সিদ্ধান্ত নিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩ গুণ

Author Topic: সিদ্ধান্ত নিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩ গুণ  (Read 1085 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
পরিসংখ্যানের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটা বছর দশেক আগেও অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু এখন তথ্যনির্ভর ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ’ বেশ প্রচলিত। আর তথ্য অনুসন্ধানের ব্যাপারটাও এখন বেশ সহজ। ইন্টারনেটে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে গুগল সার্চ দিলেই প্রাসঙ্গিক সব তথ্য এসে হাজির হয়।
সকালে ফেসবুকে একবার চোখ বুলিয়ে দিনের হালচাল সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেওয়া যায়। আর সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার কল্যাণে ইতিবাচক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটা এখন আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিসেবা ও আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেনট্যুর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ভবিষ্যৎ অনুমানমূলক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে তিন গুণ বেড়েছে। তবে নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় এসব প্রযুক্তির ব্যবহার যাচাই করে দেখলে ব্যাপারটা মোটেও আশ্চর্য মনে হবে না।
আমাজনের কথাই ধরা যাক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিনিসপত্র কেনাকাটার এই ওয়েবসাইটের লিংকে কতবার ক্লিক পড়ল, কী কী পণ্যের খোঁজ করা হলো, কোন কোন পণ্য বিক্রি হলো—ইত্যাদি তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাজন কর্তৃপক্ষ প্রায় নির্ভুলভাবে জেনে নিতে পারে একজন ক্রেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং তৎপরতার যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য। সেই তথ্য অনুযায়ী গুদামে পণ্যের মজুত হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়। ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের ওপর আমাজনের আত্মবিশ্বাস এখন এতটাই বেশি যে তারা এ জন্য বড় অঙ্কের অর্থও ব্যয় করে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ফ্লিপ-ফ্লপ নামের একধরনের হালকা স্যান্ডেলের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আগে থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার কারণে পণ্যটির স্থানীয় বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ফরমাশ পাওয়ার আগেই স্যান্ডেলটির মজুত বাড়ায়। এতে করে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম ম্যাশেবলের প্রধান প্রতিনিধি এবং নির্বাহী সম্পাদক ল্যান্স উলানফ এক নিবন্ধে লিখেছেন, ভবিষ্যৎ অনুমাননির্ভর বিশ্লেষণী তথ্যের সাহায্য নিয়ে ক্রেতার জন্য আমাজন কম খরচে জিনিসপত্রের অধিকতর সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে।
আমেরিকান ফুটবল নামে পরিচিত রাগবি খেলার একজন তারকা খেলোয়াড় অ্যালেক্স স্মিথ যখন সান ফ্রান্সিসকো ফর্টি নাইনার্স ক্লাব ছেড়ে ক্যানসাস সিটি চিফসে যোগ দেন, তাঁর সাফল্যের (বছরে প্রতি খেলায় অর্জিত পয়েন্ট) হার প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশ্লেষণমূলক তথ্য বিবেচনায় নিয়ে তিনি দল বদল করেছিলেন বলেই তাঁর ওই সাফল্য নিশ্চিত হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
স্বাস্থ্যসেবা খাতেও এ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ কাজে লাগছে। এর মাধ্যমে রোগীকে আলাদাভাবে বিশেষ সেবা দিতে পারছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যেমন তথ্য বিশ্লেষণে তাঁরা বুঝতে পারেন—কোন রোগী আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, কোন রোগীকে নতুন ধরনের সেবা দেওয়া জরুরি এবং বিশেষ সেবাকেন্দ্রে নেওয়া হলে কোন রোগী উপকৃত হতে পারেন। মেডালোজিক্স নামের একটি মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণের সহায়তায় রোগীদের দ্বিতীয় দফা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার বছরে প্রায় ৩৬ শতাংশ কমিয়ে এনেছে। তা ছাড়া রোগীরা এখন নিজ নিজ স্বাস্থ্য তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে নিবিড় সেবা পাচ্ছেন, যাতে সেই পরিচর্যার মান ও ফলাফল আগের চেয়ে বেড়েছে। কমেছে অপ্রয়োজনীয় খরচও।
তাই সব ক্ষেত্রেই অধিকতর কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবহার করা উচিত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই ব্যাপারটাকে তিন পা-ওয়ালা একটি টুলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। একটি পা হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নেপথ্যে বিদ্যমান শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার প্রতীক। দ্বিতীয়টি হলো, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ার সময়ের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দুটি বিষয় আগে থেকেই একজন মানুষের ওপর সম্মিলিত প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্লেষণমূলক তথ্য হচ্ছে টুলের তৃতীয় পা—যা কাঠামোটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ভান্ডারে বেশি তথ্য থাকা মানে সিদ্ধান্তটা অধিকতর শক্তিশালী হবে।
সূত্র: লাইভসায়েন্স।
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy