দারুন সুন্দর একটা জায়গা। বিশাল ব্যাপার স্যাপার। আকারে আয়তনে সত্যিই এশিয়ার বৃহত্তম হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। বাংলাদেশে এমন দুর্দান্ত একটি পার্কেরঅস্তিত্ব আছে না গেলে বিশ্বাস হবে না। এটির যিনি প্রধান কর্তা তপন কুমার দে , অত্যন্ত সজ্জন। গভীর নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে তিনি চমৎকার সূচনা করেছেন। এই সাফারি পার্কে গিয়ে একটি দারুন আনন্দময় দিন এবং এই রোদ ,এই হালকা বৃষ্টির চমৎকার ভ্রমণ কিভাবে কেন তিক্ত ও গজবী ভ্রমণে রুপান্তর হল সেটা লিখতে বসেছি। কেন মানুষ দেশে এত মনোজ্ঞ ভ্রমণস্থল স্বত্ত্বেও কাছে পিঠে ভারত নেপাল থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ায় প্রচুর পয়সা খরচ করে ভ্রমন করতে যায় সে সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান অর্জন করলাম।
ঢাকার থেকে সোয়া ঘন্টার রাস্তা। মাননীয় ওবায়দুল কাদেরের মাশাল্লাহ রাস্তা। ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে প্রস্থে কেবল বড় হচ্ছেই। বনজঙ্গল খেয়েই চলেছে রাস্তার নিত্য নতুন পরিকল্পনা। কিন্তু আসল কাজের খবর নেই। ছিরি ছাদ নেই। গভীর গর্ত, খোয়া উঠানো বালু আর ইট। পিচের রাস্তা কোথায় খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। এবড়ো খেবড়ো। কাজ কেবল করেই চলেছে নির্মাতারা। কেয়ামতের আগে শেষ হলেই ভাল। অন্তত শেষ যাত্রাটা মসৃন হবে।
1বাঘের বাজার গিয়ে গ্রামীন লোকালয়ের ছিমছাম পিচঢালাই রাস্তা ধরে অনেকখানি গেলে তবে সাফারিতে পৌছালাম। ঈদের পরদিন। গিয়ে দেখলাম হাজার হাজার মানুষ। ঢাকা শহরের প্রাইভেট কারের একটা বড় অংশই পার্কিংলটে অবস্থান করছে।
টিকিট কাটতে গেছি। বিরাট লাইন। তারের জালির কাউন্টারটা কোন বিচিত্র কারণে আয়রন শিট ঝালাই করে ঘোমটা দেয়া। তার মাঝেই দর্শনার্থী-টিকিটবিক্রেতা বিচিত্রসব কথোপকথন হচ্ছে। জিনস গেঞ্জী পরা মাথায় সোনালী চুল একজন মালদার দর্শনার্থী জানতে চাইলেন ফোকল দিয়ে ভেতরেÑ হ্যালো ভাই, ভেতরে গাড়ি নিয়ে ঢোকা তো যাবে ! প্রাইভেট কার ঢোকার টিকিটের দাম কত!
-না ভাই। ভেতরে গাড়ি ঢোকার টিকিটের ব্যাবস্থা নাই।
-কেন ,ঢোকা যাবে না কেন। ব্যাঙ্ককে তো প্রাইভেট কার নিয়ে ভেতরে ঢোকা যায়। আলাদা পয়সা লাগে। যা পয়সা লাগে নিন ভাই।
-সরি স্যার। এইখানে ওই সিস্টেম নাই।
সোনালি চুল নাছোরবান্দা। তিনি আবারও থাই-মালয়ী নানা দৃষ্টান্ত দিলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম- এই লোকের পেছন পেছন থাকব। বিনে পয়সায় তার থাই মালয়ী ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা জানা যাবে।
উনি বেশী পীড়াপিড়ি করায় ভেতর থেকে জবাব এলো- আপনি স্যার থাইল্যান্ডেই যান। এইদেশে অনেক সমস্যা। পার্কিং-এ কয় হাজার গাড়ি দেখছেন। তখন সব ভেতরে ঢুকবে। টিকেট দুই তিনহাজার টাকা নিলেও ঢুকবে। তারপর খোলা জায়গায় বাঘের সাথে দাড়াইয়া ছবি তুলতে গিয়ে সিংহের পেটে অক্কা যাবে।
2টিকেটম্যানের কথায় সবাই হেসে উঠল। একজন বক্রোক্তিও করলেন। থাইল্যান্ডি লোক এখানে আসছে কেন। সেখানে গেলেই পারত। আরেকজন বললেন-খালি চাপাবাজি। ব্যাঙ্কক কেন, ব্যাঙ্কক-টাইপসাফারি পার্কে প্রাইভেট কার নিয়ে ঢোকার সিস্টেম দুনিয়ার কোথাও নেই। বুরকিনা ফাসোতেও নাই। বাঙালির খালি ফুটানি। তবে ওয়াইল্ড সাফারি হলে ভিন্ন কথা।
এই কমেন্টকারীও সুবেশী। তাকেও চিনে রাখলাম। ইচ্ছে হল তার পেছনেই থাকি। তার কাছে নিশ্চয়ই সারা দুনিয়ার খবর পাওয়া যাবে।
বিরাট সিংহ দরোজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মনটা ভাল হয়ে গেল। বিশাল এক লেক। ছবি তুললাম। শুনেছিলাম ভেতরে বাঘসিংহের সাফারি আছে। যেখানে পশুরা মনের খেয়ালে ঘুরে বেড়ায়। আর মানুষ গাড়িবন্দী থেকে তাদের দেখে। সেই চমকপ্রদ জায়গার কাছে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার দশা। সুবিশাল লাইন। এই স্পেশাল সাফারির আলাদা গেট। আলাদা টিকেট। একশ টাকা জনপ্রতি। মানি ইজ নো প্রোব্লেম। কিন্তু গেট পর্যন্ত যাবো কয়ঘন্টায়। বেলা বারোটায় এলাম।বিকাল হবে বুঝি এখানেই। কেননা শুনলাম ভেতরে দুটা মাত্র মিনিবাস। একটা এসি। একটা নন এসি। এত লোক কিভাবে তারা টানবে।
মন খারাপ হয়ে গেল। কিছু লোক দেখলাম বাঁকা পথে চেষ্টা করছে। বেশী পয়সা দেয়ার লোভ দেখাচ্ছে গেটম্যানদের। আমি তাদের পেছনে বেশ কিছু ক্ষণ ঘুর ঘুর করে ব্যর্থ মনোরথ হলাম। এদিক ওদিক ঘুরলাম। দেখলাম, পাশেই চিড়িয়াখানা টাইপ আয়োজন। ফ্লেমিঙ্গো পাখি সহ নানা পাখি খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছে। দশটাকা টিকেট কেটে ঢোকার ব্যাবস্থা। ঢুকলাম। এক ভদ্রমহিলা বললেন এইটা কিসের সাফারি পার্ক। এটা তো সিম্পল জ্যু।
-জ্যু মানে কি আপা।
-চিড়িয়াখানা। তিনি বিশদ জানালেন, ব্যাঙ্ককে সিঙ্গাপুরে মালয়েশিয়ায় যে সাফারি পার্ক সেখানে পাখি বাঘ সিংহ জিরাফ জেব্রা সব খোলা জায়গায়। মানুষজনকে মাইক্রোবাস, টয়ট্রেনে চড়িয়ে ঘুরিয়ে তা দেখানো হয়। নেপালের চিতোয়ান, ইন্ডিয়ার কানহার জঙ্গলে জীপ ও হাতিতে চড়িয়ে সাফারি করানো হয়।
শুনে মনটা খারাপ হল। আয়তনেইএটা এশিয়ার বৃহত্তম সাফারি কাজেকামে এখানে যে সিস্টেম , সেটা নাকি ঢাকা চিড়িয়াখানার মত ।হায় হায়। পাশেই বাটারফ্লাই পার্ক। খাচার মধ্যে প্রজাপতি। টিকেট কেটে তাও দেখলাম। ভদ্রমহিলা সঙ্গে নেই। থাকলে জানতে চাইতাম বাটারফ্লাইর জন্য ফরেনে কি ব্যাবস্থা। খোলামেলা জায়গায় থাকলে উড়ে টুড়ে যাওয়ার কথা কিনা।
অগত্যা গিয়ে বিশাল সেই লাইনে দাড়ালাম। কত ঘন্টা আর লাগবে। এই জবর সাফারি দেখে যাবই। আমি এত কষ্ট করে কি ফালতু চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছি।
আজব লাইন। লাইন ছোট হয়না। সামনের দিকে খালি বেড়ে যায়। সাফারি কর্তৃপক্ষের কোন দোষ নাই। আসল সমস্যা হল, দশ জনের একটা পরিবার; একজন দাঁড়িয়েছেন লাইনে।
বাকিরা মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেইনা ওই লাইনম্যান গেটের কাছে যাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল করছেন। সবাই এসে জুটছে। লাইন আর ছোট হচ্ছে না। যাই হোকÑকোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল না। কেননা বেশীর ভাগ লোক একই সিস্টেমে দাড়ানো। আমিসহ দুচার জন সিঙ্গেল ডাবল দাড়ানো। বেশ রোদ। তার মধ্যে ঝিরি ঝিরি পশলা বৃষ্টিও হচ্ছে। যেমন তাতানো রোদ। তাতে বৃষ্টির আভাস দেখলেই ভাল লাগছে। হাতে অবশ্য ছাতা এনেছি। অসুবিধা হচ্ছে না।
এখানেও পাবলিকের মধ্যে বিচিত্র সব যন্ত্রনা। এত বড় লাইন কেন। ঢাকা থেকে দেড় ঘন্টা দুরে এসেও কি ঢাকার ফকিরি শিশু পার্ক অভিজ্ঞতা সইতে হবে। আমার মন্তব্য নয়। পাব্লিক কমেন্ট। এখানেও থাই মালয়ী প্রসঙ্গ। খুব ভাল লাগল। ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর যায় নাই- দেশে এমন লোক বিরল মনে হল। একজন বললেন- ধুর ছাই। তার চেয়ে বাসায় যাই। ব্যাঙ্ককে কি সুন্দর সিস্টেম। হাজার হাজার লোক ঢুকছে- ঘুরছে । কোন লাইন নাই। সেখানে কত রকম শো। বার্ড শো। এিেলফ্যান্ট শো। সি লায়ন শো। কি সুন্দর সার্কাস। আর এইখানে মানুষ আর মানুষ। দেখার তো কিছু নাই।
আমি এদিক ওদিক তাকালাম। দেখার জিনিস আছে বটে। একটা ময়ুর দেখলাম। সেই যে লম্বা হয়ে লাফের ভঙ্গি করে দাড়িয়ে- নড়ে না । চড়েনা। পরে বুঝলাম। ওটা ময়ুর মুর্তি। হাতিও দেখলাম। নড়ে না। চড়ে না। জিরাফ দেখলাম। সেটাও নড়ে না চড়ে না। একজন আমাকে ফলো করছিলেন। বললেনÑ ভাইজান এইটা জ্যান্ত সাফারি না। এইটা জীবজন্তুর মুর্তির সাফারি।
আরেকজন প্রতিবাদ করলেন। বললেন, ভাই, দেশের জিনিস । এত অবহেলা করবেন না। আমাদেরও আস্তে আস্তে হবে। আমাদেরও নানারকম লায়ন শো, এলিফ্যান্ট শো হবে। একটু সময়
তো লাগবে। ট্রেনিং লাগবে। সবে তো শুরু। জায়গাটা নিছে বড় কইরা। আমরাও করতে পারবো।
ভাল লাগল লোকটার দেশপ্রেম দেখে।
লাইন তো ছোট হচ্ছে না। ঢিমে তালে এগুচ্ছি। শান্তনা দিলেন একজন। বললেন, ভাই বিদেশ গেলে তো লাইন দিয়ে সাফারি পার্ক, তুশোর মিউজিয়ামে ঢুকতে কষ্ট হয় না। দেশে আসলেই আমাদের যত বাহানা।
আমি এমনভাবে মাথা নাড়লাম, যেন বিদেশে কত গিয়েছি। আফটার অল, সমাজ বলে কথা।
একজন জানালেন, ওদিকে নাকি বোটিং এর ব্যাবস্থা আছে। মনোজ্ঞ আয়োজন। দুরে কোথায় জঙ্গলের মধ্যে টাইগার রেস্টুরেন্ট, লায়ন রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে বসে খাওয়া দাওয়া করা যায়। গ্লাসঘেরা ঘরে বসে। রেস্তোরার পাশে বাঘ সিংহ ঘুরে বেড়ায়।কান পেতে সবার কথা শুনছি।
আরেকজন বললেন, কথা ঠিক। তবে বাঘসিংহ দেখতে চাইলে দুরবীন নিয়ে আসতে হবে।
-কেন ভাই।
-বাঘ সিংহ তো কাছে আসে না। বাংলাদেশ দলের টাইগার ক্রিকেটার টাইপ বাঘ। ভীতু। বউরে কেউ কিছু কইলে হালুম হালুম করে। দেশের ইজ্জত বাচানোর সময় গেলুম গেলুম করে।
লাইন পেছনে অবিরাম বেড়ে চলেছে। সামনে ছোট হওয়ার নাম নাই।
কিন্তু দেখার চোখ থাকলে দেখার জিনিষের অভাব নাই। এই সময়ে দেখলাম। ক্যারিকেচারে নেমে পড়েছে। সেনাবাহিনীর এনডিসি, নৌবাহিনীর স্টিকার নেমপ্লেট অলা বেশ কয়েকটা জিপ। দুয়েকটা ভক্সি। সবগুলোর গায়ে সামরিক বাহিনীর ইজ্জতকা সাইন লাগানো। তারা বেশ ঘুরে ফিরে বেরুচ্ছে। ভেতরেসানগ্লাস পরা বিগ্রেডিয়ার, কর্নেল সাব, তাদের বিবি বালবাচ্চাও লাল নীল চশমা পরে বসে আছে। গাড়িগুলো লাইন ক্রস করে এদিক যায় । ওদিক যায়। লাইনের পাবলিকের গায়ের ওপর দিয়ে পারলে এদিক যায়। ওদিক যায়। বেশ ফুর্তি ফুর্তি ভাব। সাফারি পার্কে জ্যান্ত পশু পাখির অভাব এই ওয়ান টুস্টার গাড়ির বাসিন্দারা অবাধ বিচরণের মাধ্যমে বেশ মেটাতে লাগলেন। সবাই তাকিয়ে তাদের দৌরাত্ম দেখছে। কিছুক্ষনের মধ্যে তাদেরকে ঘিরে বেশ আজাবি কারবার শুরু হয়ে গেল। তারা পাবলিককেও বেশ আজাব দিতে শুরু করলেন। এই দৃশ্যাবলীর বিশদ বিবরণ রুচিকর নয়। কেবল আমি কিছু পাবলিক কমেন্ট এখানে একটু ভদ্রস্থ করে উদ্ধৃত করছি। যে যার অভিজ্ঞতা ও রুচি অনুযায়ী ধারনা করে নেবেন।
একজন বললেন, কারুর গাড়ি ঢোকার নিয়ম নাই। এইগুলারটা কেমনে ঢুকলো। দেশের আইন কানুন কি এইগুলোর জন্য না। এরা কি নিজেরে রাজা বাদশা ভাবে। পাবলিক খেপলে তো ঢিলাইয়া তাড়াইবে।
ভাগ্যিস! কেউ ঢিল দিল না। সেটা দিলে পুরা ভ্রমণই পন্ড হত। আরেকজন বললেন, না ভাই ঢিলাইয়েন না। পাশেই কেন্টনমেন্ট। সব আইয়া পড়বে। রীতিমত পাবলিক টকশো জমে উঠল।
আরেকটি কমেন্ট। এগুলার চাইতে তো ছাত্রলীগ, ছাত্রদলের ক্যাডার পান্ডারাও ভাল। তারা তো এইভাবে ঈদের দিন পাবলিকরে কোথাও জ্বালাইতেছে না। আর এরা পাবলিকের পয়সা বেতনভাতা-গাড়ি বাড়ি নিয়াও এখন আমজনতাকে ডিস্টার্ব দিচ্ছে।
ঠিক কইছেন ভাই। ডেমোক্রেসির এইটা মজা। নেতাফেতা-চ্যালারা জায়গা বুঝে মাস্তানি করে। দরকারের ছাড়া করে না। কিন্তু এইগুলা পলিটিক্স বোঝে না। আরে তোরা যদি নিজেগো দেশের নবাব বাদশা ভাবোসÑ এই হাজার হাজার লোকের মধ্যে আইসা ফুটানি মারস কেন। তোগো বউ পোলাপানও তো পাব্লিকের অভিশাপ কুড়াইতেছে।
-দেখেন ভাই এরা হইছে নির্বোধ। দেশ ,জনগনও নৌবাহিনী-সেনাবাহিনীর শত্রু। ফুটানি মারাইতেছে মাত্র ৪/৫টা গাড়ি। আর তাদের জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মহান ইমেজ হাজার হাজার মানুষের সামনে কেমনে ধুলায় লুটাচ্ছে। ।
-ঠিক কইছেন ভাই । দেখেন না, শামীম, নূর ইসলামের জন্য যেমন জননেত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। তেমনি কর্নেল তারেক মার্কা লোকের জন্য সেনাবাহিনী বিমানবাহিনীর ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। এ গুলাও ঠিক ওই টাইপের লোক। বঙ্গবন্ধু ঠিক করছিলেন। এগুলারে বাড়তে দিতে নাই। দিলেই ডান্ডার জোরে ফুটানি মারায়। আরে সেনাবাহিনীর ড্রেস আর স্টার খুলে নিলে এই ফুটানি কেমতে দেখাতি। খালি দেশ ও দেশপ্রেমিক বাহিনীর নাম খারাপ করস।
থাইল্যান্ডি সিঙ্গাপুরীরাও মন্তব্য করলেন। খুব বিরক্ত হলেন তারা। বললেন, এমন অনিয়ম দুনিয়ার কোথাও তারা দেখেননি। বুরকিনা ফাসোতেও না। থাইল্যান্ডে তো এখন আর্মি শাসন চলছে। সেখানে এখনও কেউ এমন সাহস করবে না। সেখানে কোন আর্মি অফিসার এমন অনিয়ম করলে কোর্ট মার্শাল হবে। চাকরি নির্ঘাত নট।
বুরকিনা ফাসো জিনিসটা কি! কোন দেশ মনে হচ্ছে। আফ্রিকায় নিশ্চয়ই।
মন্তব্যগুলো আমি যথাসম্ভব দিলাম। আশা করি সম্পাদক মহোদয় ফেলে দিবেন না। কেননা, মন্তব্যগুলো সংশ্লিষ্টদের জানা দরকার। এই মন্তব্য যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা বাহিনীর চোখে পড়ে, আশা করা যায়, তারা প্রতিবাদ না করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্ভাব্য এজাতীয় ভাবমূর্তিবিরোধী কর্মকান্ড থেকে বাহিনী-সদস্য-কর্মকর্তাদের বিরত রাখবেন।
বাঘসিংহের গেটে পৌছেও এদের দৌরাত্ম দেখলাম। এক স্টার ভেতরে ঢুকে গেছেন। একজন সাফারি কর্মকর্তার সাথে কথা হল। বললেন, স্থানীয় পোলাপান, রাজনৈতিক কর্মীদেরসমস্যা মেটাতে পেরেছেন। কিন্তু এদের জ্বালা মেটাতে পারছেন না। তিনি জানালেন, অনেক জেনারেল এসে লাইনে দাড়ান। আইন মেনে চলেন। কিন্তু কেউ কেউ ব্যাটম্যান, আর্দালিবউ পোলাপান প্লাস্টিক চেয়ারসহ সহ বাঘের সাফারিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। জোর খাটান। কঠিন সমস্যা। অনেক প্রশাসন কর্মকর্তা আছেন; তারাও অবৈধ সুযোগ সুবিধা চান। ভাবখানা এই বিশেষ সুবিধা না পেলে বউ শালীদের কাছে মান ইজ্জত থাকছে না। আইন না মানাতেই তাদের বাহাদুরি। পলিটিক্যাল লোকজনের প্রেশারের চাইতে এই আমলা-সেনা রাষ্ট্রকর্মচারিদের প্রেশার গ্রুপের দৌরাত্ম বেশী।
ভেতরে গিয়ে দেখলাম, একজন সেনা কর্মকর্তা জোর করে ঠিকই ঢুকে পড়েছেন। গেটে আরও অনেকে জোরাজুরি করছেন। নি¤œপদস্থ কর্মচারিরা তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। পাবলিকের নানা কটুক্তি সহ্য করেও তারা এই হৈহট্টগোল বাধিয়ে চলেছেন।
সব মিলিয়ে বেশ ভালই লাগল বাংলার সাফারি পার্ক। ভাল সংখ্যক দর্শনার্থী হচ্ছে। জানা গেল গত অর্থবছরে পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। লোকজন নানারকম দার্শনিক পরিকল্পনার কথাও বলছে। কেউ বললেন, রোপওয়ের ব্যাবস্থা করলে ভাল হত। কেউ বললেন, ঝুলন্ত রাস্তা; টয়ট্রেন করা হলে দেশের মানুষ সবাই আসবে। এখানে এসে উৎসব করবে। পাচ লাখ লোক নাকি এবার ঈদে বিদেশ ভ্রমণে রেগছে। তাদেও মধ্যে অনেকে যাবে না। কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশেই থাকবে।
অনেক বড় এই সাফারি পার্ক। হেটে ঘুরে দেখা সত্যিই কষ্টকর। বাস মিনিবাস মূল গেটেই রাখা যেতে পারে। সেসবে চড়ে সবাই পুরো পার্ক দেখবে। ভারতে নেপালে আছে হাতি জিপ। আমরা তেমন ব্যবস্থাও করতে পারি। আর অব্যবস্থা অনিয়ম যে কোন মূল্যে কঠিনভাবে দমন করতে হবে। কেননা, এসব অনিয়মে আমরা দেশের মানুষ নিজেদেরকেই গালমন্দ করি।