একক বিশ্বমোড়ল ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বজনস্বীকৃত। যদিও অর্থনৈতিক মন্দা, ধীর প্রবৃদ্ধি, নতুন অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীনসহ আরও কয়েকটি দেশের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এখন অনেকটা পড়তির দিকে। এরপরও অর্থনৈতিকভাবে দাপটের দিক থেকে সর্বকালের সেরা পাঁচ সাম্রাজ্য বা দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ এমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান পাঁচ সাম্রাজ্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফরচুন।রোমান সাম্রাজ্যের একটি স্থাপত্য নিদর্শন
১. রোমান সাম্রাজ্য (১০০ খ্রিষ্টাব্দ):
এ তালিকার সবার আগে উঠে এসেছে রোমান সাম্রাজ্যের নাম। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, ১০০ খ্রিষ্টাব্দের রোমানদের সম্পদের মূল্য আজকের বাজারদরে ৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলার বা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। এই অর্থ বিশ্বের বর্তমান সম্পদের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সিদ্ধহস্ত রোমানদের অর্থ-প্রতিপত্তির মূল উৎস ছিল সমুদ্রপথের বাণিজ্য। মেসোপটেমিয়া বা ইরাকে সংগঠিতভাবে কৃষিবিপ্লবের সূচনাও বিশ্বে সবার আগে করেছিল রোমানরা। রোমানদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাও ছিল খুব উন্নত। ব্যাংক নোট প্রচলনসহ বর্তমান আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অনেক কিছুই তাদের হাতে চালু হয়। এসব কারণেই অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে ইতিহাসের সবার আগে স্থান পেয়েছে রোমানরা।
২. সং সাম্রাজ্য (১২০০ খ্রিষ্টাব্দ):
ত্রয়োদশ শতকের চীনের সং সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষমতার মূল উৎস ছিল কৃষিবিপ্লব। কৃষিভিত্তিক সমাজের মাধ্যমে সংদের সম্পদের পরিমাণ ছিল বর্তমান বিশ্ব জিডিপির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অর্থনীতিবিষয়ক কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ব্রিটিশদের অনেক আগে সংরাই শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছিল। ওই সময়ের চীনে মাথাপিছু গড় আয় প্রবৃদ্ধি বর্তমান বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়ে বেশি ছিল।
৩. মোগল সাম্রাজ্য (আনুমানিক ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ):
ষোড়শ শতকের মোগল সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি প্রমাণ করে ভারতীয় উপমহাদেশের উজ্জ্বল অতীতের কথা। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মোগলদের অধীন ভারতের মাথাপিছু আয় ওই সময়ের ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সের সমপর্যায়ের ছিল। মোগলদের আয়ত্তে থাকা সম্পদের পরিমাণ বর্তমান বিশ্ব জিডিপির হিসাবে প্রায় ২৫ শতাংশ। মোগল শাসকদের শান-শওকত ইউরোপীয়দের চেয়েও বেশি ছিল বলে অনেকে মনে করেন। মোগলদের প্রবর্তিত করব্যবস্থা ছিল বিশ্বমানের। সোনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতুর বাণিজ্যও মোগলদের অর্থের অন্যতম উৎস ছিল।
৪. ব্রিটিশ সাম্রাজ্য (আনুমানিক ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ):
ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি বোঝাতে বলা হয় যে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যায় না’। ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলোনি স্থাপনের মাধ্যমে শাসন করা ব্রিটিশদের অর্থের মূল উৎস ছিল কর আদায়ে দক্ষতা। শিল্পবিপ্লবও এই অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির অন্যতম উৎস ছিল। বর্তমান বাজারদরে বিশ্ব জিডিপির প্রায় ২১ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পদ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে। অর্জিত সম্পদের একটি বড় অংশই আসত ব্রিটিশ কলোনি থেকে।
৫. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ):
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক প্রতিপত্তিতে সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। এ সময় বর্তমান বিশ্ব জিডিপির ৫০ শতাংশের সমান পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানি, জাপানসহ সেই সময়ের বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া এর একটি অন্যতম কারণ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। মাইক্রোসফট, অ্যাপল, ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো হালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ জয়ও আমেরিকার এ অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।