বিনা নোটিশে সারাদেশের ২০০০ মানুষের চাকরি অনেকটা নাই করে দিয়েছে বেসরকারিখাতের ডাচবাংলা ব্যাংক লিমিটেড(ডিবিবিএল)। অ্যাসিসট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার(এআরও) নামের ব্যাংকটির চুক্তিভিত্তিক এসব কর্মীকে এভাবেই চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে।
মাত্র এক ঘণ্টায় সারাদেশের ১৩৭টি শাখার নতুন পুরাতন (২ থেকে ৪ বছর ছিলেন এমন) প্রায় ২ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের দেওয়া হয়েছে ই-জোন নামের ৩য় প্রতিষ্ঠানের (থার্ড পার্টি) নিয়োগপত্র।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি শাখা ব্যবস্থাপকরা অধীনস্থ এসব কর্মীকে ডেকে এনে ইস্তফাপত্রে সই করে নেন এবং ই জোনের নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেন। জোরপূর্বক অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কর্মীরাই লাভবান হয়েছেন।
জানা গেছে, ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে এসব কর্মচারীদের তৃতীয় পক্ষ ‘ই জোন’ নামের প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিপত্রে দেখা গেছে, ডিবিবিএল থেকে চাকরি হারানো কর্মচারীরা আগের তুলনায় ৬ হাজার টাকা কম বেতন পাবেন।
একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসারের মোট বেতন ৪ হাজার টাকা। তবে কেউ যদি নির্ধারিত টার্গেট পূরণ করতে পারেন তবে তার বেতনে যুক্ত হবে আরও ৬ হাজার টাকা। এ হিসাবে বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে ডাচ বাংলায় এসব কর্মী বেতন পেয়ে আসছিলেন ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসিক ৭ হাজার, বাড়ি ভাড়া ১ হাজার, সম্মানী ভাতা ১ হাজার এবং মোবাইল ফোন বিল ১ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিবছর ব্যাংক নিয়মানুযায়ী উৎসব ভাতা পেতেন তারা। আবার টার্গেট (প্রতি অ্যাকাউন্টে অনাদায়ী ৫ হাজার টাকা এবং নতুন অ্যাকাউন্ট খুললে) পূরণ করতে পারলে মাস শেষে পেতেন অতিরিক্ত টাকা।
তবে কেউ যদি তিন থেকে চার মাস একটানা টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার চাকরি চলে যাবে বলে ডিবিএলের চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল।
একজন ভুক্তভোগী ই-মেইলে লিখেছেন, ২০১০ সালে নিয়োগের সময় বলা হয়েছিল ২ বছর পর পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ১০% জনবলকে মূল চাকরিতে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। গত জুলাই মাসে আমাদের যখন ভাইভা নেওয়া হয় আমরা আশা করলাম এবার হয়তো চাকরিটা কনফার্ম হবে।
কিন্তু এখন দেখছি চাকরির সাড়ে ৩ বছর পর ব্যাংক তো দায়িত্ব নিলোই না, বরং আমাদের অন্য কারও কাছে পাঠিয়ে দিল। এখন আমাদের সবার চাকরির বয়সই পেরিয়ে গেছে। সামনে কী হবে বুঝতে পারছি না।
বিষয় সম্পর্কে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবরেজের বক্তব্য জানার জন্য তার অফিস ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বসুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৩য় পার্টির কাছে চলে যাওয়ায় তারাই লাভবান হয়েছেন। তাদের আগে প্রভিডেন্ট ফান্ড ছিল না, গ্রাচুইটি ছিল না। ছুটি ছিলনা, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স ছিল না। এখন তারা এসব পাবেন। টার্গেট পূর্ণ করে বেশি টাকা পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। আর এটি করা হয়েছে সকলের সম্মতির ভিত্তিতেই। সবাইকে জানিয়েই।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য মোতাবেক কতজনকে এ পর্যন্ত স্থায়ী করা হয়েছে তা তিনি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।