গাছগাছালি মূলত এই মানুষের বন্ধু। মানুষ বিভিন্নভাবে উপকার পায় এর দ্বারা। কিন্তু সবাই কি এই উপকার পেয়ে থাকে? অবশ্যই না। পৃথিবীতে এমন সব গাছ আছে যা কিছু কিছু পোকামাকড় ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এর মাঝে একটি হল “ভেনাস ফ্লাইট্রেপ”(Venus Flytrap)। এটি যে পোকামাকড়ের জন্য প্রাণঘাতি, তা এই আলোচনার মাধ্যমেই জানতে পারবেন।
ভেনাস ফ্লাইট্রেপ মূলত একধরনের মাংশাসী উদ্ভিদ। এরা মূলত ৩০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। এরা মূলত গ্রীষ্মপ্রধান উদ্ভিদ না। কিন্তু শীতের পরে বসন্ত কালেই এদের ফুল ফুটে থাকে। পরে পাতা গজায়। পাতাগুলো মূলত ভূমির সমান্তরালে কিংবা ৪০-৬০ ডিগ্রি কোণে থাকে। এদের পাতাগুলো তখন ঝিনুকের খোলসের মত ছড়িয়ে যায়।
পত্রখন্ডের মাঝে মধ্যশিরা ও থাকে। পত্রখন্ড দুটির দৈর্ঘ্য ৩-১০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এর ভেতরের তল সাধারণত লাল হয়। খন্ডগুলোর বাইরের চারপাশ অসংখ্য শক্ত, সূচালো শুযঙ্গ থাকে। যাদেরকে সিলিয়া বলে। প্রত্যেকটি খন্ডের ভিতর ৩ টি ট্রিগার হেয়ার থাকে। এগুলোই মূলত ফাঁদ যা পোকার জন্য জীবণঘাতি অস্ত্র। একদিক থেকে ভাবলে গাছগুলো বেঁচে থাকার জন্য পোকা শিকার করে। কিন্তু এটা ভয়াবহ হয় মূলত পোকামাকড়ের কাছে।
ভেনাস ফ্লাইট্রেপের পাতার লাল অংশে সামান্য পরিমাণ মধু থাকে। এগুলো আহরণের জন্য বেশির ভাগ সময়ই মৌমাছিরা আসে। এরা প্রথমে এর আশেপাশের মধু আহরণ করে। পরবর্তিতে এরা সিলিয়া বেয়ে ট্রিগার হেয়ারের কাছাকাছি যায় যেখানে বেশির ভাগ মধু থাকে। এখানে যাওয়ার পর একটানা দুই বার ট্রিগার হেয়ারে আঘাত করলেই ফাঁদটি স্বয়ংক্রিয় হয় এবং পত্রখন্ড একসাথে মিলে যায়। এবং সিলিয়াগুলো পরস্পর মিলে বের হওয়ার জায়গা বন্ধ করে দেয়। এতে করে মৌমাছি বা পোকারা এতে আবধ্য হয়ে যায়।
ফাঁদের দরজা বন্ধ হওয়ার পর এর মাঝে একধরণের তরল পোকাটিকে ডুবিয়ে দেয়। যা একপ্রকার পরিপাক সাহায্যকারী উৎসেচক পদার্থ এতে করে পোকাটির নরম অংশ গলতে থাকে যা উদ্ভিদটি গ্রহণ করে। ৮-১০ দিন পর এর শক্ত অংশ ব্যাতিত সব নাইট্রোজেন গঠিত তরল হয় যা উদ্ভিদটি শোষণ করে ও পরবর্তিতে ফাঁদটি খোলে যায় ও পোকার শক্ত অংশ বের হয়ে যায়। এই ফাঁদ মূলত উদ্ভিদটি পুনরায় পেতে রাখে যা ৩-৬ বারের মত পোকা জীর্ণ করতে সক্ষম।
চাষ পদ্ধতিতে এসব গাছের মূলত প্রথমে বিজ বপন করার পাঁচ বছর পর পরিপূর্ণ হয়। এগুলো প্রায় ২০-৩০ বছর বাঁচে। ফাঁদগুলো জন্ম্ নেওয়ার পর ৪-৫ মাস সুপ্ত থাকে ও পরবর্তিতে বসন্তকালে এরা উন্মক্ত হয়। তাছাড়া এরা ১৪ ঘন্টা সূর্যের আলো পছন্দ করে। কারণ এদের বাসস্থল এমনিতেই পুরাতন হালকা ভেজা নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস গঠিত ভূমিতে। এদেরকে উত্তর আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিন কারোলিন এলাকায় পাওয়া যায়।
সূত্র – উইকিপিডিয়া ও কিছু ওয়েব সাইট।