‘গোল পাচ্ছেন না’, ‘গোল পাচ্ছেন না’ রব উঠে গিয়েছিল। সে তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেই। উঠতে-বসতে যিনি গোল করেন, তিনি মৌসুমের প্রথম দুটি ম্যাচে গোল না পেলে একটু-আধটু কথাবার্তা তো হতেই পারে। তার কিছু না-কিছু রোনালদোর কানেও গিয়ে থাকবে।
পরের দুটি ম্যাচে যা করলেন, তাতে এখন ‘গোল পাচ্ছেন না’ রব তোলাদের খুঁজে পাওয়া মুশকিলই হবে। কিংবা পাওয়া গেলেও তাঁরাই সুর পাল্টে বলবেন, এত গোল কী করে করেন রোনালদো!
শনিবার লা লিগায় এসপানিওলের বিপক্ষে ম্যাচে একাই করেছিলেন ৫ গোল। পরশু রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে আরও ৩টি। পরপর দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক। পাঁচ দিন আগেও যাঁর নামের পাশে এ মৌসুমে কোনো গোল ছিল না, তিনিই এখন লা লিগার পর চ্যাম্পিয়নস লিগেও সর্বোচ্চ গোলদাতা! অবশ্য যদি না গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে অন্য কেউ (পড়ুন মেসি) একাই ৪ গোল করে থাকেন।
রোনালদোর হ্যাটট্রিকের সঙ্গে করিম বেনজেমার আরও এক গোল মিলিয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পরশু শাখতারকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সেই জয় ছাপিয়ে বার্নাব্যুর রাতটা রোনালদো শুধুই নিজের করে নিয়েছেন দুর্দান্ত সব অর্জনে।
গত মৌসুমের শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদো-মেসি দুজনেরই ছিল ৭৭ গোল। এবার প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে মেসিকে পেছনে ঠেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গেলেন রোনালদো। এরপর ম্যাচ শেষে একহাত নিলেন তাঁর সমালোচকদেরও। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, কোনো স্প্যানিশ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলবেন না। গোল না পাওয়ায় সমালোচনাটা স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমেই বেশি হয়েছিল কিনা! জমে থাকা ক্ষোভ, অভিমান যেটাই বলুন, বেরিয়ে এল অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও, ‘আমি জানি না, আগে হয়তো আমি খারাপ খেলোয়াড় ছিলাম, দুই ম্যাচে ৮ গোল করে ভালো খেলোয়াড় হয়ে গেছি।’
বাইরের সমালোচনার মধ্যেও তাঁর সতীর্থেরা যে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন, বললেন সেটাও, ‘আমি যে অবস্থানে এসেছি সেখানে আসতে পারা খুবই সম্মানের। আমি সতীর্থদের কাছে কৃতজ্ঞ। ওরা আমার ওপর আস্থা রেখেছে সব সময়। মাঠেও আমাকে বল দিয়েছে, গোলে সাহায্য করেছে।’
ইউরোপের ক্লাব-শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এটি তাঁর তৃতীয় হ্যাটট্রিক। তাঁর সমান হ্যাটট্রিক আছে মারিও গোমেজ, ফিলিপো ইনজাগি ও লুইজ আদ্রিয়ানোর। পাঁচ হ্যাটট্রিক নিয়ে এই তালিকায় সবার ওপরে লিওনেল মেসি। বিস্ময়কর হচ্ছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১৬ ম্যাচে ৮০ গোল হলো যাঁর, তিনি প্রথম গোলটা পেয়েছিলেন ৩০তম ম্যাচে এসে! ২০০৭ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে রোমার বিপক্ষে ওই ম্যাচ থেকে শুরু করে পরশু পর্যন্ত ২১ বার ম্যাচে দুই বা ততোধিক গোল করলেন। অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর ৮০ গোলের ১১টিই এসেছে পেনাল্টি থেকে। পেনাল্টি থেকে তাঁর চেয়ে বেশি গোলও আর কেউ করেননি। ১০টি করে পেনাল্টি গোল আছে লুইস ফিগো আর রুড ফন নিস্টলরয়ের।
পরশুর ৩ গোল রোনালদোকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আরও কতগুলো অর্জনের সামনে। আগের ম্যাচেই রাউলকে ছাড়িয়ে লা লিগায় রিয়ালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা (২৩০ গোল) হয়ে গিয়েছিলেন। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে ৩২১ গোল হয়ে গেছে তাঁর। ৩২৩ গোল নিয়ে এখানেও শীর্ষে রাউল। এ ছাড়া ক্লাব ও দেশের হয়ে সব পেশাদার ম্যাচ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৪৯৯ গোল হলো রোনালদোর।
রাউলকে আবারও পেরিয়ে যাওয়া কিংবা ৫০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া—দুটিই এখন রোনালদোর জন্য শুধু সময়ের ব্যাপার।