« on: February 12, 2016, 09:55:31 AM »
ঘুম আল্লাহ তাআলার একটি মহা নেয়ামত। এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রাতকে। কেননা সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর মানুষের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। তাই আল্লাহ তাআলা রাতকে বিশ্রামের উপযোগী করেই বানিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ, আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৯-১১)
তবে আজ গোটা পৃথিবীতে এর উল্টো স্রোত শুরু হয়েছে। এর ক্ষতিকর দিকগুলো সবার সামনে স্পষ্ট। এটি আধুনিক সময়ের একটি অভিশাপরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। অনেকেই অহেতুক গল্পগুজব, সমালোচনা, পরনিন্দা বা অনৈতিক কথাবার্তায় লিপ্ত থাকে। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষভাবে যুবকশ্রেণি এতে জড়িত। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে অযথা রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, দলবেঁধে পার্টিতে যাওয়া এবং গভীর রাত পর্যন্ত এতে লিপ্ত থাকা। যারা বাইরে যায় না, তারা ঘরে বসে ইন্টারনেটে সারা দুনিয়া চষে বেড়ায়। অনলাইনে ছেলে-মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট ও আড্ডায় জড়িয়ে পড়ে। কেউ বা সিনেমা ও বিভিন্ন ভিডিও ডাউনলোড করে দেখছে। কারো টিভির পর্দায় চোখ, কারো বা এফএম রেডিওর সঙ্গে কান লেগে আছে। কেউ ঘুম ফেলে গেম খেলায় মগ্ন। এ হচ্ছে তরুণসমাজের ভয়াবহ চিত্র। ইহকাল-পরকালে এসব কাজ অকল্যাণ ছাড়া কোনো কিছুই বয়ে আনে না। ইসলাম এসব সমর্থন করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হা. : ৫৯৯) অপ্রয়োজনে রাত জাগার ফল হলো সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা। বর্তমানে মুসলমান সমাজের এক বড় অংশই দিন শুরু করে ফজরের নামাজ বাদ দিয়ে। অথচ হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্যই হলো নামাজ।’ (মুসলিম, হা. : ১৩৪)
ভোরে জেগে ওঠা অত্যন্ত বরকতময়
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলে কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ ও জামাতে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য শেষরাতে ওঠা সহজ হয়। এই সময়টা দোয়া ও আল্লাহর কাছে তওবা করার সর্বোত্তম সময়। আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৮)
ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত-বন্দেগিই নয়, বরং পার্থিব কাজের জন্যও এটি সবচেয়ে উপযুক্ত ও বরকতময় সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ভোরবেলার কাজের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। হজরত সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, হজরত সখর (রা.)-ও তাঁর ব্যবসায়ী কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হা : ২৬০৬)
প্রয়োজনে রাত্রি জাগরণ আপত্তিকর নয়
রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর কথা বলা ও গভীর রাত পর্যন্ত অযথা জেগে থাকতে অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন এবং মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ, হা. : ৭২০৩)
সাহাবায়ে কেরামের অনেকেরই দিনের ব্যস্ততায় নফল নামাজ আদায় করা বা কোরআন তেলাওয়াত করার সময় হতো না। তাঁরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে কোরআন শরিফ পড়তেন এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন।
হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এশার আগে ঘুমাতে এবং এশার পর গল্পগুজব করতে দেখিনি। এশার পর হয়তো জিকিরে মশগুল থাকতেন, এতে তো কেবল লাভই, নচেৎ ঘুমিয়ে পড়তেন, এর দ্বারা সব অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে : বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হা. : ৪৮৭৯)
রাত জাগার ক্ষতিকর দিক
এক. গভীর রাত পর্যন্ত জেগে অনেকেই পরদিন বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে। এতে ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়।
দুই. ফজরের সময় কেউ উঠতে পারলেও ঘুমের চোখে নামাজে মন দেওয়া কষ্টকর হয়। এমনকি নামাজের আমলও ঠিকমতো আদায় করা হয় না।
তিন. প্রতিনিয়ত রাত জাগার অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। মেজাজ খারাপ থেকে অল্পতেই অন্যের সঙ্গে ঝগড়া হতে পারে। ফলে ব্যক্তি, পারিবারিক ও জনজীবনে নানা অশান্তি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া শারীরিক দুর্বলতার কারণে কাজে ফাঁকি দেওয়ার বদভ্যাস গড়ে উঠতে পারে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা ক্লান্তিকর ও বোঝাস্বরূপ।’ (সুনানে দারেমি, হা. : ১৬৩৫)
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর শারীরিক উপকারিতা
বর্তমানে চিকিৎসকগণও দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেক উপকারিতা বর্ণনা করেছেন—এক. রোগ প্রতিরোধ : তাড়াতাড়ি ঘুমানো হলে মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথাসহ কয়েকটি মানসিক রোগ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আর এ অভ্যাস গড়ে তুললে পেটও ভালো থাকবে। ফলে শরীরের রোগব্যাধি প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।
দুই. ওজন নিয়ন্ত্রণ : পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তাই পর্যাপ্ত ঘুমালে মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
তিন. উদ্যম : তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া মানুষকে কাজে উদ্যমী ও সৃষ্টিশীল হতে সহায়তা করে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পর দিনের কার্যক্রম চালানোর জন্য যখন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা যাবে, তখন তত বেশি প্রাণবন্ত ও উদ্যম বোধ হবে। এতে দিনে সহজে ক্লান্তিবোধ হবে না। এ উদ্যম পরিপূর্ণভাবে কাজ করার জন্য যথাসম্ভব মাঝরাতের আগে ঘুমাতে যেতে হবে।
চার. মনের প্রফুল্লতা : যারা তাড়াতাড়ি ঘুমায় এবং ওঠে তাদের মন ভালো থাকে। এর কারণ, যারা তাড়াতাড়ি ঘুমায় তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় এবং তার ফলে ঘুম থেকে ওঠার পর তাদের মন ভালো থাকে।
পাঁচ. সৌন্দর্য : দেহের সৌন্দর্যের সঙ্গে ঘুমের অত্যন্ত দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তাড়াতাড়ি ঘুমালে তা ত্বকের সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দেবে। রাতে ভালো ঘুম না হলে মানুষের মুখে বলিরেখা পড়ে। এ কারণে অনেক তরুণ-তরুণীকেও কয়েক বছর বেশি বয়সী বলে মনে হয়। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে বিষয়টি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক : ফতোয়া গবেষক
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
Source:
http://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2016/02/12/323869#sthash.RvhJBLL9.dpuf
« Last Edit: February 18, 2016, 07:58:08 PM by rumman »

Logged
Md. Abdur Rumman Khan
Senior Assistant Registrar