খাবারের উপাদান বা পরিমাণ না পাল্টে কেবল নির্দিষ্ট সময় মেনে খাওয়ার অভ্যাস করলে স্বাস্থ্যের বড় ধরনের কয়েকটা উপকারিতা পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে ওজন কমানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী একাধিক গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পরপর খাওয়ার অভ্যাস কঠোরভাবে মেনে চললে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় একধরনের পরিবর্তন আসে। আর ব্যাপারটা ঘটে একেবারে জিনগত পর্যায়ে। ফলে তখন ক্যালরি ঝরানোর চেষ্টা না করেই রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকারিতা পাওয়া যায়। আর এ প্রক্রিয়ায় ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সুযোগ রয়েছে।
খাবারের সময় নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা সীমিত রাখার সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য সর্বশেষ এক গবেষণায় অন্তত ২ হাজার ২০০ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাঁদের গড় বয়স ৪৭ বছর। গড়ে তাঁদের প্রত্যেকের শারীরিক ওজনের ভারসাম্য সূচক (বিএমআই) ২৮। অর্থাৎ, তাঁরা স্থূলকায়। তাঁদের রক্তের নমুনা এবং খাওয়ার সময়সূচির তথ্য নেওয়া হয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের অভাবকে ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। খাওয়ার আগে ও পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি মাত্রায় ওঠানামা করলে বোঝা জায়, রোগীর শরীর ইনসুলিনের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। খাবার থেকে ক্যালরি গ্রহণ করার জন্য এই ইনসুলিন নামের হরমোনটিই শরীরের বিভিন্ন কোষে সংকেত পাঠায়, যার মানে রক্ত থেকে কোষে শর্করা সরবরাহের জন্য অগ্ন্যাশয় থেকে আরও বেশি ইনসুলিন নিঃসরণ প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো, বাড়তি ইনসুলিন রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি কোষের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়। ফলে ক্যানসার কোষ তৈরি হতে পারে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর বেশি বেশি ইনসুলিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। পরিণামে রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই গবেষক দলের সদস্য এবং সান ডিয়েগোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন ম্যারিনাক বলেন, যেসব নারী রাতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকেন, তাঁদের রক্তে শর্করার পরিমাণ তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত থাকে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অবশ্য এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা খতিয়ে দেখছেন, খাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করার ফলে মানুষের শরীরের ওজনে কী কী পরিবর্তন হয় এবং ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমার কী কী ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ গবেষণায় তাঁরা এ ব্যাপারে আরও সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দুই বেলা খাওয়ার মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বিরতি নেওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। তাই শরীরের উপকারিতার জন্য এ রকম উপবাসে ক্ষতি নেই।