পিএইচডি ফান্ডের জন্য আবেদন বিষয়ক তথ্য:
বিজ্ঞানী গাট্রুড বি এলিয়ন (Elion) পিএইচডির জন্য ১৫টি আবেদন করেছিলেন। তাঁর দুর্ভাগ্য যে, একটি আবেদনেরও সাড়া পাননি। আত্মপ্রত্যয়ী এই মানুষটিই ১৯৮৮ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। এমন উদাহরণ আরও দেওয়া যাবে। অর্জনের পথটাই কণ্টকাকীর্ণ। সেখানে চেষ্টাই সম্বল। সুতরাং আপনি যদি পিএইচডি ফান্ডের জন্য আবেদন করে ক্লান্ত হয়ে যান, গা ঝারা দিয়ে এখনই আবার শুরু করুন।
অধ্যাপকদের মেইল করছেন কিন্তু তারা উত্তর দিচ্ছেন না, তাই তো? অথবা, উত্তর দিলেও বলছেন, কোনো ফান্ড নেই, পজিশন নেই। এটা খুবই সাধারণ চিত্র! এমনটি আপনার, আমার, সবার ক্ষেত্রেই হচ্ছে। হয়তো দু-একজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন। তাহলে কী করা যায়? আবেদনের সময় কিছুটা কৌশলী হয়ে দেখা যেতে পারে। যা অনেকের ক্ষেত্রেই কাজে দিয়েছে। হয়তো আপনার জন্যও সহায়ক হবে।
ক) গণহারে সকল অধ্যাপকদের একই মেইল পাঠানো বন্ধ করুন। অভিজ্ঞ অধ্যাপক এগুলো সহজেই বুঝতে পারেন। ফলে এসব মেইল পড়েন না।
খ) আপনার প্রফেশনাল-প্রাতিষ্ঠানিক মেইল আইডি থাকলে সেটা ব্যবহার করুন (gmail, yahoo ইত্যাদি নয়। এসব আইডির মেইল তাঁরা খুব গুরুত্ব দেন না। কখনো কখনো এসব মেইল ওপেনও করেন না)।
গ) যে অধ্যাপকের গ্রুপে আবেদন করবেন, সে গ্রুপের গবেষণার বিষয়বস্তু (Research Focus/Field) সময় দিয়ে পড়ুন। খুব ভালো হয় সাম্প্রতিক প্রকাশিত আর্টিকেল পড়লে।
ঘ) অনেক সময় তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত আর্টিকেল পড়ে তাকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। আর ধন্যবাদ দেওয়ার মাধ্যমেই গবেষণা কাজটির প্রশংসা করে দু-একটি প্রশ্ন (যৌক্তিক ও আকর্ষণীয়) করতে পারেন। উল্লেখ করতে পারেন যে, আপনি এই বিষয়টি ভালো বোঝেন ও এ বিষয়ে কাজের আগ্রহ অনেক। যোগাযোগের সূচনা এভাবেও করা যেতে পারে।
ঙ) রিসার্চ প্রপোজাল লিখতে হলে, একটি গবেষণা গ্রুপের সাম্প্রতিক প্রকাশিত আর্টিকেল পড়ে সেই আলোকে কিছু করতে চাওয়ার প্রস্তাব দেওয়াই উত্তম। প্রতিটি মানুষ তার সৃষ্টিকর্মে মোহিত (Obsessed)। যে যে বিষয়ে কাজ করে সেটার ওপর প্রপোজাল লিখুন। প্রপোজাল ১-২ পৃষ্ঠার বেশি না করাই উত্তম। গুরুত্বপূর্ণ ডায়াগ্রাম, ফিগার ব্যবহার করতে হবে বেশি করে। সেখান থেকেই যেন এক-নজরে বোঝা যায় কী বুঝাতে চাচ্ছেন।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীতচ) মেইল আকারে বড় লিখবেন না। মেইলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এটাচ করে দেওয়াই উত্তম। ফাইলের জন্য পিডিএফ ফর্ম ব্যবহার করা ভালো।
ছ) আপনার পাবলিকেশন থাকলে সিভিতে সেগুলোই আগে উল্লেখ করুন। পাবলিকেশনের সঙ্গে DOI (Digital Object Identifier) নাম্বার দিন। সেটা থাকলে আর্টিকেল খুঁজে পাওয়া খুব সহজ (
https://dx. doi. org/)। (যদি আপনার আর্টিকেলের DOI নাম্বার না থাকে, তাহলে সেটা আন্তর্জাতিক মানের আর্টিকেল নয়।জ) একজন অধ্যাপক আপনার সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে চাইবেন। ফলে সে পরিচিতদের কাছ থেকে আপনার ব্যাপারে শুনতে চায়। সে জন্য রেফারেন্স লেটার গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে রেফারেন্স লেটার হয় গোপনীয় (Confidential)। আমাদের দেশে সবাইকে একটি করে হাতে দিয়ে দেওয়া হয় (আমাদের দেশে সব ছাত্রই অত্যন্ত মেধাবী ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ থেকে বিরত)। চেষ্টা করুন তুলনামূলক পরিচিত গবেষকের কাছ থেকে রেফারেন্স লেটার নিতে।
ঝ) আপনার থিসিস থাকলে সেই থিসিস থেকে একটি অ্যাবস্ট্রাক্ট তৈরি করুন (এক-দুই পৃষ্ঠা)। বাংলাদেশের এমএস থিসিসের ভলিউম (অন্তত বিজ্ঞানে), পৃথিবীর বহু দেশের পিএইচডি থিসিসের দ্বিগুণ বা ত্রিগুণ। একজন অধ্যাপকের এই থিসিস পড়ার সময় নেই। অধ্যাপক যদি চান, তাহলে পুরো থিসিস পাঠান।
ঞ) মাতৃভাষা ইংরেজি, এমন দেশের অধ্যাপকদের কাছে মেইল লিখতে গেলে ইংরেজির ভাষাগত বিষয়ে সতর্ক থাকা ভালো।
ওপরের বিষয়গুলো আপনার প্রস্তুতির জন্য হয়তো সহায়ক হবে কিন্তু প্রস্তুতিটা আপনাকেই নিতে হবে। শুভ কামনা!
(লেখক ডক্টরাল গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন। ই-মেইল: redoxrouf@yahoo.com)
Asit Ghosh
Senior Lecturer
Textile Engineering Department
Daffodil International University