বাবা-মায়েরও বাড়ছে বয়স

Author Topic: বাবা-মায়েরও বাড়ছে বয়স  (Read 2451 times)

Offline shilpi1

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 135
    • View Profile
বাবা-মায়েরও বাড়ছে বয়স
« on: March 23, 2015, 12:02:17 PM »
একটা সময়ের পর আমরা নিজেদের কর্মজীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, কখনও কখনও ভুলে যাই, বাড়িতে আরও দু’জন ব্যক্তি রয়েছেন যাদের বয়সও বাড়ছে বৈকি!

বলছি, আমাদের পরম প্রিয় বাবা-মা’র কথা। ছোটবেলা থেকে জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত সব অর্জনের পেছনে রয়েছে বাবা-মা’র ভূমিকা। পড়ালেখার হাতেখড়ি থেকে শুরু করে সব কাজে উৎসাহ দেন তারা।

সময়ের পালাবদলে আমরা বড় হয়েছি, হয়ত কর্মজীবনেও প্রতিষ্ঠিত। পাশাপাশি তাদের বয়সও কিন্তু থেমে নেই। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় শরীরের নানান সমস্যা। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, আলজেইমার্স ইত্যাদি। এছাড়াও বয়স বাড়ার কারণে অনেকে হয়ে পড়েন ছোট শিশুদের মতো।

বাড়তে থাকে মানসিক চাহিদা ও একাকীত্ববোধ। তাই তাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে দরকার বাড়তি যত্ন, হাসিখুশি পরিবেশ, যোগ্য সম্মান ও সদয় ব্যবহার।
যদিও এখনকার দিনে কমবেশি সবাই ঘরের বাইরে কাজ করে। তবুও যতটুকু সম্ভব বাবা-মা’র প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

সময় দিন
দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকার ফলে যদিও আপনি ক্লান্ত, তবুও বাড়ি ফিরে বাবা-মা’র পাশে বসুন। জিজ্ঞেস করুন, তারা কেমন রয়েছেন। সারাদিনের খাবার ও ওষুধ খেয়েছেন কিনা। তাদের সঙ্গে গল্প করুন ও হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে তাদের পছন্দের খাবার এনে চমকে দিতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানান
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও বিশেষ কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে বাবা-মাকে সেটার সম্পর্কে জানান। তাদের বোঝাতে চেষ্টা করুন আপনার জীবনে তারা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ করার আগে তাদের অনুমতি নিন। এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বজায় থাকবে যে, তাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ও নেওয়ার ক্ষমতা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
কথা বলার আগে ভাবুন
বয়স্ক বাবা-মা’র সঙ্গে কোনো কারণে উত্তেজিত হবেন না। ধৈর্য্য ধরে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন। এমন কোনো কথা বলে বসবেন না যাতে তাদের কষ্ট হয়। কোনো বিষয় সম্পর্কে যদি ভুলে যাওয়ার কারণে বারবার একই প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে তাদের ওপর রাগ করা উচিত নয়। কখনও তাদের ভুলে যাওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।

ইতিবাচক ভঙ্গিতে না বলুন
কোনো কিছু চাইলে তার যদি নেতিবাচক প্রভাব থাকে তাহলে ইতিবাচক ভঙ্গিতে বুঝিয়ে বলুন, বিষয়টি তার জন্য খারাপ। যেমন, ডায়াবেটিস থাকাকালীন মিষ্টি খাবার খেতে চাইলে তাকে বুঝিয়ে বলুন, এটা তার শরীরের জন্য খারাপ। এক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন। যেমন- ফল, দুধ, ওটমিল বা জুস দিতে পারেন।

হাতখরচ
বাবা-মা বাড়িতে থাকলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ হাত খরচ তাদের দিন। এতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবোধ বজায় থাকবে।
খাবার ও ওষুধ
বাবা-মা’র জন্য ভালো কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করে আনুন। সঠিক সময়ে সেই অনুযায়ী খাবার খাওয়ান। খাদ্য তালিকায় তাদের পছন্দের কিছু আইটেম রাখুন। এছাড়াও পর্যাপ্ত প্রোটিন, পানি, ভিটামিন সি রাখুন। সময়মতো ওষুধ খাওয়ান বা প্রেসক্রিপশন দেখে আলাদা ওষুধের চার্ট তৈরি করে রাখতে পারেন। এতে ভুল হবে না।

সঠিক ঘর নির্বাচন
বাবা-মা’র থাকার জন্য সঠিক তাপমাত্রার ঘর নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখুন, ঘরের রঙ যেন হালকা ও আরামদায়ক একইসঙ্গে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢোকে। 
বিনোদন
এ বয়সে অনেকেই একাকীত্বে ভোগেন। ঘর থেকে বাইরে বের হতে চান না। লোকজন পছন্দ করেন না। বাবা-মা’র সঙ্গে সময় কাটান। টিভিতে তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ করে দিন। সকালে বাবা-মাকে নিয়ে হাঁটতে বের হতে পারেন। গল্পের বই পড়ে শোনান। এছাড়াও বারান্দায় ও ছাদে গাছ রাখতে পারেন। আর সেই গাছের যত্নের দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিন। প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে তাদের মন এমনিতেই ভালো থাকবে।
মূল্যবোধ
কেনাকাটায় যাওয়ার সময় বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করুন তাদের কিছু প্রয়োজন রয়েছে কিনা। অসুস্থ হলে পাশে গিয়ে বসুন, জিজ্ঞেস করুন, কেমন লাগছে।

যা যা করা উচিত নয়
অনেকে নিজের বাচ্চাদের দাদা-দাদির ঘরে যেতে বারণ করেন। এটা বাবা-মা’র মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। আবার অনেক সময় বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এলে অসুস্থ বাবা-মাকে সামনে আনতে চান না। এটা তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সুতরাং এসব করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, ইতিবাচক পদ্ধতিতে পৃথিবীর সব দূরহ কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব।