শুধু সেহরি খেলে ও নামাজ পড়লেই রোজার উদ্দেশ্য হাসিল হয়না

Author Topic: শুধু সেহরি খেলে ও নামাজ পড়লেই রোজার উদ্দেশ্য হাসিল হয়না  (Read 1337 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
অনেকেই কেবল পানাহার ছেড়ে ভাবছেন রমজানের হক আদায় হয়ে যাচ্ছে। রোজার আসল উদ্দেশ্য হাসিল করছি। বিষয়টি আসলেই তেমন? অথচ রোজা অবস্থায় দিনরাত পরনিন্দা, অপরের দোষচর্চা, অহেতুক গল্পগুজবে মত্ত থেকে রোজার দিনগুলো পার করছে কেউ কেউ। কেউ বা আবার লোক দেখানো রোজা, নামাজ, তেলাওয়াতে গড়াচ্ছে সময়। বস্তুত রোজার আসল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকা; খারাপ-অশ্লীল কথা মুখে উচ্চারণ না করা এবং সর্বপ্রকার অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা। কারণ সত্যিকারের রোজা তা-ই, যাতে এ ধরনের গর্হিত কর্মকাণ্ড শোভা পায় না। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘রোজাদার ব্যক্তির জন্য রোজামুখে কোনো খারাপ কথা উচ্চারণ না করা উচিৎ। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া কিংবা গালমন্দ করে, তাহলে রোজাদার বলবে- আমি রোজা রেখেছি। তোমার কোনো খারাপ কথার উত্তর দেবো না।’ রাব্বে কারিম ইরশাদ করেন- ‘রোজা রাখার দ্বারা অন্তর পবিত্র ও কলুষমুক্ত হয়।’ তাছাড়া সত্যিকারের রোজার ফলেই লাভ করা যায় অনাবিল সুখনগরী জান্নাত। রাসূল (সা.) বলেন— ‘রোজা হলো দোজখ থেকে আত্মরক্ষার উপায়।’ রোজা রেখে অফিস কিংবা বাসাবাড়িতে বেশির ভাগকেই দেখা যায় গিবত তথা অপরের দোষচর্চা করতে। অথচ রাব্বে কারিম ইরশাদ করেন- ‘তোমরা একে অপরের গিবত ক’রো না।’ (সূরা হুজুরাত : ১২)। সাহাবিগণ রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন- ‘গিবত কি?’ রাসূল (সা.) বললেন- ‘তোমাদের ভাইয়ের ব্যাপারে এমন কোনো কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন- ‘যদি সে দোষটি তার মাঝে সত্যিই থাকে?’ প্রিয়নবী (সা.) বললেন- ‘সে দোষ তার মাঝে থাকলে, তবেই তোমরা গিবত করলে; আর যদি না থাকে, তবে তো অপবাদ লাগালে।’ গিবত কেবল মুখেই হয় না; হাত-পা, চোখ, ইত্যাদি দ্বারাও হয়। যেমন- একজন লোক খোঁড়া। কেউ যদি তার অনুকরণ করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে দেখায়, তাহলে সে তার গিবত করলো। রাব্বুল আলামিন গিবতের নিকৃষ্টতা তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘তোমাদের মাঝে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা তো তা ঘৃণা করো।’ (সূরা হুজুরাত : ১২)। এ আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, গিবত করা ঠিক সে ধরনের ঘৃণার কাজ, যেমন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্র এমনও আছে, যখন একজনকে অপরের দোষ প্রকাশ করতে হয়; তখন তা গোনাহ নয়। ক্ষেত্রগুলো সাধারণত এমন- ১. ধর্মীয় ও চারিত্রিক দোষে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ২. ফতোয়া গ্রহণের প্রয়োজনে ৩. একজনের অনিষ্ট থেকে অন্যকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ৪. কোনো ব্যক্তি এমন নামে পরিচিত হয়ে গেছে- যা মূলতঃ অমর্যাদাকর; কিন্তু এখন সে তাতে মনোক্ষুণ্ন না হলে, ৫. কোনো পদস্থ ব্যক্তি সম্পর্কে তার অফিসারের সামনে অভিযোগ করলে ৬. প্রকাশ্যে যে অপরাধ করে, তার অনিষ্টতা বর্ণনা করতে হলে। রমজানে পরনিন্দা বা অপরের দোষচর্চা তো দূরে থাক, শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকে ফজিলতের এই ফরজ রোজাই রাখে না। অথচ রোজাদার আল্লাহতায়ালার কাছে খুব পছন্দনীয় ব্যক্তি। তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকআম্বর থেকেও সুগন্ধির। রোজা ও রোজাদারের এত ফজিলত থাকাসত্ত্বেও তারা হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা বাসাবাড়ির গোপন কক্ষে দিব্যি পেটপুরে পানাহার করে পার করে মাহে রমজানের দিনগুলো। আবার ইফতারের ঠিক পূর্বমুহূর্তে এদের অনেককেই দেখা যায় ইফতারের জন্য মসজিদে, বাসাবাড়িতে হল্লা দিতে। তাদের বড় গলায় করা উচ্চবাচ্যে কখনো বা খোদ রোজাদার ব্যক্তিই বিরক্ত হয়ে ঠিকমতো ইফতার করতে পারেন না। মানবতার এ চরম লাঞ্ছনাকর পরিস্থিতি! রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে দুর্ভোগ রয়েছে তাদের জন্য, যারা শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এমন ফজিলত ও মাহাত্ম্যপূর্ণ রোজা রাখা থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত রাখে। রোজা রাখার আগ্রহ কেবল আমাদের নয়, সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও প্রবল ছিলো। যখন তাঁদের ঘরে খাবারের সঙ্কট হতো, তখন বলতেন- ‘আজ আমি রোজাদার।’ এমনকি নারী সাহাবিদের মাঝেও রোজা রাখার আগ্রহ ও প্রচলন খুব বেশি ছিলো। রোজা রাখার কারণে অনেকে তাঁদের স্বামীর কষ্টের কারণ হতেন। অবশেষে রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে আদেশ হলো- ‘কোনো নারী যেনো তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া (নফল) রোজা না রাখে।’ এর দ্বারা বোঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-ও সঠিকভাবে রোজার হক আদায় করতেন। তারা অপরের দোষচর্চা ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতেন।