শুক্রবার সকাল থেকে পাগলা রোদ, গরমও বেশি। বেলা বাড়তে বাড়তে গরম যে আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। ভাগ্যিস পরীক্ষাকেন্দ্রটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। আমরা যে লোটাস হোটেলে রয়েছি, সেটারই একটি ফ্লোরে আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা পর্ব। কম্বিনেটরিয়াল জ্যামিতি, নম্বরতত্ত্ব ও জ্যামিতির তিনটি সমস্যা সমাধানের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে সাড়ে চার ঘণ্টা।
গতকালের আশঙ্কা সত্যি হয়ে দিনের কঠিনতম সমস্যাটি এসেছে জ্যামিতি থেকে। আমাদের প্রতিযোগীদের মধ্যে সাজিদ আখতার এই সমস্যাটি নিয়ে কিছুটা মাথা ঘামাতে পারলেও অন্যরা সেভাবে নজর দিতে পারেনি। প্রতিযোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সবাই প্রথম সমস্যাটির সমাধানে পৌঁছাতে পেরেছে। কারও কারও দ্বিতীয়টিও হয়েছে বলে আশা করা যায়। পরীক্ষা শেষে আগামী দিনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।
প্রতিযোগীরা যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন আমরা গিয়েছি হাতির খেলা দেখতে। হাতি থাইল্যান্ডের জাতীয় এবং সম্মানীয় পশু। গাইডের কাছ থেকে জানা গেল ওদের দেশে এখন প্রায় ৫০০০ হাতি আছে। এর অর্ধেকের বেশি ব্যক্তিগত। বাকিগুলো সরকারি। সব হাতির জন্য আলাদা পরিচয়পত্র আছে! কারণ, ব্যক্তিগত হলেও হাতি থাকে অভয়ারণ্যে। থাইল্যান্ডের হাতি হিংস্র নয়। কলা আর ঘাস খেয়েই তারা বাঁচে। হাতি প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি খাদ্য খায়।
বাসে করে আমরা পৌঁছালাম এখানকার একটা হাতির ফার্মে। সেখানে হাতির লালনপালন হয়, চিকিৎসা হয়। সেই সঙ্গে হাতিকে প্রশিক্ষিতও করে তোলা হয়। আমরা উপভোগ করলাম ঘণ্টা খানেকের একটি শো। হাতিরাই খেলল, সার্কাসের মতো নাচল এবং ছবিও আঁকল। হাতির আঁকা ছবি বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। আজকে আঁকা সবচেয়ে সুন্দর ছবিটির দাম চাওয়া হয়েছে এখানকার ছয় হাজার টাকা! থাইরা হাতির দাঁতের ব্যবসা ছাড়াও বের করেছে কীভাবে হাতির মল থেকে কাগজ বানাতে হয়। ফলে এখন আর হাতির বর্জ্য নিয়ে তাদের মাথা ঘামাতে হয় না। এই কাগজ অনেকটা আমাদের দেশের হাতে বানানো কাগজের মতো।
হাতির খামার থেকে আমরা গেলাম একটি অর্কিড হাউসে। থাইল্যান্ডে প্রায় হাজার প্রজাতির অর্কিড রয়েছে, যার একটা বড় অংশই এই অর্কিড হাউসে দেখেছি।
আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় প্রতিযোগীদের আরও তিনটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হবে। পরীক্ষা শেষে প্রতিযোগীদের জন্য বিভিন্ন খেলাধুলা ও ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সময় আমি চলে যাব আমাদের দলনেতার কাছে, প্রতিযোগীদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার জন্য।
পাঁচ শতাধিক প্রতিযোগীর সঙ্গে অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ছয়জন প্রতিযোগী। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি দেশজুড়ে গণিত উৎসবের মাধ্যমে এই ছয়জনকে নির্বাচিত করেছে।