জনসংখ্যা বেড়ে চলছে, আমাদের জীবনযাত্রাও হয়ে উঠছে প্রযুক্তি নির্ভর। ফলে শারীরিক শ্রমও কমে চলেছে। এই অবস্থায় আলঝেইমার রোগ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। একদল গবেষক তা প্রতিরোধের পথ বাতলে দিচ্ছেন। ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। আমরা সবাই প্রায় প্রতিদিন কত কিছুই না ভুলে যাই। কিন্তু স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেলে বিষয়টি বেশ মর্মান্তিক- এমনকি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আল্সহাইমার এমনই এক রোগ। শারীরিকভাবে সুস্থ, সবল মানুষের জীবনও প্রায় অর্থহীন করে তুলতে পারে এই রোগ। কাছের মানুষের পরিচয়ও মনে থাকে না। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বিষয়টি বংশগত, অন্যরা পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার শিকার।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ মানুষ আল্সহাইমার রোগে আক্রান্ত হবেন। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি। এমন এক পরিস্থিতি এড়াতে এই রোগ প্রতিরোধের পথ খোঁজা হচ্ছে।
ডাঃ এলইস আলঝেইমার ১৯০৬ সালে সর্বপ্রথম রোগটির বর্ণনা দেন। আলঝেইমার রোগে স্নায়ুকোষ, তথ্যবাহী স্নায়ূতন্তু ও স্নায়ুসংযোগ (সিন্যাপ্স) সমূহ বিনষ্ট হয়ে যায়। মস্তিস্কের যেসব স্থানে স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে সেগুলিই প্রধানতঃ আক্রান্ত হয়। শতকরা ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ ক্ষেত্রে আলঝেইমার রোগের কারনে ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে।
আলঝেইমার রোগে ব্রেনের স্মৃতিতে নতুন তথ্য ধারন ও সংরক্ষণকারী টেমপোরাল লোব বিশেষতঃ হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে যায় ফলে ব্রেন সংকুচিত হয়। স্মরণশক্তি, কথা, চিন্তা ও বিচারক্ষমতা ব্যহত হয়। ব্রেনের এসিটাইলকলিন ও আরোকিছু জটিল রাসায়নিক পদার্থ তৈরীর পরিমান কমে যায়। কি কারণে স্নায়ুকোষ নষ্ট হয় তা স্পষ্ট নয় তবে মৃত্যূর পর ব্রেন পরীক্ষা করে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করলে স্নায়ুকোষের অভ্যন্তরে নিউরোফিব্রিলারী ট্যাঙেল ও বাহিরে নিউরাইটিক প্ল্যাক জাতীয় আমিষ কণা পাওয়া যায়। এ থেকে আলঝেইমার রোগ ডায়াগনোসিস নিশ্চিত হয়।
সম্প্রতি, একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক নিরবচ্ছিন্ন আট ঘণ্টা ঘুম বৃদ্ধ বয়সে আলঝেইমার এড়াতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত, তরুণ এবং মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, শিশুকাল অথবা তরুণ বয়স থেকেই নিয়মতান্ত্রিক ঘুম বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।টেক্সাস বেইলর ইউনিভার্সিটির স্লিপ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড কগনিশন ল্যাবরেটরির পরিচালক মাইকেল স্কুলিন গত ৫০ বছর ধরে ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা করে আসছেন।তিনি বলেন, মধ্য বয়স থেকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে এর ফল পাওয়া যাবে ২৮ বছর পরে। কেবল স্মৃতিশক্তিই নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্যও ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন এমনকী ডায়াবেটিসের (টাইপ-২) কারণেও স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।