এপিলেপসি বা মৃগী রোগীর জন্য আনন্দময়, নির্ঝঞ্ঝাট ও গভীর নিদ্রা অতিগুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সময়মতো ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম শরীর ভালো থাকার জন্য খুব দরকার। এ ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। অনিয়মিত বা অল্প মাত্রায় ঘুমিয়ে অথবা সারা রাত জেগে থেকে, এপিলেপসি রোগী কখনো সুবিধা করতে পারে না। ধরা তাকে পড়তেই হয় কোনো এক ভাবে। এপিলেপসিতে এমনিতেই অনিদ্রার সমস্যা হয়। তা ছাড়া এ রোগে ব্যবহৃত ওষুধের জন্যও অনেক সময় ঘুম কমে যায়। আর ঘুম না হলে মৃগী রোগীদের অসুবিধা হবেই। নিদ্রাহীনতার সঙ্গে দুশ্চিন্তা, মানসিক অশান্তি ও অন্য কোনো সমস্যা থাকলে বিপদের সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজনে ঘুমের ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি সাবলীল নিদ্রার জন্য তাকে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হয়। যেমন_
* পরিমিত ঘুমের জন্য অন্তত সকালের নাশতার পর ছাড়া, সারা দিনে চা-কফি না খাওয়া, বিড়ি-সিগারেটসহ অন্য কোনো ধূমপান বা মাদক গ্রহণ না করা ও উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত থাকা।
* ভোরের নির্মল পরিবেশে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি ও ঘুমের আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা দরকার।
* ঝগড়া, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মানসিক অশান্তি ও অত্যধিক রাগ পরিহারসহ সমস্যামুক্ত থাকা। মৃগী রোগীদের চেহারায় সব সময় বিষণ্ন ও নিঃস্পৃহ ভাব ফুটে ওঠে। তাই তারা যথেষ্ট আন্তরিক হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তাদের সঙ্গে সহজ হতে পারে না অথবা ভুল বুঝতে পারে। এজন্য তাদের দরকার সব সময় হাসিখুশি ও প্রফুল্ল থাকা অথবা তার পছন্দের কোনো হিতকর কাজে সময় কাটানো।
* রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে সঠিক সময়ে বিছানা ছাড়া দরকার। রাতে অন্তত সাত-আট ঘণ্টা শান্তিতে ঘুমাতে পারাটা রোগীর ভালো থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন। ভালো ঘুম হলে রোগী নিজেই বুঝতে পারে বেশ ফ্রেশ লাগছে, শারীরিকভাবে নিরাপদ, কোনো অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই এবং সে তার দৈনন্দিন কাজগুলো সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে করে যেতে পারবে।
* এপিলেপসিতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম, রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব কার্যকর। চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রেটিসের অভিমত হচ্ছে, 'এপিলেপটিকরা রাতে প্রচুর ঘুমাবে ও দিবানিদ্রা থেকে বিরত থাকবে।' তারা রাত জেগে পড়াশোনা, গল্পগুজব, রোস্টার ডিউটি বা কাজ করে কখনো সুবিধা করতে পারে না। রাতের ঘুম নষ্ট হলে তাকে শারীরিক, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে অবহেলিত হতে হয়। রোগীও আস্তে আস্তে বুঝতে শেখে ঘুমসহ তার যাবতীয় কাজগুলো কিভাবে গুছিয়ে নিতে হবে। ডাক্তার বা অভিভাবকরা এসব কিছু মাথায় রেখে রোগীকে মাঝেমধ্যে গাইড করতে পারলে ভালো।
* রোগীকে গভীর ঘুমের মধ্যে তাড়াহুড়া করে ডাকা যায় না এবং বিশেষ প্রয়োজনে সে ঘুম থেকে উঠেই দ্রুত হাঁটতে বা দৌড়াতে গেলে খিঁচুনি উঠে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কাউকে ঘুম থেকে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে ওঠাতে, গায়ে হাত বুলিয়ে হালকাভাবে ডেকে তুলতে হয়। ঘুম থেকে উঠে রোগী কিছুটা সময় শুয়ে থেকে সুস্থির হয়ে বিছানা ছাড়াটা হিতকর ও নিরাপদ।
ঘুম হচ্ছে মস্তিষ্কের চার্জার। ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম একান্ত দরকার। স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য মৃগী রোগী অন্ধকারাচ্ছন্ন, অক্সিজেনসমৃদ্ধ ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে অশান্তি, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও ভয়ের ভাবনাগুলো ছুড়ে ফেলে পরিচ্ছন্ন, নরম ও আরামদায়ক বিছানায়, একটি স্বপি্নল ও আনন্দময় ঘুমের মধ্যে বিচরণ করতে পারলে এপিলেপসির যাবতীয় সমস্যা উপশম হয়ে সে স্বাভাবিক ও ছন্দময় জীবনের আনন্দে ভাসতে পারে।
http://www.24livenewspaper.com/site/?url=www.jjdin.com/ডা. এনইউ মাহমুদ
বাংলাদেশ এপিলেপটিক সোসাইটি