মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?
মানুষ দুনিয়ায় আসার আসল উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা, কিন্তু অনেকেই তা ভুলে যান। পার্থিব কর্মকাণ্ডে তারা এমনভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যেন অন্য কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই অথচ তারা হিসাব করে দেখেন না, আল্লাহর নির্ধারিত আবশ্যিক ইবাদতগুলো পালন করতে কতটুকুই বা সময় ব্যয় হয়। দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ বা অবশ্য করণীয়। হিসাব করলে দেখা যাবে, পাঁচবারে সর্বমোট এক ঘণ্টা সময়ও ব্যয় হয় না। তাহলে তো অবশিষ্ট তেইশ ঘণ্টাই রয়ে গেল পার্থিব কাজকর্ম করার জন্য। অথচ এই এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেই অনেকের ভীষণ অনাগ্রহ। মানুষ তার জীবনের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে যখন অনুভূতিহীন হয়ে পড়েন, তখন তার জীবনের গতিধারা আর নিয়মের অধীনে চালাতে পারেন না। মানুষ কোথা থেকে এলো, এখানে তার কী কর্তব্য, এরপর তাকে কোথায় যেতে হবে এসব প্রশ্ন সামনে নিয়েই তাকে নির্ধারণ করতে হবে জীবন পরিচালনার গতিপথ। হাল ছাড়া যেমন কোনো নৌকার গতি সঠিক থাকে না, লক্ষ্যহীন জীবন তেমনি গন্তব্যের পথে এগুতে পারে না।
মানুষের জীবনকে এমন একটি ছকের অধীনে চালাতে হবে, যা তার মূল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যে পথ তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে গন্তব্য থেকে অন্যত্র নিয়ে যায়, তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কিন্তু অনেকেই তা অনুধাবন করতে পারে না। তারা জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে এমন কাজে, পরিণামে যা তার জন্য কোনো সুফল বয়ে আনে না। পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। এখানে কারো চিরকাল অবস্থানের সুযোগ নেই। যত শক্তিধরই হোক কেউ এখানে থাকতে পারেনি। সুতরাং এ জীবনের জন্য অধিক সম্পদ আহরণের কোনো অর্থ হয় না। আখেরাতের জীবন যেহেতু চিরকালের জীবন, সুতরাং সে জীবনের পাথেয়ের প্রয়োজন যে বেশি তা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। সে জন্য ইমাম গাজ্জালি [রহ.] বলেন, তুমি দুনিয়াতে যতদিন অবস্থান করবে, সে হিসাবে এখানকার জন্য তৎপরতা চালাও। আর আখেরাতে তোমাকে যতকাল স্থায়ী হতে হবে, সে হিসাবে সেখানকার জন্য শ্রম ব্যয় কর। এ জন্য বিশ্বাসীদের জন্য উচিত নিজের যাবতীয় চিন্তা-চেতনাকে প্রকৃত জীবন আখেরাতের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত রাখা।
মাওলানা মিরাজ রহমান