প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা

Author Topic: প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা  (Read 1742 times)

Offline habib

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 112
  • Test
    • View Profile
প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা


সূচিপত্র

বিষয়                                           

ভূমিকা                                                 

সুন্নাতের পরিচয় ও গুরুত্ব                                 

সুন্নাতের পরিচয়                                         

সুন্নাতের উপর অবিচল থাকার গুরুত্ব

বিদআতের পরিচয় ও পরিণাম:

বিদআতের সংজ্ঞা                                         

বিদআতের পরিণাম                                       

খতম শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ                               

খতমে কুরআন                                           

খতমে ইউনুস                                           

খতমে বুখারী                                           

খতমে না-রী                                             

খতমে ইয়াসিন                                           

খতমে শিফা                                             

খতমে তাহলিল                                           

খতমে তাসমিয়াহ                                         

খতমে খাজেগান                                         

খতমে জালালী                                           

খতমে দুরুদে মাহি                               

ইখলাস দ্বারা কুরআন খতম                     

অভিজ্ঞতা বনাম ধর্মীয় বিশ্বাস                     

পরিশেষ                                         

গ্রন্থপঞ্জি তালিকা

                           

প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা

ভূমিকা

      সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামিনের, যিনি আমাদেরকে তাঁর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি

করেছেন। অতঃপর তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মদ rএর উম্মত বানিয়েছেন। দিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ

চিরস্থায়ী কিতাব আল-কুরআন। এ দুইয়ের মাধ্যমে আমাদেরকে সর্বদা ও সর্বত্র কার্যকর বিধানের

ধারক বাহক বানিয়েছেন। আমাদের উপর মহান আল্লাহর এসব নেয়ামত অপরিসীম। এক নবীর পর যখন

আরেক নবী নতুন দীন নিয়ে আসেন, এক কিতাবের পর যখন আরেক কিতাব নতুন কিছু বিধান নিয়ে

অবতীর্ন হয়, তখন স্বভাবত উম্মতের মধ্যেই দুই শ্রেণি হয়ে যেতে দেখে যায়। এক শ্রেণি নতুন নবীর

উপর ঈমান আনেন, ফলে তারা মুমিনই থাকেন। আরেক শ্রেণি নতুন নবীকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করে

বেঈমান বা কাফের হয়ে যায়। আল্লাহর কৃপায় সর্বশেষ নবীর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্যে আমরা এমন

পরীক্ষামুক্ত। না নতুন নবী আসবেন, না কোনো নতুন বিধান আসবে। নতুন কোনো দীন বা

পদ্ধতির অনুসরণ করব কি করব না এই ঝামেলায় আমাদেরকে কখনো পড়তে হয় না। যে নবীর মাধ্যমে

আল্লাহ তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন সেই নবীর উম্মত হতে পারা কতই বড় সোভাগ্যের কথা তা

পূর্বের উম্মতের ইতিহাস নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসবে। তাই আল্লাহ আমাদেরকে এই বড়

নেয়ামত প্রদানের জন্য আবারো তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।

      রাসূল r এর দীন, তাঁর তরিক্বা, তাঁর আদর্শ প্রচারে সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে যুগে যুগে একশ্রেণি

তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে ইবাদত সংক্রান্ত যেকোনো খুটিনাটি বিষয়ে রাসূল r এর আদর্শ

আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এখন আমাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র তাঁর রেখে যাওয়া দীনের অনুসরণ। দীন পালনে

তাঁর পদ্ধতির অনুসরণ। সালাত, যাকাত, সওম, হজ্জ, তেলাওয়াত দো‘আ, দুরূদ, যিকর সর্বক্ষেত্রে তাঁর

রেখে যাওয়া পদ্ধতির অনুসরণ অনূকরণই একজন মুমিনের কর্তব্য। এমন কোনো ইবাদত বা নেক

আমল নেই যেখানে তাঁর আদর্শ নেই। ইবাদত সংক্রান্ত সব বিষয় বিবেক কর্তৃক নির্ধারণের উর্ধ্বের

বিষয়, যা একমাত্র ওহীর মাধ্যমেই জানা যায়, জ্ঞানের শেষ সীমা থেকেই ওহীর সুচনা, সুতরাং তাঁর

আদর্শ,পদ্ধতি, উদ্দেশ্য যেখানে নেই তা ইবাদত বা নেক আমল বলে গণ্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অনেক দিন থেকেই মনে প্রশ্ন ছিল যে, কুরআন তেলাওয়াত একটি নেক আমল, হাদীস চর্চা একটি নেক

আমল। অনুরূপ দো‘আ, দুরূদ, যিকর সবই নেক আমল। তাই এগুলোর মাঝে

পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা, অথবা এগুলোকে রাসূল r এর উদ্দেশ্য বর্জিত

অর্থাৎ তিনি এগুলোকে যে উদ্দেশ্যে করেন নি সে উদ্দেশ্যে করার সুযোগ থাকে কীভাবে? আমাদের

সমাজের প্রচলিত ‘খতম’ কি এর ব্যতিক্রম? খতমের নামে রাসূল r এর সুন্নাত পদ্ধতির ব্যত্যয়

ঘটানো, তিনি যে উদ্দেশ্যে এগুলো করেন নি তা করা কতটুকু সিদ্ধ? আল-হামদু লিল্লাহ, দেখা যায়

অনেক প্রজ্ঞাবান আলেম যারা যুক্তির উর্ধ্বে রাসূল r এর সুন্নাতকে স্থান দেন, পূর্ণাঙ্গ সুন্নাতের

অনুসরণের সর্বদা চেষ্টা করেন, তারা সব সময়ই এসবের বিরোধিতা করে আসছেন। বাংলাদেশে এদের

মাঝে অন্যতম বিশিষ্ট মুফতি, সবার কাছেই যার সুন্নাতের পাবন্দির কথা প্রসিদ্ধ, মুফতি ফয়জুল্লাহ

রাহ.-আল্লাহ তাকে মাগফেরাত ও রাহমাত দিয়ে ঢেকে নিন- তিনি সর্বদা এসবের কঠোর বিরোধিতা

করতেন। তাঁর রচিত কাব্যের কিতাব ‘পান্দে নামাহ খাকী’তে প্রচলিত খতম সম্পর্কে একটি পাঠ

লিখেছেন, যাতে সর্বপ্রকার খতম বিদ‘আত ও সুন্নাহ বহির্ভূত আখ্যা দিয়ে এসব বিদ‘আত কুসংস্কার

পরিহার করে সুন্নাতকে আকড়ে ধরার নসীহত করেছেন।[1] তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ‘হামিউস্-

সুন্নাহ’ মেখল, চট্টগ্রামে অধ্যয়ন থেকেই মূলত সুন্নাত এবং সুন্নাতের ধারক আলেমদের প্রতি মহব্বত

এবং বিদ‘আতের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। আসাতিযায়ে কেরাম সব সময় তাঁর একটি মূল্যবান নসীহত

শুনাতেন। নসীহতটি ছিল,

‘‘কোন পীরের কথা ও কর্ম দলীল নয় * হক্ব বল, আহমদ এর কর্মকে ধর।’’

      যদিও শয়তানের ধোঁকায় বা না জেনে অনেক সময় সুন্নাত বিরোধি বিদআতি কর্মে লিপ্ত হয়ে যাই।

আল্লাহর কাছে তার জন্যে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করি।

       সুন্নাহ বহির্ভূত এসব খতম পদ্ধতির প্রতি অনীহা থাকা সত্বেও অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতা বা

পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে এসবের মধ্যে জড়িয়েছি। জড়িয়ে থাকার কারণে এসবের আরো অনেক না-

জায়েয দিক সামনে আসলে দিন দিন এগুলোর প্রতি আরো বেশি অনীহা ও সাধারণ জনগণের অজ্ঞতার

উপর আফসোস জন্ম নেয়। সহজভাবে সুন্নাহর পদ্ধতিতে নেক আমল পালন করা ছেড়ে দিয়ে অযথা এসবে

লিপ্ত হয়ে নিজের সময়, টাকা পয়সা কেন ব্যয় করি? এতে আমার কী লাভ? আমার অজ্ঞতার কারণে এক

গোত্রের দুনিয়াবী কিছু স্বার্থ অর্জন হচ্ছে, এই যা। এই কি আমার চাওয়া পাওয়া? একে কি আমি

একবারও নবীর সুন্নাতের সাথে মিলিয়ে দেখেছি? আমাদের এসব কর্ম কতটুকু গ্রহণযোগ্য এই কথাটি

উপলব্ধি করার জন্য এ বিষয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা দীর্ঘ দিন থেকে লালন করে আসছিলাম। সর্বশেষ মহান

আল্লাহর ইচ্ছায় এই ক্ষুদ্র রচনাটি লিখতে সক্ষম হয়েছি। এতে যা কিছু ভাল সবই আল্লাহর পক্ষ

থেকে, আর যা মন্দ সব আমি অধমের। এতে কিছু মানুষের উপকার হলে এটাই আমার স্বার্থকতা। এ বিষয়ে

সামান্য হলেও আলোচনা করতে পারায় আবারো আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 হাদীসে রয়েছে : ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনি সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

করেনি।’’[2] তাই সর্বপ্রথম আমার পিতার জন্য দো‘আ করি, আল্লাহ যেন তাকে মাগফিরাত ও রাহমাত

দ্বারা বেষ্টন করে নেন। যার সর্বাত্মক চেষ্টার ফলেই হয়ত আল্লাহ তাঁর রহমতে দ্বীনি ইলমের সাথে

নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখার তওফিক্ব দিয়েছেন। যিনি দীর্ঘ দিন সরকারী মাদ্রাসায় হাদীসের খেদমাত

"نیست حجت قول و فعل ھیچ پیر *  قول حق گو فعل احمد را بگیر "

করলেও আমাকে শুধু এজন্য কওমি মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন যাতে করে আমার মাঝে ইলমি দক্ষতা ও

সুন্নাতের পাবন্দি এই দুটি জিনিস অর্জিত হয়। জানি না তাঁর এ আশা কতটুকু কার্যকর হয়েছে। আজ তিনি

জীবিত থাকলে এই ক্ষুদ্র মেহনতটি দেখলে হয়ত অত্যন্ত খুশি হতেন। আল্লাহ যেন এই খেদমাতটুকু ক্ববুল

করেন। ক্ববুল হলে হাদীসের ভাষায় তিনি অবশ্যই এর ছওয়াবের অংশ পাবেন।

এরপর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আমার সকল উস্তাদদের যাদের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফলেই আমার

মাঝে যেটুকুই হোক ইলমের বীজ বপন হয়েছে। তাদের ইলমি অনুদানের সাথে সাথে বিভিন্ন জনের আরো

বিভিন্ন ধরণের অনুদান রয়েছে, ছোট পরিসরে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই। এক কথায় জীবিত

সবার কৃতজ্ঞতা, দীর্ঘ বরকতময় হায়াত কামনা এবং মৃতদের জন্য রাহমাত ও মাগফিরাতের দো‘আ

করছি।

একজনের নাম নিলেই আরেকজনের অবমূল্যায়ন নয়, এর আলোকে যার নাম উল্লেখ না করে পারছি

না, তিনি হলেন আমার উস্তায মুহতারাম মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া। যার ইলমি সহ বিভিন্ন অনুদান

আমার রক্তের প্রতিটি কণায় কণায়। তাঁর ঋন পরিশোধ করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।

দ্বীনি ইলমের কিঞ্চিত যা কিছুই অর্জন করেছি তার সিংহভাগই মূলত তাঁর সাথে দীর্ঘ দিনের সুহবতের

ফসল বলে মনে করি। হক্ব বোঝার পর কারো দোহাই দিয়ে এক ইঞ্চি না সরার চেষ্টা মূলত তাঁরই

দীক্ষা। আরো কিছু লিখার ইচ্ছা থাকলেও এ কথাগুলো লিখতেই চক্ষু ছলছল করায় আর লিখতে পারছি

না। আশাকরি তিনি আমার এই ক্ষুদ্র রচনা দেখে আনন্দিত হবেন এবং এটিকে আমার মাঝে তাঁর নিজের

দীক্ষার প্রকাশ মনে করে আমার জন্য দো‘আ করবেন। দো‘আ করি আল্লাহ তাঁর হায়াতকে বরকতময়

করে তুলুন। জাতিকে তাঁর থেকে উপকৃত হওয়ার ধারাবাহিকতা দীর্ঘ করে দিন।

রচনাটি লিখার ক্ষেত্রে আরো যারা উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে সাহস দিয়েছেন তাদের সবার শুকরিয়া

জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে মাওলানা আব্দুল্লাহ মানসুর ও আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছাত্র হাফেজ

মাওলানা ইয়াহ্ইয়া রচনাটির প্রুফ দেখার কষ্ট বরণ করায় তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে সাথে তাদের

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাদেরকে জাযায়ে খাইর দান করুন।

রচনাটি লিখতে হাদীসের ক্ষেত্রে একমাত্র সহীহ হাদীসের উপরেই নির্ভর করা হয়েছে। দু-একটি হাসান

পর্যায়ের হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যা মুহাদ্দিসীনে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য। দ‘য়িফ বা দুর্বল

কোনো হাদীসের উপর নির্ভর করা হয় নি.
« Last Edit: June 16, 2015, 04:33:58 PM by habib »
Md. Habibur Rahman
Officer, Finance & Accounts
Daffodil International University (DIU)
Corporate Office, Daffodil Family
Phone: +88 02 9138234-5 (Ext: 140)
Cell: 01847-140060, 01812-588460