মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে কিছু অন্যায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। যার পরিণতি বিশ্বমানবতার জন্য মঙ্গল জনক হয় নি। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চরম লজ্জা জনক ভাবে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু পরাজয় বরনের আগে সঙ্ঘটিত করেছিল মারাত্নক গনহত্যা। লজ্জার বিষয় হচ্ছে, সেই মার্কিনরাই আবার মানবতা নিয়ে সবচেয়ে বেশী সরব। আজকে আমাদেরকে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপকর্মের সাক্ষী ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পর্কে জানা উচিত।
১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামিরা প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধে লড়াই করে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। এই যুদ্ধশেষে ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম - এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সংঘাত এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী।
১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি।এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন।
এই যুদ্ধে মানবতার কাছে সাম্রাজ্যবাদী শত্রু মারাত্নক ভাবে পরাস্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভিয়েতনাম ছিল জ্বলন্ত উনুন। ১৯৬৮ সালে নিক্সন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের নৃশংসতা বেড়ে যায়। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, যুদ্ধবিরোধী মার্কিন জনমত, মাই লাই হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা, বিশ্বব্যাপী মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ-নিন্দা ইত্যাদি কারণে আমেরিকানদের আর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে চরম মূল্য দিতে হয় এবং দেশে ফিরে যায়। পরে দক্ষিণ ভিয়েতনামি সৈন্যরা উত্তর ভিয়েতনামের কাছে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭৬সালে কমিউনিস্ট সরকার উভয় ভিয়েতনামকে একত্রিত করে। যুদ্ধে আমেরিকার নিহতের সংখ্যা ৫৮,০০০ ও আহতের সংখ্যা ৩,০৪,০০০। উত্তর ভিয়েতনামের নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানের চার দশক পরে ধারণা করা হয় ভিয়েতনামের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ যুদ্ধে ব্যবহৃত রাসয়নিকের বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছে।যুদ্ধের সময় উত্তর ভিয়েতনাম বাহিনীর গোপন আস্তানা ও রসদ ধ্বংস করার জন্য আমেরিকান সেনা বাহিনী এজেন্ট অরেঞ্জ নামে যে ডাইঅক্সিন কীটনাশক ছড়িয়েছিল তা ওই রাসয়নিকের মজুত থেকে ছড়িয়ে পড়ে দানাং-এর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।ওই ডাইঅক্সিনের বিষক্রিয়ায় ভিয়েতনামে জন্ম নিয়েছে বহু প্রতিবন্ধী শিশু।ব্যাপক চাপের মুখে আমেরিকা এখন ভিয়েতনামের ডাইঅক্সিন দূষিত এলাকার মাটি পরিষ্কার করার জন্য এক বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
তবে ভিয়েতনামের ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ মনে করছে শুধু মাটি দূষণ-মুক্ত করাটাই যথেষ্ট নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করা এবং প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ করে দেওয়াও আমেরিকারই দায়িত্ব।
তথ্য সুত্রঃমানব কন্ঠ ২১ জানুয়ারী ২০১৩ ইং , বিবিসি নিউজঃ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩