আমাদের দেহের যতো দূষিত বর্জ্য পদার্থ রয়েছে তা ছেঁকে বের করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে কিডনি। মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহ থেকে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে দূর করার কাজটি করে থাকে। কিন্তু প্রতিদিনের কিছু বাজে অভ্যাসে নষ্ট করে ফেলছেন নিজের কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। কিডনি সমস্যা খুবই মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে কিডনি সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না, একেবারে শেষ পর্যায়ে কিডনির রোগ ধরা পড়ে যখন কিছুই করার থাকে না। আর এ কারণেই প্রতিবছর কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হয় হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকেন। তাই নিজের কিডনির জন্য কোন কাজটি ভালো এবং কোনটি ক্ষতিকর তা বিবেচনা করতে হবে আপনাকেই। প্রতিদিনের যে বাজে অভ্যাস কিডনি সমস্যার জন্য দায়ী তা বর্জন করতে হবে আজ থেকেই।
১) কম পানি পান করা
পানি কম পান করা কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। পানির অভাবে কিডনি আমাদের দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজটি ঠিকমতো করতে পারে না এবং তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়। তাই দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
২) লবণ বেশী খাওয়া
আমাদের দেহে লবণের চাহিদা থাকে শুধুমাত্র ১ চা চামচ পরিমাণে। এর চাইতে বেশি লবণ খেলে তা আমাদের দেহেই রয়ে যায়। এতে করে কিডনির কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। তাই লবণ এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা বেশি জরুরী।
৩) প্রস্রাব চেপে রাখা
প্রস্রাব চেপে রাখার কাজটি কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এতে ব্লাডারে মারাত্মক চাপ পরতে থাকে এবং আমাদের মূত্রথলিতে ব্যাকটেরিয়া বাড়তে থাকে যা কিডনি ইনফেকশনের জন্য দায়ী। তাই কখনোই প্রস্রাব চেপে রাখার মতো ভুল কাজটি করবেন না।
৪) হুটহাট ঔষধ খাওয়া
ব্যথানাশক ঔষধ হয়তো আপনার শারীরিক ব্যথা খানিকক্ষণের জন্য উপশম করবে কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কিডনি ড্যামেজের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ খাবেন না।
৫) ক্যাফেইন বেশী নেয়া
আগস্ট ২০০৪ ‘জার্নাল অফ ইউরোলজি’তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, ‘কফির ক্যাফেইন প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে যা কিডনি ছেঁকে বের করতে পারে না, যা পরবর্তীতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরি করে, এই ক্যালসিয়াম অক্সালেটই কিডনির পাথর নামে পরিচিত’। সুতরাং অতিরিক্ত কফি পান থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে খালি পেটে একেবারেই কফি পান করবেন না।
৬) ঘুম সংক্রান্ত জটিলতা
না ঘুমানো এবং ঘুম না হওয়ার সমস্যার প্রভাব আপনার কিডনির উপরে পড়ে। ঘুমের সময় স্বাভাবিক ভাবেই দেহের ড্যামেজ হওয়া টিস্যু পুনরুজ্জীবিত হয়। আপনার ঘুম পর্যাপ্ত না হলে এই কাজটি ব্যহত হয় যার কারণে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে।
৭) অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান
ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যেতে থাকে। যার কারণে কিডনি ড্যামেজসহ নানা ধরণের কিডনি রোগ দেখা দেয়।
৮) প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশী খাওয়া
প্রোটিন হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। বিশেষ করে প্রাণীজ প্রোটিন। এই প্রাণীজ প্রোটিনগুলো আমাদের হজমশক্তি কমিয়ে দেয় যার প্রভাব পড়ে আমাদের কিডনির উপর। এতে করে ধীরে ধীরে কিডনি তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারায়।
৯) শারীরিক পরিশ্রম না করা
শারীরিক পরিশ্রম না করলে শুধু ওজনই বাড়ে না পাশাপাশি আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরেও প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা যায় শারীরিক পরিশ্রম যারা করেন না বা কম করেন তাদের কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশী থাকে।
১০) অতিরিক্ত চিনি খাওয়া
অতিরিক্ত লবণ যেমন কিডনির জন্য ক্ষতিকর তেমনই অতিরিক্ত চিনিও কিডনির জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনির কারণে রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং কিডনি তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি এই সমস্যার কারণে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
Source: Internet