শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি ‘এ’ ‘বি’ ‘এন’ এবং ‘জেড’ এই চার ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করে থাকে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের অবস্থানের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কোম্পানির অবস্থার মধ্যে থাকে যথা সময়ে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা করা, সমাপ্ত বছর শেষে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা এবং লভ্যাংশের পরিমাণ।
এখন দেখা যাক কোম্পানির কোন অবস্থানের কারণে কোন ক্যাটাগরিভুক্ত হয়ে থাকে।
ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়ার আগের কথা:
প্রথমে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনে কোনো কোম্পানি প্রাথমিক গণ প্রস্তাব বা আইপিও করার সুযোগ পায়। এরপর আইপিও’র সব প্রক্রিয়া শেষ করার মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করে।
‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানি:
তালিকাভুক্তির পর নতুন লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিকে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নিয়মানুসারে পরবর্তী বছরে যথা সময়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। লভ্যাংশের পরিমাণের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে কোম্পানিকে শেয়ার লেনদেন করার সুয়োগ করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কতৃর্পক্ষ। কোম্পানিটি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে সেটিকে এ অথবা বি ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। আর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলে কোম্পনিটির জায়গা হয় জেড ক্যাটাগরিতে।
কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকলে তা বিতরণ হওয়ার পর তার ক্যাটাগরি বদল হয়। বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকলে শেয়ারহোল্ডারদের বিও হিসাবে ওই শেয়ার জমা করা হয়। আর নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকলে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি শেয়ারহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়। বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাব অনলাইন না হলে বিশেষ চেকের (ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট) মাধ্যমে তা পরিশোধ করা হয়, ব্যাংকে ওই চেক জমা দিলে বিনিয়োগকারী তার প্রাপ্য লভ্যাংশ পেয়ে যান। এভাবে লভ্যাংশ জমা ও বিতরণের পর কোম্পানি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জে। আর এ রিপোর্ট পাওয়ার পর পর কোম্পানিটিকে সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। যেমন-গত বছর আইপিওতে আসা বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস এন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করে। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডাররা ওই লভ্যাংশ অনুমোদন করে। কোম্পানিটি ২৪ ডিসেম্বর শেয়ারহোল্ডারদের একাউন্টে শেয়ার জমা করে ডিএসই ও সিএসইর কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। এর ভিত্তিতে ২৬ ডিসেম্বর কোম্পানিটিকে এন ক্যাটাগরি থেকে এ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয় ।
তালিকাভুক্তর পর প্রথম বছরে কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা না করলে সেটিকে বোর্ড সভা অনুষ্ঠানের পরবর্তী কার্যদিবসেই এন থেকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়। গত বছর্ (২০১৩) তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ফিন্যান্স শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। গত ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ওই সিদ্ধান্ত হয়। এর ভিত্তিতে ২৩ এপ্রিল স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেয় পরদিন থেকে অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হবে এন ক্যাটাগরির পরিবর্তে জেড ক্যাটাগরিতে।
‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি:
কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদেরকে ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দিলে ওই কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কোম্পানিটি আগে থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থেকে থাকলে লভ্যাংশের পরও সে ক্যাটাগরিতেই থেকে যায়। আর বি, এন অথবা জেড ক্যটাগরিতে থাকলে সেখান থেকে এ ক্যটাগরিতে স্থানান্তর হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ব্যাংকিং খাতের এবি ব্যাংক এ ক্যাটাগরির একটি কোম্পানি।
‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি:
কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদেরকে ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে ওই কোম্পানি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কোম্পানিটি আগে থেকে বি ক্যাটাগরিতে থেকে থাকলে লভ্যাংশের পরও সে ক্যাটাগরিতেই থেকে যায়। আর এ, এন অথবা জেড ক্যটাগরিতে থাকলে সেখান থেকে বি ক্যটাগরিতে স্থানান্তর হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে প্রকৌশল খাতের বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। এই কোম্পানি ২০১২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল। তার আগে এটি এ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি:
কোনো কোম্পানি বছর শেষে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারকে লভ্যাংশ না দিতে পারে তাহলে কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। যেমন: সম্প্রতি কে অ্যান্ড কিউ সমাপ্ত বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারকে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে এই কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে শেয়ার লেনদেন করছে।
‘জি’ ক্যাটাগরি :
আমাদের পুঁজিবাজারে জি নামে আরও একটি ক্যাটাগরি ছিল। গ্রিনফিল্ড কোম্পানি হিসেবে (উৎপাদন শুরু করেনি এমন কোম্পানি) আইপিওতে আসা কোম্পানিকে এ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে থাকা লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট মিল ২০০৩ সালে গ্রিনফিল্ড কোম্পানি হিসেবে আইপিওতে আসে। এ কোম্পানিটিকে তখন জি ক্যাটাগরিতে অন্তভুক্ত করা হয়। তবে এর পর আর কোনো গ্রিনফিল্ড কোম্পানি বাজারে আসেনি।
লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্ক:
ক্যাটাগরির সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় সম্পর্কিত কিছু বিষয় জড়িত। বর্তমানে এ, বি ও এন ক্যাটাগরির শেয়ার লেনদেন টি প্লাস টু পদ্ধতি নিষ্পন্ন হয়। অর্থাৎ শেয়ার কেনার তৃতীয় দিনে ক্রেতা তার শেয়ার পেয়ে যান। একইভাবে শেয়ার বিক্রির টাকা পেতেও তিন দিন সময় লাগে। জেড ক্যটাগরির ক্ষেত্রে টাকা বা শেয়ার পেতে প্রয়োজন ১০ কর্মদিবস। কারণ এই ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিষ্পন্ন হয় টি প্লাস ৯ পদ্ধতিতে।