সমৃদ্ধ নগর-রাষ্ট্র এথেন্স ফিওদর করোভকিন
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে গ্রিসে এথেন্স নগর-রাষ্ট্র সবচেয়ে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এথেনীয়দের ধন-সম্পদের ফলে বড় বড় সার্বজনীন ভবন ও নগর রক্ষার্থে বিশাল বিশাল দুর্গ নির্মাণ সম্ভব হয়ে উঠেছিল। নিজেদের শহরের চারদিকে তারা মিনারসমেত দুর্গপ্রাচীর তুলেছিল। এমন সুদীর্ঘ প্রাচীর তারা তৈরি করেছিল যে লোকে বলত ‘লম্বাই’। এথেন্স থেকে পিরেউসগামী পথ এ প্রাচীরটি রক্ষা করত; শত্র“ কর্তৃক আক্রান্ত হলে এরই আড়ালে থেকে এথেন্সবাসী সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে পারত।
স্থাপত্যের বিশেষ প্রসার ঘটেছিল এথেন্সের আক্রোপোলিসে। এখানে পারসিকদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির জায়গায় অপূর্ব সব মন্দির ও মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল। এতে শুধু এথেনীয় রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে নয়, সমগ্র এথেনীয় নৌ-জোটের অর্থ-তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়িত হয়েছিল। নির্মাণ কার্যের ফলে এথেনীয় কারিগর, পাথর কাটিয়ে, শকটচালক, মাঝি ইত্যাদি পেশার লোকজনদের পক্ষে সর্বদাই উপার্জন করা সম্ভব হয়েছিল।
সমুদ্রের রানী শক্তিশালী নৌবহর টিকিয়ে রেখেছিল। জাহাজে চাকরি করার জন্য এথেন্সের কোষাগার থেকে টাকা খরচ করে মাইনে দেয়া হতো; এথেন্সের বহু লোক দাঁড়ি ও মাঝিমাল্লার চাকরি নিয়ে এ মাইনের ওপরই জীবনধারণ করত।
একইভাবে অন্যান্য পদে আসীন ব্যক্তিদের, বিচারকদের পারিশ্রমিক দেয়া হতো। লটারির মাধ্যমে এসব পদে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বসানো হতো। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে ভূমিহীন নিঃস্ব ব্যক্তিরাও রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের প্রায় সব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অধিকার আদায় করেছিল। প্রচুর গরিব এথেনীয় সরকারি চাকরি করে সেই উপার্জনে কালাতিপাত করত। একটি হাসির কবিতায় বলা হয়েছে-
একটা কথা কি বলবে আমায়, বাবা-
বিচারের সভা নাই যদি বসে তবে,
সকালে ও রাতে মোদেরে কেমন করে
খাওয়াবে? পয়সা, বলি, কোত্থেকে হবে?
বিনামূল্যে কাঙালিভোজ করানোরও চল ছিল। এথেন্সবাসীকে কোনো খাজনা দিতে হতো না। এথেন্সের দাসমালিকভিত্তিক রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া সম্মানজনক তো ছিলই, উপরন্তু তার সুযোগ-সুবিধাও ছিল বহু।
Source:
http://www.jugantor.com/editorial/2015/07/14/293885