ইলিশের বিশ্বে উদাহরণ বাংলাদেশ

Author Topic: ইলিশের বিশ্বে উদাহরণ বাংলাদেশ  (Read 1187 times)

Offline mahmudul_ns

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 129
  • Never confuse a single defeat with a final defeat.
    • View Profile
লা জবাব। আর প্রতিবছরই তার নিত্যনতুন গুণাগুণ জানছে বিশ্ব। কিন্তু বিশ্বের ইলিশপিয়াসীদের মন খারাপ করার মতো সংবাদও আছে। ইলিশ আছে—বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরতীরের ভারত-মিয়ানমার, আরব সাগরতীরের বাহরাইন-কুয়েত, পশ্চিম মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়, মেকং অববাহিকার ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া, চীন সাগরের পাশে চীন ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিচরণ কমছে। আর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ইলিশ ধরা পড়ে।
বাংলাদেশে নদী ও সাগরে কেন ইলিশ বাড়ছে, তা জানতে ইলিশ আছে—এমন দেশগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশ ২০০২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ইলিশের ডিম পাড়া ও বিচরণের স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে। সেখানে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, বছরের আট মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ডিম পাড়ার ১৫ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ইলিশ ধরেন—এমন ২ লাখ ২৪ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশে ইলিশের আহরণ প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তো বটেই, বিশ্বের প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ইলিশ রক্ষার এই কৌশল খুবই কার্যকর হয়েছে চিহ্নিত করেছে। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে গত এক যুগে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে মনে করছে তারা। মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে এ বছর চার লাখ টন হবে।

রাজশাহীর পদ্মায় ৫০ বছর পর ইলিশ
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার এই কৌশল অনুসরণ করছে ভারত ও মিয়ানমার। ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে একই সময়ে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের সব দেশে ইলিশের সংখ্যা বাড়বে।
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল বুঝতে সুদূর কুয়েত ও বাহরাইনের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশের মতোই ওই দেশগুলো ইলিশের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করে ডিম পাড়া ও বাচ্চা বড় হওয়ার সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ইলিশ গবেষক সুগত হাজরা এ ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনার মিষ্টি পানির প্রবাহ এখনো ভালো থাকায় এবং প্রয়োজনীয় খাবার থাকায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ২০০৫ সাল থেকে অভয়ারণ্য করে ইলিশের ডিম পাড়ার স্থান করে দিয়েছে এবং জাটকা বড় হতে দিচ্ছে।
ভারতের মৎস্য বিভাগের হিসাবে, ২০১১ সালে সে দেশে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৮০ হাজার টন। ২০১৪ সালে তা নেমে এসেছে ১৪ হাজার টনে। আর বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ও বঙ্গোপসাগরে ২০০৯-১০-এ ইলিশ ধরা পড়েছিল দুই লাখ টন। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। এ বছর জেলেদের জালে চার লাখ টন ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছে মৎস্য অধিদপ্তর।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করে ভাগীরথী (গঙ্গা) নদীর ফারাক্কা থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশের তিনটি এলাকাকে ইলিশের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো সুন্দরবনের পাশে গদখালী, এর কিছু দূরে কাটোয়া থেকে হুগলি ঘাট এবং ফারাক্কার পাশে লালবাগ। এসব এলাকায় ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ।
সুগত হাজরা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের দেখাদেখি তিনটি এলাকাকে নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করলেও সেখানে মা ইলিশ ও ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে পারেনি। জেলেদের বেশির ভাগই দরিদ্র হওয়ায় বাংলাদেশ তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গ এখনো পারেনি, ফলে এখানে ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে না।
চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ কোনো রাষ্ট্রের সীমানা মানে না। প্রতিদিন এরা ৭০-৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। ফলে বাংলাদেশ এককভাবে ডিম পাড়ার মৌসুমে ইলিশ না ধরলেও অন্য দেশগুলো যদি একই উদ্যোগ না নেয়, তাহলে ইলিশের সংখ্যা আশানুরূপ বাড়বে না। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে যদি একই সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখে, তাহলে এই তিনটি দেশেই ইলিশের সংখ্যা বাড়বে। যার সুবিধা এই তিন দেশের মানুষই পাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। দেশের মোট মাছের ১১ শতাংশ উৎপাদন আসে ইলিশ থেকে। পাঁচ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত। আরও ২০ লাখ লোকের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ।
মাছ গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের মতে, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইরানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের উপকূলে ইলিশ ধরা পড়ে। তবে ডিম ছাড়ার জন্য তারা বেছে নিয়েছে গঙ্গা অববাহিকা বাংলাদেশকে। বর্ষায় এ দেশের নদীগুলো মা ইলিশে ভরে ওঠে ডিম ছাড়ার জন্য। মোহনা থেকে নদীর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ায় ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ কমে যায়, স্বাদ বাড়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব ইলিশের নতুন গুণ আবিষ্কৃত হওয়ার দিকে আলোকপাত করে বলেন, ইলিশ মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ নামে একধরনের তেল আছে, তা হৃদ্রোগসহ বেশ কিছু রোগের ওষুধ হিসেবে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি মাছে এই তেল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইলিশ মাছের স্যুপ অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিশ্বের সব দেশই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাইছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রতি বছর উৎপাদন বাড়া সত্ত্বেও দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি, এ অভিযোগ আছে। তবে ইলিশ মাছের জাতীয় সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক জাহিদ হাবিব এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু খাবারের দাম একটু বেশিই থাকে। ইলিশ আমাদের জন্য সেরকম সুস্বাদু খাবার, তবে সেই তুলনায় এর দাম বেশি বলা যাবে না। অন্যান্য আকর্ষণীয় খাবারের সঙ্গে তুলনা করলে ইলিশের দাম গত চার-পাঁচ ধরে স্থিতিশীল আছে। উৎপাদন যদি না বাড়ত তাহলে ইলিশ শুধুমাত্র ধনীদের শখের খাবার হিসেবে থাকত। আজকে মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তরা ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন উৎপাদন বাড়ার কারণেই।

ইফতেখার মাহমুদ |  অক্টোবর ২০, ২০১৫ the daily prothom alo
Md. Mahmudul Islam
Lecturer, Dept. Of Natural Sciences
Daffodil International University
mahmudul.ns@diu.edu.bd