স্যাটেলাইটের প্রভাব বাস্তব জীবনে

Author Topic: স্যাটেলাইটের প্রভাব বাস্তব জীবনে  (Read 1111 times)

Offline shawket

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 99
    • View Profile
স্যাটেলাইটের প্রভাব বাস্তব জীবনে

ইমতিয়াজ ও আফরোজা দম্পতির সুখের সংসারে এখন অশান্তি আর অশান্তি। আর এর অন্যতম কারণ টিভি। ইমতিয়াজের অভিযোগ- দিনশেষে বাড়ি ফিরে একটু খবর দেখবো সে উপায়ও নেই। তার স্ত্রী আফরোজার সারাদিনের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম টিভি সিরিয়ালগুলো। আর তা না দেখতে পারলে ঘরের সুখ উধাও হয়ে যায়। এ অবস্থা ক’দিনই চলে? তাই এর অবসানে তিনি  আরও একটি টিভি কিনে এনেছেন। বর্তমানে ২টি টিভি দু’জনে দেখেন দুই রুমে বসে। কিন্তু সমস্যা এখন তার সামনে আরেকটি এসে ধরা দিয়েছে। তাদের ৭ বছরের সন্তানের কাজ হলো টিভিতে প্রচারিত কার্টুন দেখা। সন্তান মা’র টিভিতে গেলে বকা খায়, তাই দৌড়ে আসে বাবার টিভিতে। অগত্যা ইমতিয়াজ রাগ করে বাইরে বেরিয়ে যান। অন্যদিকে আজিমপুরের মিতু ইসলাম বলেন, তার ছেলে স্পাইডারম্যান কার্টুন দেখে দেয়াল বেয়ে উঠতে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছে। সনি টিভি, লাইফ ওকে, চ্যানেল ভি এসব চ্যানেলে প্রচারিত ক্রাইম পেট্রোল, সাবধান ইন্ডিয়া, গুমরাহ অনুষ্ঠানে প্রতিনিয়ত খুন, জখম, গুম, অপহরণের নতুন নতুন কলাকৌশল দেখানো হয়। যদিও এগুলো প্রচারিত হয় মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে। তারপরও মানুষ এসব থেকে খুন-খারাবির নতুন নতুন ধারণা পেয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বাস্তবে তা প্রয়োগ করছে। কয়েকদিন আগে রাজশাহীতে ৩ কিশোর তাদের এক সহপাঠীকে হত্যার পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়- বিদেশী সিরিয়াল দেখে তারা এমন পরিকল্পনা করে। অপরদিকে কার্টুন চ্যানেলে হিন্দি ভাষায় প্রচারিত কার্টুন দেখতে দেখতে অনেক শিশু এখন মাতৃভাষাকেই ভুলে যেতে বসেছে। কেজিতে পড়া এক শিশুর সঙ্গে কথোপকথনকালে শিশুটি প্রায় ১০ মিনিট একনাগাড়ে হিন্দিতে কথা বলে। যার দু’ একটি ছিলো এরকম- ‘ক্যাসো হো, তুম এ্যাহা কেয়া কার রাহেহো। তুম মেরে সাথ যাওগি।’ শিশুটির মা জানান, হিন্দি চ্যানেল দেখতে দেখতে এখন আর বাংলায় কথা বলে না তার মেয়ে। সারাদিন শুধু কার্টুন দেখে। না দেখতে দিলে চিৎকার করে কাঁদে। বিদেশী বেশকিছু চ্যানেল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে সমাজে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এর পেছনে অনেকটাই দায়ী স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো। আর এসব স্যাটেলাইট চ্যানেলের যাত্রা শুরু ২ দশক আগে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে মাসিক নির্দিষ্ট ফি’র মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু চ্যানেল দেখানোর জন্য ক্যাবল নেটওয়ার্কের সংযোগ দেয়া হয়। এর বদৌলতে শহরের ঘরে ঘরে জায়গা করে নেয়ার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে ক্যাবল নেটওয়ার্ক। ১৯৯২ সালে ক্যাবল টিভির জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। দেশের অনেক চ্যানেলের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশী চ্যানেলের ছড়াছড়ি। স্টার প্লাস, জি বাংলা, জি সিনেমা স্টার জলসা, স্টার মুভিজ, জিটিভি, সনি টিভি, লাইফ ওকে, এমটিভি, কালারস, কার্টুন নেটওয়ার্ক সহ প্রায় শতাধিক চ্যানেল রয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, রকমারি অনুষ্ঠানসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সকল দিক এসব চ্যানেলের মাধ্যমে উপভোগ করা যায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন স্কুলে আসা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়। এক অভিভাবক বলেন, টিভি সিরিয়ালগুলো না দেখলে ওই দিনটাই যেন মাটি হয়ে যায়। আরেক অভিভাবক বলেন আমার ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ছেলে ডরিমন কার্টুন দেখতে দেখতে এখন নবিতার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। তরুণ সমাজের মাঝে টিভি চ্যানেলের প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে যাদের স্থিরতা খুব জরুরি স্যাটেলাইট সেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কতটা অস্থিরতা বাড়িয়েছে তার প্রমাণ মিলে তাদের হাতে রিমোট গেলেই। তাদের চোখ আর হাত খুঁজে ফেরে শুধু কোথায় সহিংসতা দেখানো হচ্ছে। কোথায় দেখানো হচ্ছে নায়ক-নায়িকার  রগরগে দৃশ্য। তাদের ড্রয়িংরুমে কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথের ছবির পরিবর্তে স্থান পাচ্ছে বলিউডের বিভিন্ন নায়ক-নায়িকাদের ছবি। এমনকি স্কুল-কলেজে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তুও এসব ঘিরেই। কথা হয় এমনই এক স্কুলছাত্রের সঙ্গে যে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। জানতে চাওয়া হয় কার্ল মার্কস, চে গুয়েভারা কে চেনে কিনা। তার পাল্টা প্রশ্ন এরা আবার কে? কিন্তু পরক্ষণেই যখন বলিউডের একজন বিতর্কিত তারকার কথা জিজ্ঞাসা করা হয় সে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে এবং জোর গলায় বলে খুব ভালোভাবে চিনি। আরেক ছাত্রকে কাজী নজরুলের কবিতার কয়েকটি লাইন আবৃত্তি করতে বলা হলে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু যখন একটি গান গাইতে বলা হয় তখন সানি লিওনের বেবি ডল গানটি গেয়ে শোনায়। বিবিসি, সিএনএন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারিসহ আরও অনেক চ্যানেলেই শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। সেদিকে নজর নেই এসব উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে ও তরুণ প্রজন্মের। কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার পছন্দের টিভি অনুষ্ঠানের নাম।  তখন সে জানায় রেসলিং। খেলাটি শুধু অমার্জিতই নয় অর্ধনগ্ন নারীর উপস্থিতি ও কসরতে রীতিমতো তা অশ্লীল হয়ে উঠে। বর্তমানে ধর্ষণ, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার মহিলা অভিভাবকদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুই হলো স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা, সনিটিভিতে প্রচারিত বাংলা ও হিন্দি সিরিয়ালগুলো। গতকাল কি দেখিয়েছে, ভবিষ্যতে কি দেখাতে পারে- এসবই তারা আলোচনা করেন। বাস্তবতা থেকে দূরে সরে গিয়ে সিরিয়ালের জগৎটাই তাদের জীবনে এখন বাস্তব হয়ে গেছে। সেখানে তারা যা দেখছেন তার আলোকেই জীবন পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। এসব সিরিয়ালে দেখা যায় বেশির ভাগেরই বিষয়বস্তু কূটচালে পরিপূর্ণ। বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব, একজন পুরুষের ৩ থকে ৪ স্ত্রী, নারীদেরও একাধিক স্বামী, সবসময় অন্যের ক্ষতি করার জন্য একাধিক নারী- পুরুষের উপস্থিতি। কথা হয় এক দাদীর সঙ্গে। যিনি তার নাতিকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন। অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের সহজ সরল মেয়ে দেখে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলাম। শহরে এসে এই টিভি সিরিয়াল দেখে বউ এখন কুটিলতা শিখেছে। শুধু তাই নয়-এসব সিরিয়ালে দেখানো পোশাক, সাজগোজ, সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। তাই হয়তো দেখা যায়-ঈদের সময় স্বামীর কাছ থেকে পাখি ড্রেস না পেয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যা। মার্কেটগুলোতে নায়িকাদের নামে ড্রেসের ছড়াছড়ি। উঠতি বয়সী মেয়েরা নিজেদের জীবন এসব সিরিয়ালে প্রচারিত নায়িকাদের আদলে গড়তে ইচ্ছুক। নায়িকারাই তাদের জীবনের আদর্শ হয়ে গেছে। তাদের ধ্যান জ্ঞান সব সিরিয়ালকে ঘিরেই। সরকারি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন টিভিতে এখন যা দেখানো হয় তা আর পরিবারের কারো সঙ্গে বসে দেখার উপায় নেই। বর্তমানে টিভিতে খুন, জখম দেখতে দেখতে মানুষের সহনশীলতার মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেছে যে, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া খুনের ঘটনায় তারা আর আগের মতো বিচলিত হন না। টিভিতে প্রচারিত এসব দৃশ্য মানুষের মনে এক ধরনের উদ্দীপনার সৃষ্টি করে যার পরিণতিতে বর্তমানে সমাজে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানির মতো ঘটনাগুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. রওশন আরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোতে সরকারি বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে যেখানে নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু থাকবে না। বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দরজা আমরা খুলে রাখতে চাই কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যেন এমন না হয় যে, অপসংস্কৃতির দুর্গন্ধে আমাদের সমাজ ভরে ওঠে। আমাদের সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে যেনো আমরা আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে না যাই।

Source: mzamin.com/details.php?mzamin=OTI1Mjk%3D&s=Mw%3D%3D

Offline Nazmul Hasan

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 73
  • Truth is the only way others are misguidance
    • View Profile
Impact of Satellite TV is so dangerous in our country.
Assistant Administrative Officer
Office of the Registrar  (HR)
Daffodil International University.