেক দিন আগের কথা ।মাসটা ছিল সম্ভবত ফেব্রুয়ারী। হাল্কা হিম বাতাস, সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্ত, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে বের হয়ে মল চত্বরে হাঁটছি।দূর থেকে ভেসে আসছে প্রতুল মুখোপাধ্যায় এর সেই প্রিয় গান, 
আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি/
আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর-মানুষের কাছে আসি/
আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায়/
মিশে তেরো নদী, সাত সাগরের জল গঙ্গায়-পদ্মায়/
বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক/
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ॥

শেষ লাইনগুলু যখন শুনছি, মনের আজান্তেই তখন চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে, হয়তোবা বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম । কানে তখনো বাজছিল কিছুক্ষণ আগে শোনা  সেই গান । কয়েকজন ছেলেমেয়ের সংলাপে গতি মন্থর করলাম । এরা কি বাংলা বলছে?! বাংলাইতো ... ‘ই’ প্রত্যয় লাগাতে হল, কেননা ধ্বনি তত্ত্বের বা ধ্বনি-সম্বন্ধীয় ব্যাকরণের কোথাও এই উচ্চারণের বাংলা সম্পর্কে জ্ঞাত হইনি । কী এক অদ্ভুত উচ্চারণ ও ভঙ্গিমায় শব্দগুলু উচ্চারিত হচ্ছে ! নিজেকে প্রশ্ন করি, এই উচ্চারণ কি আমাদের খুব অচেনা ? না, তা নয়। বর্তমান নাটকের সংলাপে, বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে, খাবারের দোকানগুলুতে তো আমরা হরহামেশাই এই উচ্চারণ শুনছি ... তবু কেন মেনে নিতে  কষ্ট হয়? কষ্ট হয়, কারন “যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায়” ...  আমি বা আমরা মেনে নিতে পারি না কেননা, এই উচ্চারণগুলুর সাথে আর যাই হোক ভাষার প্রতি কোন শ্রদ্ধা বোধ থাকছে না । আমাদের পারস্পারিক সম্পর্কগুলুতে যেমন একটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে,  ঠিক তেমনি অদ্ভুত এই উচ্চারণগুলুর সাথে সাথে আহত ও যন্ত্রণাকাতর হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ, I শ্রদ্ধাবোধ । খুব জানতে ইচ্ছে করে,  বাংলাভাষার বিকাশের ইতিহাস যদি এই প্রজন্ম জানতো, শুধু উৎসব আর আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে পালন না করে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর মর্মার্থ যদি ওরা বুঝতে পারতো, তবে কি ওরা অদ্ভুত উচ্চারণ এর পরিবর্তে,  শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় শব্দগুলু উচ্চারণ করতো? কি জানি, হয়তোবা ! এই “কর্পোরেটী”য় উৎসব পালনের  যুগে, আবেগ-অনুভুতিগুলিও কেমন যেন কর্পোরেট গন্ধ মাখা! আর তাই “আর-জে”, “ডি-জে” মার্কা উচ্চারণগুলু সহ্য করতে না পেরেও আমরা বড়রা কেমন যেন পাস কাটিয়ে  যাই বা এড়িয়ে যাই। “সামাজিক দায়বব্ধতা” শব্দটাতো ক্রমশই চর্চাহীন হয়ে যাচ্ছে । এ যেন  ছেলেবেলার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার “যেমন খুশী তেমন সাজো” রাজ্য ! এই রাজ্যে কষ্টগুলু বিচিত্র বর্ণে একের পর এক তাদের পসরা মেলে ধরছে । আর আমাদের অনুভুতিগুলি বর্ণহীন–গন্ধহীন হয়ে নীরব–নিথর হয়ে যাচ্ছে ।

এই লেখাটির পাঠকদের মধ্যে  যদি আমার প্রাক্তন বা বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ থেকে থাকে, তবে তারা  মনে মনেই একটিবার ক্যাম্পাসে বিচরণ করে আসবে; কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মাধ্যম “ইংরেজি” ভাষার ব্যবহার  নিয়ে তাদের প্রতি যত বাক্য ব্যয় করেছি, তারচেয়ে অধিক বাক্য ব্যয় করা হয়েছে বাংলাভাষার  শুদ্ধ ব্যবহার নিয়ে। কেউবা কঠিন কথা শুনেছে সুন্দর মার্জিত বাংলা ভাষার ব্যবহার ইচ্ছে করেই পরিহার করার জন্য । ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষার শেষ দিন পর্যন্ত কেউ কেউ ভাষা ব্যবহার সংক্রান্ত উপদেশ শুনেছে । “বদলে  যাও...” এর এই যুগে আনেকেই নিজেকে শুধরেছে, অনেকে চেষ্টা করেছে। তবে সবাই অর্থাৎ আমার সকল ছাত্র-ছাত্রীতো আর  বদলে যেতে পারেনি। তাই বলেতো আমিও নীরবতা পালন করতে পারিনি। আমি বলেছি... বলছি... এবং বলবো; আমার ক্ষুদ্র বলয়ে আমি জানি, আমি চেষ্টায় রত থাকবো ।  আমি  এও জানি, আমি একা নই, বিভিন্ন প্রান্তে কেউ না কেউ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষার শুদ্ধ, পরিশীলিত, প্রমিত ব্যবহার নিয়ে ভাবছে এবং নীরবে কাজ করছে । আমার বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি ।
মূলকথা হল, নতুন প্রজন্ম যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে নতুন শপথে উজ্জীবিত  হয়েছে, তেমনি  “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”- এর  সম্মান রক্ষার জন্য প্রজন্ম পরম্পরায় দৃপ্ত শপথ নিতে হবে, বাংলা ভাষার মহতী  সব অর্জন, আত্মশ্লাঘা, ও অহংকারকে সমুন্নত রাখার জন্য সকল উদ্যোগ আয়োজনে শামিল থাকতে হবে, জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিসরে নিতে হবে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ। আমাদের চিন্তা, চেতনা ও মননে বিশ্বাস করতে হবে, “আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই/ আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন,  আমি বাংলায় বাঁধি সুর/ বাংলা আমার জীবনানন্দ, বাংলা প্রাণের সুখ.../”

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, আমাদের স্বপ্ন ও কল্পনার রূপকার, বাঙালী জীবনের নানা গল্পের আখ্যানকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “জানার কথাকে জানানো আর হৃদয়ের কথাকে বোধে জাগানো, এছাড়া ভাষার আর একটি বড় কাজ আছে। সে হচ্ছে কল্পনাকে রূপ দেওয়া।” রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দ দাশ যে ভাষায় গল্প ও কবিতা লিখেছেন; লালন-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত লিখেছেন মানুষ ও জীবনের গান, সেই ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রবীণ ও নবীন প্রজন্মকে কাজ করতে হবে একসাথে, আর সেটিই হবে অনাগত প্রজন্মের প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার ।

ফারহানা হেলাল মেহতাব
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি

Farhana Helal Mehtab:
“বাংলা মিশে আছে আমার চিন্তা, স্বপ্ন, মনন ও চেতনায় ....” এই লেখাটি “প্রথম আলো” পত্রিকার “ড্যাফোডিল প্রথম আলো বন্ধুসভা” র প্রকাশনা “আলোর খেলা” র একুশে সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। বাংলা একাডেমীর নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মোড়ক উম্মোচন পর্ব । সম্পাদক নূরূন নবী সোহেল , আমাদের প্রিয় ছাত্রদের একজন । তার  ও তার ছোট্টো দলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই পত্রিকা । তোমার এবং তোমাদের জন্য রইল আমার শুভ কামনা ।

Farhana Helal Mehtab:
আফিস মেইল খুলে আজ এই নোটিস টা পেলাম। Registrar অফিসের নোটিস ... ভাল লাগলো।


Notice

15 February 2015

 

As per the decision of the meeting held on 15 April 2014 of Ministry of Information and subsequently a letter from UGC, Students, Teachers and Administrative Employees  are requested to prevent contaminating of Bengali Language, distort pronunciation, pronouncing Bengali with the tone of foreign language etc.  and introduce Bengali in all aspects.

Ferdousi Begum:
"মুসলিম, বাঙালী ও নারী স্বত্বা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে আমার অস্থি মজ্জায় ।আমিতো মানুষ। সৃষ্টিকর্তার অনন্য সৃষ্টি। "
এই বোধোদয় বা উপলব্ধি আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের এই যুগে এই  উপলব্ধির বড় দরকার।

fahad.faisal:
Thanks a lot for the informative post.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version