কোন ব্যবসার জাকাত দিবেন কীভাবে?

Author Topic: কোন ব্যবসার জাকাত দিবেন কীভাবে?  (Read 3040 times)

Offline Md. Neamat Ullah

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 183
    • View Profile
কোন ব্যবসার জাকাত দিবেন কীভাবে?


বর্তমানে দুই ধরনের শেয়ারহোল্ডার লক্ষ্য করা যায় : ক. যারা আইপিও-তে অংশগ্রহণ করে শেয়ার খরিদ করে থাকে কোম্পানির বার্ষিক ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) পাওয়ার উদ্দেশ্যে।

১. শেয়ার : বর্তমানে দুই ধরনের শেয়ারহোল্ডার লক্ষ্য করা যায় : ক. যারা আইপিও-তে অংশগ্রহণ করে শেয়ার খরিদ করে থাকে কোম্পানির বার্ষিক ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) পাওয়ার উদ্দেশ্যে। খ. যারা ক্যাপিটাল গেইন করে অর্থাৎ শেয়ার বেচা-কেনাই এদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে; কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ নেওয়া এদের মূল উদ্দেশ্য থাকে না। শেয়ারের যাকাতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুই গ্রুপের হুকুম ভিন্ন। যারা শুধু ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে শেয়ারের কারবার করে থাকে তারা যাকাত আদায় করবে শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু হিসাবে। তাদের যাকাতের বছর যেদিন পূর্ণ হবে ঐ দিন শেয়ারবাজারে ওই শেয়ারের যে মূল্য থাকে সে মূল্য হিসাব করেই যাকাত আদায় করবে। আর যারা কোম্পানির ডিভিডেন্ট (লভ্যাংশ) হাসিলের জন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে থাকে তারা ওই কোম্পানির ব্যালেন্সশীট দেখে যাকাত পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে ব্যালেন্সশীট দেখে কোম্পানির ফিক্সড এসেট্স (স্থায়ী সম্পদ) এ শেয়ার অনুযায়ী তার যতটুকু অংশ রয়েছে তত টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ দিতে পারবে। অবশিষ্ট মূল টাকা ও কোম্পানি ঘোষিত লভ্যাংশ (নগদ, বোনাস শেয়ার ইত্যাদি) এর যাকাত প্রদান করতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, এখানে শুধু শেয়ারের যাকাতের হুকুম বলা হয়েছে, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের শরয়ী হুকুম এখানে বর্ণনা করা হয়নি। কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হলে সে সম্পর্কে কেনো বিজ্ঞ মুফতীর নিকট আগেই জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে। বর্তমান স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের উপর তাত্ত্বিক ও বিশ্লেষণধর্মী এবং শরয়ী হুকুমসহ দুটি প্রবন্ধ মাসিক আলকাউসার এপ্রিল ২০১০ ও ২০১১-এর ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। যা পরবর্তীতে মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তা দেখা যেতে পারে।

২. ব্যাংক একাউন্ট : ব্যাংকের ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল প্রকার একাউন্ট যাকাতযোগ্য। একাউন্ট হোল্ডার নেসাবের মালিক হলেই তাকে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকাগুলোর যাকাত প্রদান করতে হবে। চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, দীর্ঘ মেয়াদী ও ডিপিএস হিসাবসহ সকল একাউন্ট এ হুকুমের আওতাভুক্ত হবে। ব্যাংক হিসাবের স্ট্যাটমেন্ট দেখে যাকাত প্রদান করা যেতে পারে। যাকাতদাতার হিসাব-বর্ষের শেষে স্ট্যাটমেন্টে যত টাকা পাওয়া যাবে তার যাকাত সে প্রদান করবে। কোনো এক একাউন্ট থেকে সরাসরি ট্যাক্স বা সার্ভিস চার্জ কাটা গেলে যাকাতের হিসাবে এ টাকা অন্তর্ভুক্ত হবে না। একাউন্ট হোল্ডারের জমাকৃত টাকা ছাড়া ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত যদি সুদ (বা মুনাফা নামের সুদ) জমা হয় তবে তা যাকাতযোগ্য নয়; বরং সুদ ও হারামের মাল হস্তগত হলে তা পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে। অবশ্য যাকাত দেওয়ার সাথে পুরো টাকার হিসাব করে নিলে এ নিয়ত করে নিবে যে সুদের অংশের ২.৫% যাকাত হিসাবে দিচ্ছে না; বরং ঐ অংশের ২.৫% দায়িত্বমুক্তির জন্য আদায় করছে। এরপর যখন সে হারাম টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করবে তখন যাকাতের সাথে প্রদানকৃত ২.৫% বাদ দিয়ে বাকিটা সদকা করতে হবে।

৩. ব্যাংক গ্যারান্টি মানি : বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসেবে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান ও গ্রহণের রেওয়াজ চালু আছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানাধীন থাকে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সে এর সুদ/লাভও পায়। তবে গ্যারান্টির মেয়াদ-কালে সে ওই টাকা উত্তোলন করতে পারে না। এ কারণেই অনেকে এ টাকার যাকাত আসবে কি না সে বিষয়ে দ্বিধায় ভোগে। অথচ ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা সন্দেহাতীতভাবে যাকাতযোগ্য। যতদিন এ টাকার উপর একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানা থাকবে ততদিন অন্যান্য টাকার মতোই এ টাকার যাকাত প্রদান করতে হবে।

৪. ব্যাংক লোন : সাধারণত যাকাতযোগ্য কোনো কর্জ থাকলে তা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের এ যুগে কর্জের ধরনই বদলে গেছে। এখন বড় বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি ঋণী। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোটা অংকের ঋণ দেওয়ার জন্য তাদেরকেই বাছাই করে থাকে। তারা বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকার লোন গ্রহণ করে থাকে। পরিভাষায় এগুলো হল ডেভেলেপমেন্ট বা উন্নয়নমূলক লোন। যাকাতের হিসাবের সময় ডেভেলপমেন্ট লোন বিয়োগ হবে না।

৫. বায়নানামার টাকা : জমি, ফ্ল্যাট বা অন্যকিছু কিনে প্রাথমিকভাবে যে আংশিক টাকা প্রদান করে বায়নানামায় চুক্তি হয় সে টাকার মালিক বিক্রেতা। সুতরাং এর যাকাত বিক্রেতা প্রদান করবে। ব্যবসায়িক পণ্যের কোন মূল্য ধর্তব্য : টাকা-পয়সা ও স্বর্ণাংলকারের মতো ব্যবসায়িক পণ্য এবং ব্যবসার মূলধনেরও যাকাত দিতে হয়। ব্যবসায়ী যাকাত দেওয়ার সময় তার অবিক্রিত পণ্যের কোন মূল্যটি হিসাব করবে, খরিদমূল্য, পাইকারি মূল্য, খুচরামূল্য নাকি অন্য কোনো মূল্য? এ প্রশ্নের জবাব হল, লোকটি তার অবিক্রিত পণ্যের বর্তমান বাজার দর হিসাব করে যাকাত আদায় করবে। অর্থাৎ যেদিন তার যাকাত-বর্ষ পুরো হয়েছে সেদিন তার ব্যবসায়িক পণ্যগুলো একত্রে বিক্রি করে দিলে যে দাম পাওয়া যেত সে মূল্যের হিসাবে যাকাত প্রদান করবে।

৬. বিক্রিত পণ্যের বকেয়া টাকার যাকাত : ব্যবসায়ীরা তাদের যে সকল পণ্য বাকিতে বিক্রি করে থাকে সে বকেয়া টাকার যাকাতও তাদেরকে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা এ টাকার যাকাত বিক্রির পর থেকে নিয়মিত আদায় করতে পারে অথবা টাকা হস্তগত হওয়ার পর পেছনের বছরগুলোর যাকাত একত্রেও পরিশোধ করতে পারে। অবশ্য যদি কোনো পাওনা টাকার ব্যাপারে এমন আশঙ্কা প্রবল হয় যে, ওই টাকা আর পাওয়া যাবে না তবে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না। এরপর যদি ওই টাকা হস্তগত হয়ে যায় তাহলে তখন থেকে তা যাকাতের নেসাবভুক্ত হবে।

৭. ঋণ দিয়ে পরে তা যাকাত বাবদ কর্তন করা : কোনো যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার পর সে তা আদায়ে গড়িমসি করলে বা আদায়ে অক্ষম হলে কেউ কেউ যাকাত হিসেবে তা কর্তন করে দিতে চায়। এটা সঠিক পন্থা নয়। এভাবে যাকাত আদায় করা যায় না। এ ব্যক্তি বা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে যাকাতের টাকা প্রদান করে পরে তার থেকে ওই টাকা নিজ পাওনা বাবদ নিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

৮. যাকাতের টাকা দ্বারা কর্মসংস্থান করে দেওয়া : কেউ কেউ অল্প পরিমাণে যাকাতের টাকা বণ্টন না করে কোনো এক বা একাধিক দরিদ্র ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করার জন্য মোটা অংকের টাকা দেওয়া পছন্দ করে। আবার কেউ ঘর বা দোকান ইত্যাদি নির্মাণের খরচেও যাকাতের বড় অংকের টাকা দিয়ে থাকে। এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে একত্রে অনেক টাকা না দিয়ে তার প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দেওয়া উচিত। যেন সাথে সাথেই সে যাকাতের নেসাবের মালিক না হয়ে যায় এবং তার প্রয়োজনও পুরো হয়। যদিও একজনকে যাকাতের এত অধিক টাকা দেওয়া সাধারণত মাকরূহ। আর এ ধারাটি খুব ব্যাপক হওয়া উচিত নয়। কারণ যে দেশে যাকাত গ্রহণকারী দরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি সেখানে অল্প কিছু লোককে যাকাতের বড় অংকের টাকা দিয়ে দিলে অন্যদের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

৯. চিকিৎসা খরচে যাকাত : মাঝে মাঝেই এমন মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হয় যে, একজন রোগী যাকাতের নেসাবের মালিক, তার জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা (উদাহরণস্বরূপ) প্রয়োজন। লোকটির নিকট আছে ২ লক্ষ টাকা। অবশিষ্ট ৩ লক্ষ টাকা তাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি না? এ যুক্তিতে যে, চিকিৎসা শুরু করলে তো এক পর্যায়ে সে যাকাত গ্রহণ করার উপযোগী দরিদ্র হয়ে যাবে। এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, বিত্তবান লোকদের উচিত এ সকল খাতে যাকাত ছাড়া সাধারণ অনুদান প্রদান করা। যাতে যাকাতের বড় অংকের টাকা সীমিত খাতে লেগে না যায়। অবশ্য যদি এক্ষেত্রে যাকাতের টাকাই কেউ দিতে চায় তবে সে ওই রোগীর নিজস্ব টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার পর (সে দরিদ্রের অন্তর্ভুক্ত হলে) তাকে প্রদান করবে অথবা রোগীর এমন কোনো অভিভাবককে প্রদান করবে যে যাকাত গ্রহণের উপযোগী। পরে লোকটি ওই টাকা স্বেচ্ছায় উক্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারবে।

১০. যাকাত ট্যাক্স নয় : এ কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, যাকাত কোনো ট্যাক্স নয়; বরং ইসলামের অন্যতম একটি রোকন, ধনীর উপর গরীবের হক। তাই সরকার কোনো মালের ট্যাক্স (শরীয়তের দৃষ্টিতে ওই ট্যাক্সের হুকুম যাই হোক) নিয়ে নিলেও অবশিষ্ট মাল নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে।

১১. টিভি চ্যানেলে যাকাত : কেউ কেউ ধর্মভিত্তিক টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনার জন্যও যাকাত চেয়ে থাকে, অনেক লোক আবার তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদেরকে যাকাতের অর্থ প্রদানও করে থাকে। মনে রাখতে হবে এটি যাকাতের কোনো খাত নয়। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম যাকাত। তা আদায় করা যেমন ফরয তেমনি যথাস্থানে উপযুক্ত পাত্রে দেওয়াও ফরয। কেউ কোনো আহবান করলেই তাতে সাড়া দেওয়ার আগে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া খুবই জরুরি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি যাকাত বোর্ড, দাতব্য সংস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

১২. যাকাত থেকে বাঁচার অপকৌশল : অনেকে যাকাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল (নাজায়েয হীলা) গ্রহণ করে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং আল্লাহ তাআলাকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল। চিকিৎসাবিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোজা ও যাকাতের আরো বহু নতুন মাসআলা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।

লিখেছেন : মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
সৌজন্যে : মাসিক আল-কাউসার

- See more at: http://bangla.uttaranews24.com/2015/07/07/69107#sthash.dyOJ7m8E.dpuf
Md. Neamat Ullah
Administrative Officer
Daffodil International University
Cell: 01811458868, 01675341465
E-mail: neamat@daffodilvarsity.edu.bd
neamat@daffodil.com.bd

Offline fahad.faisal

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 734
  • Believe in Hard Work and Sincerity.
    • View Profile
Thanks for sharing.
Fahad Faisal
Department of CSE