হ্যাঁ এটা পাপ! আর্জেন্টিনার জন্য এটা আসলেই পাপ। কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচে ৬০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ফেবারিট তকমা নিয়ে আসা আর্জেন্টিনা ২-২ গোলে ড্র করল প্যারাগুয়ের সঙ্গে। ম্যাচ শেষে তাই আর্জেন্টাইন কোচের কণ্ঠে সহজ সরল স্বীকারোক্তি ‘আমরা যা করেছি তা পাপের পর্যায়ে পড়ে।’
শেষ বাঁশি বেজেছে কি বাজেনি, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে টানেলের দিকে হাঁটা দিলেন জেরার্ডো মার্টিনো। রাগটা কার ওপর? নিজের শিষ্যদের ওপর? নিজের সাবেক শিষ্যদের ওপর? নাকি নিজের ওপরেই?
এই প্যারাগুয়ের কোচ ছিলেন তিনি। টানা পাঁচ বছর। গতবার কোপার ফাইনালেও তুলেছিলেন প্যারাগুয়েকে। আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া লুকাস ব্যারিয়সকে তিনিই প্যারাগুয়ের জার্সি তুলে দিয়েছেন। আর আর্জেন্টিনায় নাড়ি পোঁতা সেই ব্যারিয়সই ৮৯ মিনিটে গোল করে আর্জেন্টিনার বুকে শেল বেঁধাল। আরও একবার চাপের মুখে রক্ষণ ভেঙে পড়ার চিরাচরিত দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন আলবিসেলেস্তাদের। বার্সার কোচ হিসেবেও নিজের রক্ষণ-কৌশলের দুর্বলতার জন্য ভুগে এক মৌসুমেই ইউরোপের ক্লাব ফুটবলকে ‘টাটা’ বলে দিয়েছিলেন মার্টিনো। অথচ পূর্বসুরী আলেসান্দ্রো সাবেলা এই জায়গায় দারুণ উন্নতি এনে দিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনাকে গত বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছে তাদের রক্ষণ।
রক্ষণাত্মক ফুটবল আর্জেন্টিনার পক্ষে কখনোই খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু ফুটবলীয় বাইবেলের প্রথম কথাই হচ্ছে, ‘আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, কিন্তু রক্ষণভাগ এনে দেবে শিরোপা।’ প্যারাগুয়ের একের পর এক আক্রমণে আর্জেন্টিনার যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, যেকোনো সময় এক গোলের লিড ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা, মার্টিনো তখন তাঁর দুই তারকা স্ট্রাইকারকে ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ করে দিলেন। রক্ষণ আর মাঝমাঠকে অটুট করার বদলে নামালেন তেভেজ আর হিগুয়েইনকে। মাঝমাঠে দুর্দান্ত খেলা হাভিয়ের পাস্তোরেকে তোলার ফল মিলল হাতেনাতে। মাঝমাঠ বলে আর কিছুই থাকল না আর্জেন্টিনার। সেই সুযোগে প্রথম এক ঘণ্টা রক্ষণাত্মক খেলা প্যারাগুয়ে প্রতি মিনিটে একটি করে আক্রমণ শানাল আর্জেন্টিনার বক্সে। ‘পাপ’ তো মার্টিনোও কম করেননি!
অথচ প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার এক তরফা খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, প্যারাগুয়েকে কয় গোলে না উড়িয়ে দেবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের কয়েক মিনিট পরেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। মার্টিনোও স্বীকার করেছেন, ‘প্রথমার্ধে যে দলটা খেলেছে আর দ্বিতীয়ার্ধে যে দলটা খেলেছে, দুটো যেন আলাদা দল।’ বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই খাদে পড়েছে আর্জেন্টিনার জয়-বাস, ‘আমরা দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি, আর সেই সুযোগেই ওরা ৪-৫টি সুযোগ তৈরি করে সমতা ফেরানোর।’
অধিনায়ক মেসি কাল খেলেছেন দুর্দান্ত। একবার তো মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে একেবারে গোললাইনের প্রান্ত থেকে হাফ ক্রস হাফ শট নিলেন। কেউ আলতো টোকা দিলেই গোলটা হয়ে যায়। একবার তাঁর ডান পায়ের চকিত শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন সিলভা। জাস্তো ভিয়ারের চোটে হুট করে একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন পাঁচ পাঁচটি দুর্দান্ত সেভ করে। অবশ্য আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরোও দুবার অসাধারণ সেভে বাঁচিয়েছেন দলকে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকের রাতটা তাই ভালো কাটল না লিওনেল মেসির। অবশ্য আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলছেন, পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। সামনে উরুগুয়ে। গতবার এই উরুগুয়ের কাছেই সেমিতে হেরে ছিটকে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির জন্য সুখবর, তাঁর বার্তা সতীর্থ সুয়ারেজ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই এবারের কোপায়।
বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় হবে ম্যাচটি।