ডিভিডেন্ড (Dividend) অর্থ লভ্যাংশ। একটি কোম্পানির তার মুনাফার যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে তা-ই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। কখনো কখনো রিজার্ভ বা সংরক্ষিত তহবিল থেকেও লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়। লভ্যাংশ নগদ টাকা বা স্টক (শেয়ার) অথবা উভয় আকারে হতে পারে। লভ্যাংশ সাধারণত শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়। (উদাহরণ-এবিসি কোম্পানি ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে)। তবে কখনো কখনো টাকার অঙ্কেও এটি প্রকাশ করা হয়। (উদাহরণ-এটুজেড কোম্পানি শেয়ার প্রতি ৫ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে)।
স্টক লভ্যাংশের বেলায় বিদ্যমান শেয়ারের বিপরীতে শেয়ার দেওয়া হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি বোনাস লভ্যাংশ হিসেবে পরিচিত। এটিও সংখ্যা বা শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। (উদাহরণ-এবিসি প্রতি ৫ টি শেয়ারের বিপরীতে ২ টি বোনাস ঘোষণা করেছে; এবিসি কোম্পানি ৪০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।)
মিউচুয়াল ফান্ডের বেলায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ, বন্ড বা ডিবেঞ্চার থেকে প্রাপ্ত সুদ, ক্যাপিটাল গেইন থেকে অর্জিত মুনাফা, ব্যাংকে রাখা অর্থের সুদ ইত্যাদির সমন্বিত আয় থেকে লভ্যাংশ দেয়া হয়। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সাধারণত নগদ লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। সংশোধিত মিউচুয়াল ফান্ড আইন অনুসারে স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ারও সুযোগ আছে।
ক. একটি কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফার কতটুকু লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করবে সে বিষয়ে কোনো আইনী বাধ্যবাধকতা নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির নিজস্ব নীতিমালা ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত, ক্ষেত্রে বিশেষে শেয়ারহোল্ডারদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের বাধ্যবাধকতা আছে। আইন অনুসারে একটি ফান্ডের আয়ের ন্যুনতম ৬৫ ভাগ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে হয়।
সাধারণভাবে সব শেয়ারহোল্ডারের জন্যই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। তবে কখনো কখনো শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। কোন কোম্পানির বিতরণযোগ্য মুনাফা কম হলে পরিচালনা পরিষদ শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডাররা (স্পন্সর ডিরেক্টর/স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার) লভ্যাংশ পাবার জন্য বিবেচিত হয় না।
খ. কোম্পানির বিতরণযোগ্য মুনাফা কম হলে মুনাফা হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় না।
গ. দ্রুত বর্ধনশীল বা উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন কোম্পানিতে অনেক সময় লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে অর্জিত মুনাফা কোম্পানির সম্প্রসারণে পুন:বিনিয়োগ করা হয়।
ঘ. শেয়ারের বাজার মূল্য যা-ই হোক না কেন সব সময় সংশ্লিষ্ট শেয়ারের অভিহিত মূল্যের উপর লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। (ধরা যাক-এবিসি কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা, বাজার মূল্য ২০০ টাকা। কোম্পানিটি ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলে শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারী যে মূল্যেই কিনেন না কেন তিনি প্রতি শেয়ারে ২ টাকা লভ্যাংশ পাবেন।)
Dividend Equalization Fund
লভ্যাংশ সাযুজ্য তহবিল। অনেক কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রতিবছরই নীট মুনাফা থেকে কিছু অর্থ আলাদা করে রাখে। কখনো হঠাৎ ব্যবসা খারাপ গেলে তথা মুনাফা কম হলে অথবা লোকমানে পড়লে এ তহবিলের অর্থে লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা হয়।
Dividend Policy (ডিভিডেন্ড পলিসি)
লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত কোম্পানির নীতিমালা। একটি কোম্পানি তার মুনাফার পুরোটাই শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে না। লভ্যাংশের একটি অংশ সংরক্ষিত তহবিল, ইকুয়ালাইজিং ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে জমা রাখে। কোম্পানি তার মুনাফার কত ভাগ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করবে তা লভ্যাংশ সংক্রান্ত নীতিমালার ভিত্তিতে নির্ধারণ করে।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নিজ কর্তৃত্বে যে কোন পরিমাণ লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষমতা রাখলেও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তাদের মুনাফার সর্বোচ্চ কত অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে তা বিএসইসি সময়ে সময়ে নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানে একটি মিউচুয়াল ফান্ড তার আয়ের সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে হিসেবে বিতরণ করতে পারে। অন্যদিতে বীমা আইন অনুসারে জীবনবীমা কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারে।
Dividend yield (ডিভিডেন্ট ঈল্ড)
সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য অনুপাতে ঘোষিত লভ্যাংশের হার। (ধরা যাক-এবিসি কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। কোম্পানিটি ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একজন বিনিয়োগকারী যে দামেই শেয়ার কেনে-না কেন তিনি প্রতি শেয়ারের জন্য ৩ টাকা লভ্যাংশ পাবেন। কোন বিনিয়োগকারী যদি ১০০ টাকায় এ শেয়ার কিনে থাকেন তাহলে বিনিয়োগের বিপরীতে তার প্রকৃত লভ্যাংশ প্রাপ্তি (ডিভিডেন্ড ঈল্ড) হবে ৩ শতাংশ। ঘোষিত লভ্যাংশকে ১০০ দিয়ে গুণ করে বাজার মূল্য দিয়ে ভাগ করলে ডিভিডেন্ড ঈল্ড পাওয়া যায়।
ঘোষিত লভ্যাংশ * ১০০
সূত্র : ডিভিডেন্ড ঈল্ড = ————————-
সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার মূল্য
Dividend Warrant (ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট )
বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারের প্রাপ্য লভ্যাংশের বিপরীতে দেওয়া কোম্পানির চেক। কোম্পানি সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারের মালিকানাধীন শেয়ারের জন্য প্রাপ্য মোট লভ্যাংশের অর্থ একটি চেকের মাধ্যমে এ অর্থ পরিশোধ করে থাকে। বিদ্যমান আইন অনুসারে লভ্যাংশ আয়ের ক্ষেত্রে আয়কর বা অন্যান্য কর প্রযোজ্য হলে কোম্পানি তা কেটে রেখে প্রাপ্য বাকী টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে।
ওয়ারেন্ট সব সময় একাউন্টপেয়ী হয়ে থাকে। যার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয় তার ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে এটি নগদায়ন করতে হয়।
কোম্পানি চেকের সঙ্গে একটি একনলেজমেন্ট লেটার পাঠায় যাতে তার ঠিকানা, শেয়ারফলিও নাম্বার বা বিও নাম্বারসহ অন্যান্য তথ্য উল্লেখ থাকে।
লভ্যাংশ প্রাপ্তি সহজ করতে এখন বেশিরভাগ কোম্পানি অনলাইন একাউন্টধারী শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ সরাসরি ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। এ কারণে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের প্রচলন কমে যাচ্ছে।
Cum-dividend (কাম-ডিভিডেন্ড)
লভ্যাংশের জন্য ঘোষিত রেকর্ড তারিখের আগের শেয়ার। যে সময়ে একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলে লভ্যাংশ প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হন । আইন অনুসারে প্রতিটি কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীর জন্য কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি, রাইট শেয়ার, বার্ষিক সাধারণ সভা বা বিশেষ সাধারণ সভায় যোগদানের সুযোগ লাভের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত তারিখের আগের দিন পর্যন্ত যার নামে শেয়ার থাকে তিনিই আলোচিত সুবিধাগুলো পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন। নির্ধারিত তারিখটিকে বলা হয় রেকর্ড ডেট। রেকর্ড ডেট পর্যন্ত শেয়ার থাকলে সে শেয়ারে লভ্যাংশ পাওয়া যায়। রেকর্ড ডেটের আগের শেয়ারকে কাম-ডিভিডেন্ড শেয়ার বলা হয়।
Ex-dividend (এক্স-ডিভিডেন্ড)
রেকর্ড ডেট পরবর্তী শেয়ার। যে সময়ে একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনলেও লভ্যাংশ বা অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হন না। আইন অনুসারে প্রতিটি কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীর জন্য কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশ প্রাপ্তি, রাইট শেয়ার, বার্ষিক সাধারণ সভা বা বিশেষ সাধারণ সভায় যোগদানের সুযোগ লাভের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত তারিখের আগের দিন পর্যন্ত যার নামে শেয়ার থাকে তিনিই আলোচিত সুবিধাগুলো পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন। নির্ধারিত তারিখটিকে বলা হয় রেকর্ড ডেট। রেকর্ড ডেটের পরে শেয়ার কিনলে সে শেয়ারে লভ্যাংশ পাওয়া যায় না। সে জন্য রেকর্ড ডেট পরবর্তী শেয়ারকে এক্স-ডিভিডেন্ড শেয়ার বলা হয়।
সূত্র: পুঁজিবাজার শব্দকোষ